একাই পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে হ্যারি কেন

সুইডেনের এই পর্যায়ে উঠে আসার পথে অনেক দুরন্ত দলের বিদায় দেখেছি আমরা। প্রথমে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে নেদারল্যান্ডস আর ইতালির বিদায়।

Advertisement

মারিয়ো কেম্পেস

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৫:০৯
Share:

মহড়া: আজ সামনে সুইডেন। শুক্রবার ইংল্যান্ডের প্রস্তুতি। ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে শনিবার সামারায় নামছে ইংল্যান্ড-সুইডেন। দুই দলের এই লড়াইয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে। একটা দলের ২৩ জন সদস্যের কেউই দেশের ঘরোয়া লিগে খেলে না। মানে সুইডেন। ঠিক উল্টো ছবি অন্য শিবিরে। গোটা ইংল্যান্ড দলের প্রত্যেকেই প্রিমিয়ার লিগের কোনও না কোনও ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করে।

Advertisement

সুইডেনের এই পর্যায়ে উঠে আসার পথে অনেক দুরন্ত দলের বিদায় দেখেছি আমরা। প্রথমে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে নেদারল্যান্ডস আর ইতালির বিদায়। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ে তো সুইডেন প্রথম স্থানে শেষ করে। যে গ্রুপে জার্মানি আর মেক্সিকোর মতো দল ছিল। ইংল্যান্ডকে আবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে শেষ পেনাল্টি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গোলটা ওরা পেয়েছে। হ্যারি কেনকে সামনে রেখে কাগজে-কলমে ইংল্যান্ড টিম আক্রমণ বিভাগে যত শক্তি ধরে, সেটা কিন্তু বিশ্বকাপে এখনও দেখা যায়নি।

সুইডেন বনাম ইংল্যান্ডের এই ম্যাচটা দুই ইউরোপিয়ান শক্তির লড়াই। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে শারীরিক এবং কৌশলগত শক্তি। দু’দলেই এমন ফুটবলারেরা আছে যাঁরা ব্যক্তিগত নৈপূণ্যে ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারে, তবু দেখলে হয়তো মনে হবে ফুটবলের থেকেও লড়াইটা বেশি হচ্ছে দাবার মতো।

Advertisement

আমার মনে হচ্ছে ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে যাবে। ইংল্যান্ড আক্রমণে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি যত ম্যাচ এগোচ্ছে দলটার মাঝমাঠ আর রক্ষণ আরও ছন্দে আসছে। সুইডেন দলটার ভারসাম্য দুরন্ত। আক্রমণ আর রক্ষণের শক্তি প্রায় সমান। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বকাপ জুড়েই সেটা দেখা গিয়েছে। তবে এ রকম ম্যাচে একটা ছোট্ট ভুলও কিন্তু বড় হয়ে উঠতে পারে। তাই ম্যাচটা দাবার মতো হিসেব কষে খেলাটা খুব জরুরি। ধাপে-ধাপে, মিনিটে-মিনিটে।

দুই দলের কোচই নিজের দল নিয়ে যেমন যত্নবান, তেমনই সজাগ বিপক্ষ নিয়ে। জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচকে বাদ দিয়ে দলের উপর বিশ্বাস রাখতে দ্বিধা করেননি সুইডেনের কোচ জান আন্দারসঁ। ওঁর কোচিংয়ে সুইডেনের ফুটবলারদের খেলা আরও উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি গ্যারেথ সাউথগেট নিজে যেমন পোশাকের দিক থেকে পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করেন, মাঠে তাঁর দলের পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলার উপরেও ততটাই জোর দেন।

তবে ইংল্যান্ডের একটা মারাত্মক অস্ত্র রয়েছে। যা সুইডেনকে হারাতে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। হ্যারি কেন। ওর দুরন্ত ছন্দের সাহায্যে ইংল্যান্ড দল ফাইনালের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে। উল্টো দিকে আন্দারসঁর দল রক্ষণে জোর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত প্রতি-আক্রমণে উঠে আসার ব্যাপারটায় আরও নজর দেবে নিশ্চয়ই। যার মূল দায়িত্ব থাকবে বার্গ, ফর্সবার্গ, তোইভোনেন আর ক্লায়েসনের উপর।

শনিবার আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে মুখোমুখি রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া। যে ম্যাচ দিয়ে এ বারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব শেষ হবে। শেষ আটে ওঠার পরে গোটা রাশিয়া উৎসবে মেতে উঠেছিল। স্পেনের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টারে বল দখলের লড়াইয়ে অতটা পিছিয়ে থাকার পরেও। রাশিয়ার ম্যাচে বল দখল ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। স্পেনের ক্ষেত্রে যা ৭৫ শতাংশ। গোল লক্ষ্য করে শটের পরিসংখ্যানেও ফারাক সে রকমই। স্পেনের ২৫, রাশিয়ার ৬।

ম্যাচটায় রুশ দলের দুর্ভেদ্য রক্ষণ গড়ে তুলতে কোনও সমস্যা হয়নি। যাতে বিপক্ষের আক্রমণ বারবার ব্যর্থ হয়ে তাদের ফুটবলারেরা হতাশ হয়ে পড়ে। এই দুরন্ত কৌশলে স্পেনের সব পরিকল্পনা ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল। তবে শক্তিশালী রক্ষণ থাকলেও রাশিয়ার ফুটবলারদের ফাউল করার প্রবণতা কিন্তু বেশি। সেটা মাথায় রাখতে হবে।

ক্রোয়েশিয়া এমন একটা দল যারা, বিশ্বকাপের প্রথম দিকে খুব দ্রুত গতিতে বিপক্ষকে নাজেহাল করে দেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছে। দলটায় ভীষণ প্রতিভাবান ফুটবলারেরা রয়েছে। ওদের যেন মূল লক্ষ্যই হল বিপক্ষকে মাঠে চেপে ধরা আর সুযোগ পেলেই দ্রুত গতিতে আক্রমণে ওঠা। ওদের দলের মূল স্তম্ভ লুকা মদ্রিচ। যে রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার। দারুণ প্রতিভাবান, দুরন্ত পাস দেওয়ার আর গোল করার ক্ষমতা মদ্রিচের। তাই এই লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়াই ফেভারিট।

শেষে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া নিয়ে কিছু কথা বলি। বাছাই পর্ব থেকেই আর্জেন্টিনার সমস্যা কম ছিল না, এত সমস্যা নিয়ে মাঠে লড়াই করা সোজা নয়। দুটো লাতিন আমেরিকান দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে ঠিকই। তবে আর্জেন্টিনার জন্য খুব খারাপ বিশ্বকাপ গেল। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এ রকম বিশ্রী হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে যেতে হল।

কেউ জানে না মেসিকে বার্সেলোনার জার্সিতে মাঠে যে রকম লাগে, আর্জেন্টিনার জার্সিতে কেন লাগে না। আমার মনে হয়, জাতীয় দলে বার্সোলোনার মতো মেসির আরও ভাল সতীর্থদের দরকার। একটা ভাল দল দরকার। ও একা আর কী করবে? আর্জেন্টিনাকে দুর্বল দল মনে হল বিশ্বকাপে। মেসিকে ছাড়া দলটা দ্বিতীয় রাউন্ডেও উঠত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন