উদ্যোগ: খেলার দেশ, সুস্থতার দেশের হয়ে ব্যাটিং সচিনের। ফাইল চিত্র
• তরুণ মানেই ফিট নয়: আমরা দাবি করছি, ২০২০ সালের মধ্যে ভারত গড় বয়সের হিসেবে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশ হয়ে উঠবে। কিন্তু সর্বকনিষ্ঠ মানেই তো সবচেয়ে ফিট নয়। আমি এই জায়গাটা ধরিয়ে দিতে চাই। আমাদের দেশে ডায়বেটিসে আক্রান্ত প্রচুর লোক। বিশ্বের ডায়বেটিক রাজধানী বলা হয় ভারতকে। বাড়তি ওজনের দিক থেকে আমরা বিশ্বের মধ্যে তিন নম্বরে। সেটাই সব নয়। অন্যান্য অনেক রোগও রয়েছে। যেগুলো ধরাই যায় না। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক দিক থেকেই আমরা পিছিয়ে। তাই ‘হাম ইয়ং হ্যায় তো ফিট হ্যায়’ বলা যায় কী করে? রীতিমতো প্রশ্ন রয়েছে।
• ঘুম ভাঙা দরকার: আমাদের ঘুম থেকে জেগে উঠে এই কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে ভাবা দরকার। তরুণ ভারত হলাম ঠিক আছে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর ভারত হয়ে কী লাভ? সেটা আরও বড় বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলা।
• সমাধান কী: আমার মনে হয়, প্রত্যেকের উচিত কোনও না কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত হওয়া। দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি কোনও না কোনও শারীরিক কসরতের মধ্যে থাকে, অনেক সুস্থ ভারত গড়ে তোলা সম্ভব। আমার বক্তব্যে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
• অর্থনীতিতেও পড়বে প্রভাব: রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্ট বলছে, ২০১২ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে নানা ব্যাধির জন্য খরচ হতে পারে চারশো লক্ষ কোটি টাকা। অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি! আমাদের দেশকে এই টাকাটা ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এই সংখ্যাটাই অনেক নামিয়ে আনা যায় যদি আমরা সচেতন হই। যদি আমরা কোনও না কোনও খেলা খেলি, যদি আমরা নিজেদের ফিটনেস নিয়ে ভাবি। আমি বলতে চাইছি, যদি নিজেরা ফিট থেকে এই খরচকে নামিয়ে আনতে পারি, তা হলে তো দেশের অর্থনীতিও অনেক লাভবান হবে। অন্তত কুড়ি শতাংশও যদি কমিয়ে আনা যায়, আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হতে পারে।
• খেলার মাধ্যমে ফিট থাকো: খেলার মধ্যে থাকাটাই সেরা সমাধান। আমি এক বারও বলছি না, এই খেলাটাই খেলতে হবে, ওই খেলাটা খেলা যাবে না। যে কেউ যে কোনও খেলায় নামতে পারে। তার পছন্দের ব্যাপার। কিন্তু আমি আর একটা কথা বলতে চাই। খেলার অভ্যেসটা শুরু করার দরকার একদম ছোটবেলা থেকে। এক লাইফস্টাইল বনা হ্যায় না হমারা, ও ঠিক নহী হ্যায়। অনেক সময় শুরু থেকেই অভ্যেসগুলো ঠিক হয় না। অনেক ক্ষেত্রে গুরুজনেরা ছোটদের এমন খাবার খাওয়াচ্ছেন যেটা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।
• খেলা কী ভাবে বদল আনতে পারে: যদি খেলাকে স্কুলের বিষয়ের মধ্যে এনে ফেলা যায়, তা হলে এই রুটিন পাল্টে যাবে। তখন দেখা যাবে ডাইনিং টেবলে বসে ছোটরাই হয়তো বড়দেব বলবে, এই খাবারটা খাওয়া ঠিক নয়। হয়তো তারাই উল্টে পথ দেখাবে, কোনটা স্বাস্থ্যকর খাবার।
• প্রিয় নায়কদের নিয়ে পুস্তিকা: আমাদের দেশের খেলার ইতিহাসে অনেক চ্যাম্পিয়ন আছেন। তাঁদের কথা আমরা ভুলতে পারি না। আমাদের তরুণ প্রজন্মের জানা উচিত, অজিত ওয়াড়েকর কে? পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় কে? প্রকাশ পাড়ুকোন কে? পি টি ঊষা কে? যাঁদের নাম করলাম, প্রত্যেকের অবিস্মরণীয় অবদান আছে। আর আমাদেরই তো উচিত তরুণ প্রজন্মকে এই সব চ্যাম্পিয়নদের সম্পর্কে অবহিত করা। না হলে ওরা কী করে জানবে? সেই কারণেই এই পুস্তিকার ভাবনা।
