কিংবদন্তি: বেলজিয়াম রক্ষণ ভাঙছেন ভয়ঙ্কর দিয়েগো মারাদোনা।
তিনটি দেশের স্টেডিয়ামে বসে দিয়েগো মারাদোনার খেলা প্রথম তিনটি বিশ্বকাপ দেখেছি। তাঁর হাতে উঠছে বিশ্বকাপ সেটাও দেখেছি মেক্সিকোতে বসে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে করা সেই বিতর্কিত গোল বা বিপক্ষের পাঁচ জনকে অবিশ্বাস্য ড্রিবল করে সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ গোল দেখার সৌভাগ্যও হয়েছে আমার। মানে মারাদোনা যখন সেরা ফর্মে, তখন তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।
খেতাব জিতে মারাদোনা ঈশ্বর হয়েছেন। তাঁর সৌজন্যেই আর্জিন্তিনা ফুটবলে বিশ্বে আরও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সবই মানছি। তবুও মারাদোনাকে আমি সর্বকালের সেরা বলতে পারছি না। আমার মতে বিশ্বের সেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াইয়ে মারাদোনার সঙ্গে একই আসনে থাকবেন আলফ্রেডো ডি স্টিফানো, পেলে এবং লিয়োনেল মেসি। স্টিফানো বা মেসি বিশ্বকাপ জেতেননি। আর্জেন্তিনার সেরা ফুটবলার বাছতে বললে ওদের চেয়ে সার্বিকভাবে মারাদোনাকে এগিয়ে রাখব না।
আমরা যাঁরা পুরানো প্রজন্মের ফুটবলার তাদের চোখে মারাদোনা একজন ইনসাইড ফরোয়ার্ড। স্কিমার এবং স্কোরার দু’টো কাজই করতে পারতেন ছোট্টখাট্টো চেহারার আর্জেন্তিনীয় স্ট্রাইকার। বল কন্ট্রোল এবং ড্রিবলিংয়ে মারাদোনা ছিলেন অনবদ্য। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ জনকে কাটিয়ে করা সেই গোলটা আমার জীবনের তৃপ্তির অন্যতম উপাদান। ইংল্যান্ড বরাবরই রক্ষণ জমাট করে খেলতে নামে। তাদের বিরুদ্ধে মারাদোনা বলটা ধরার পর যেভাবে ইনসাইড, আউট সাইড ড্রিবল করতে করতে বলটা নিয়ে গিয়ে গোল করলেন তা ওর পক্ষেই সম্ভব। পাশাপাশি চতুর ফুটবলার হিসাবে রেফারিকে আড়াল করে হাত দিয়ে করা গোলটা দেখার পর আমি অবাক হইনি। কারণ অনেকে এখন বলেন এটাও সফল স্ট্রাইকারদের দক্ষতার মধ্যে নাকি পড়ে। এখন তো বক্সের মধ্যে পড়ে গিয়ে রেফারিকে বোকা বানিয়ে পেনাল্টি পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দল। তবে এটা মনে করি বল হাতে লেগেছে সেটা গোলের পর স্বীকার করা উচিত ছিল মারাদোনার। তা হলে মহান হয়ে যেত।
মারাদোনা চারটে বিশ্বকাপ খেলেছে। তার মধ্যে তিনটে (১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০) বিশ্বকাপে কাছ থেকে দেখেছি আমি। তার মধ্যে আর্জিন্তিনার বিশ্বকাপ জেতার বছরেই ও ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক। আমার মতে ছিয়াশির বিশ্বকাপ জয় আর মারাদোনা সমার্থক হয়ে গিয়েছেন। প্রত্যেকটা ম্যাচেই ও ছিল প্রতিপক্ষের কাছে বিভীষিকা। আর্জিন্তিনা পুরো টুনার্মেন্টে ১৪ গোল করেছিল। তার মধ্যে মারাদোনার কৃতিত্ব ছিল ১০টি গোলের ক্ষেত্রে। হয় তিনি নিজে গোল করেছেন, নয়তো করিয়েছেন। মাঝমাঠ থেকে বল তৈরি করতেন। ওর ছোট একটা স্পর্শ বা ড্রিবল বদলে দিত আর্জেন্তিনার খেলার চেহারাটাই। শক্তপোক্ত চেহারার সুবিধাটা নিতেন মারাদোনা। যখন বল নিয়ে দৌড়তেন তখন মনে হত সোনার জিয়নকাঠি যেন নীল সাদা জার্সিকে আগুনে করে তুলছে মুহূর্তে। এখন বার্সেলোনায় মেসির পায়ে বল পড়লে যেমন হয়।
মারাদোনা ইতিহাস হয়েছেন। মেসিও হতে পারেন। তার সামনে এখনও সুযোগ আছে বিশ্বকাপ জেতার। ও আর্জেন্তিনাকে ফাইনালে তুলললেও এখনও চ্যাম্পিয়ন করতে পারেনি। মারাদোনা যাই বলুক, আমি কিন্তু মনে করি আর্জেন্তিনা এ বার খেতাব জেতার অন্যতম দাবিদার।