• কত জন থাকবেন বইয়ে: আমি একটা স্যাম্পেল হিসেবে কিছু নাম ব্যবহার করেছি। কিন্তু এটা মোটেও চূড়ান্ত তালিকা নয়। গোটা দেশের খেলাধুলোর ইতিহাস ঘাঁটলে তিনশো থেকে চারশো কিংবদন্তি পাওয়া যাবে। যখন এ রকম বই সত্যিই প্রকাশ করা হবে বা তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তখন যেন প্রত্যেক কিংবদন্তির নাম সেখানে থাকে। আমি নিশ্চিত, তরুণ প্রজন্মের খুব ভাল লাগবে এই সব কিংবদন্তিদের কাহিনি পড়তে। তাঁদের সম্পর্কে জানতে পারলে ওরাও নিশ্চয়ই অনেক অনুপ্রাণিত হবে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কোনও না কোনও প্রিয় নায়ক আছে। তাঁরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। তরুণ প্রজন্মকেও তাঁদের প্রিয় নায়ক পেতে আমাদের সাহায্য করা উচিত।
• অবসৃত খেলোয়াড়দের পাশে: আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমি তুলে ধরতে চাই। আমাদের দেশে কত অবসৃত খেলোয়াড় আছেন। যাঁদের কোনও ঠিক মতো কাজও নেই। কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের কি এই জীবন প্রাপ্য? সরকারের উচিত এমন একটা সংস্থা গড়ে তোলা, যেখানে অবসৃত খেলোয়াড়রা চাকরি করতে পারেন। এটাও দেখা উচিত যে, সেই কাজটা যেন খেলোয়াড়দের জন্য যথাযথ হয়। একটা টেবল থেকে আর একটা টেবলে ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হলে সেই খেলোয়াড়ের যেমন ভাল লাগবে না, তেমনই সেই অফিসেরও কোনও কাজ হবে না। কোনও কবাডি খেলোয়াড়কে ফাইল হাতে দিয়ে ছোটাছুটি করানোর মানে হয় না। সেই কারণেই সংস্থা গড়ার কথা বলছি। এই সংস্থার তরফে অবসৃত খেলোয়াড়দের স্কুল-কলেজে পাঠানো যেতে পারে। তাঁরা প্রতিভা খুঁজে বের করার কাজটা করতে পারেন। তাঁরও যেমন উপকার হল, স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিভা খুঁজে আনাও হল। আবার দেশও লাভবান হবে।
• ছোট থেকে তৈরি করো: প্রতিভা অন্বেষণের প্রক্রিয়াটা একেবারে ছোটবেলা থেকে শুরু করা দরকার। ওদের ১২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ৫-৬ বছর বয়স থেকেই স্পট করতে হবে। তবেই আমরা স্বপ্ন দেখতে পারব যে, বড় হয়ে ওরা অলিম্পিক্স থেকে পদক আনবে। ছোট বয়স থেকে শুরু করলে নিজেকে তৈরি করার সময়টাও অনেক বেশি পাওয়া যায়। এটা একটা প্রকল্পের মতো। প্রস্তুতির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
• বেশি পদকের স্বপ্ন দেখো: দেশের হয়ে যখন কেউ পদক জেতে, আমাদের খুব গর্ব হয়। আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন, তা হলে কেন আমরা সংখ্যাটাকে আরও অনেক বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করব না? কেন শুধু হাতে গোণা কয়েকটি পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব আমরা? আমাদের তো সামর্থ রয়েছে আরও অনেক পদক জেতার। শুধু আমাদের ভাবনায় বদল আনতে হবে।
• তাঁর বার্তা: আমার বার্তা একটাই। কোনও কোনও খেলায় অংশ নাও। তাতে নিজের স্বাস্থ্যেরই উন্নতি হবে। আমার স্বপ্ন, স্বাস্থ্যকর এবং ফিট ভারত। এবং, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, স্বাস্থ্যকর এবং ফিট থাকলে যে কোনও জগতেই থাকো না কেন, তোমার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি হবে। খেলায় থাকো কী অভিনয় জগতে বা আইনের পেশায়, আরও ভাল ফল পেতে পারো। অনেক বেশি মনঃসংযোগ করতে পারবে। আমার তাই একটাই স্বপ্ন— স্বাস্থ্যকর ভারত।