শান্ত এমবাপে ধন্যবাদ দিতে চান সকলকে

বিশ্বকাপের সেরা প্রতিশ্রুতিমান হিসাবে এমবাপেকে পুরস্কৃত করেছে ফিফা। দেঁশ বলে দেন ‘‘কুডি বছর আগে যখন আমরা কাপ জিতেছিলাম তখন থিয়েরি অঁরির বয়স ছিল ১৯। দ্বিতীয়বার ও কাপ জিততে পারেনি।  এমবাপে সেটা পারবে।’’

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

মস্কো শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৫
Share:

ড্রেসিংরুমের দরজা খুলতেই বিকট শব্দ। বেরিয়ে এলেন স্যামুয়েল উমতিতি। কাঁধে মিউজিক সিস্টেম। সেটাতে প্রচণ্ড জোরে বাজছে গান। উদ্দাম নাচতে নাচতেই মিক্সড জোনে এসে ফের ফিরে গেলেন ওঁরা।

Advertisement

অধিনায়ক হুগো লরিসের হাতে নয়, বিশ্বকাপটা বুকে জড়িয়ে টিম বাসের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন রাফায়েল ভারান। মাঠ থেকে ফেরার সময় সেটা অধিনায়কের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। ড্রেসিংরুমে সবার চুমু খেয়ে তা ফিরে এসেছিল ভারানের হাতে। কাপ নিয়েই তিনি
ফিরলেন হোটেলে।

বুকে ঝোলানো সোনার পদক নিয়ে বেরিয়ে এসে হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করলেন পল পোগবা, ‘‘আমরাই চ্যাম্পিয়ন। কুড়ি বছর পরে আবার কাপ জিতেছি।’’ বলেই দৌড় লাগালেন টিম বাসের দিকে।

Advertisement

ফিফার নিয়ম, ম্যাচের পরে মিক্সড জ়োন-এ ফুটবলারদের আসা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ফরাসি ফুটবলাররা ম্যাচের পরে এতটাই আনন্দ সাগরে ডুবেছিলেন, যে তিন ঘণ্টা পরে তাঁরা এলেন। শান্ত অবস্থায় পাওয়া গেল কিলিয়ান এমবাপেকে। বুকের পদকটা দাঁতে চেপে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘‘স্বপ্ন ছোঁয়ার পরে মাথা কাজ করছে না। ফাইনালে গোল করেছি। সবাইকে বলব পাসিভো (রুশ ভাষায় ধন্যবাদ)।’’ নায়কের মতো এলেন উগো লরিসও। সোনার পদকটা ঝুলছে। সেটা তুলে দেখালেন যখন, তখন তাঁর সামনে শ’খানেক সাংবাদিক। ধাক্কাধাক্কি চলছে। ‘‘আমি অধিনায়ক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স, এটা জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। একটা খারাপ গোল খেয়েছি বলে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাপটা হাতে নেওয়ার পরে সব দুঃখ ভুলে গিয়েছি। আগামী চার বছর আমরাই বিশ্বজয়ী থাকব।’’ একের পর এক প্রশ্ন করা হচ্ছিল তাঁকে।

উত্তরও দিয়ে যাচ্ছিলেন তৃপ্তি মাখানো মুখে। ফ্রান্স অধিনায়ক যখন কথা বলছেন, তখন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন বঁজামা পাভা। হঠাৎই দেখা গেল লরিসের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ব্লেজ মাতুইদি। মুখটা ক্যামেরার সামনে এনে বললেন, ‘‘ও কী বলবে! আমার কথা শুনুন। আমরাই চ্যাম্পিয়ন।’’ বলেই চারটে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘‘চার গোল দিয়েছি। কেউ রক্ষণাত্মক নীতি নিয়ে এ বার প্রশ্ন করবে? রক্ষণাত্মক খেললে এত গোল হয়?’’ মাতুইদির কথাগুলো মনে হল বেশ উপভোগই করছেন লরিস।
মৃদু হাসছিলেন।

ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে কেটে গিয়েছে চার ঘণ্টা। ভারতীয় সময় রাত দু’টো নাগাদ ড্রেসিংরুম থেকে হোটেলের পথে বেরোল ফ্রান্স। সেখানে ঢোকার আগে অবশ্য ঘটে গিয়েছে এক চমকপ্রদ ঘটনা। কোচ দিদিয়ে দেঁশর সাংবাদিক সম্মেলন থামিয়ে সেখানে নাচতে শুরু করে দিয়েছিলেন পল পোগবারা। উমতিতি এবং আরও জনা দুয়েক ফুটবলার উঠে পড়েছিলেন টেবিলের উপর। ফিফা নিযুক্ত ঘোষক থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন। পরে ফ্রান্স কোচ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ওঁরা আমার ছেলের মতো। আমার ছেলের বয়সও তো বাইশ। সে তো বিশ্বকাপ জেতাটা উপভোগ করতে পারেনি। ওর মতো পোগবারাও আনন্দের আতিশয্যে এটা করে ফেলেছে।’’ তবে কোচ যাই বলুন, ফিফা এ জন্য জরিমানা করতে পারে ফ্রান্সকে।

কিন্তু কে জরিমানা করল বা কে কোথায় কী বলছে তা নিয়ে পোগবারা ভাবার অবস্থায় ছিলেন না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর উপস্থিতিতে যখন ফরাসিদের হাতে কাপ তুলে দেওয়া হচ্ছে, তখন অঝোরে বৃষ্টি লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। গ্যালারিতে ভিজতে ভিজতে গান গাইছিলেন ফ্রান্স সমর্থকরা। কাপ নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই দৌড়তে দৌড়তে সেখানে চলে যান আঁতোয়া গ্রিজম্যানরা। ট্রফি নিয়ে রীতিমতো পাগলের মতো আচরণ করতে দেখা যায় উমতিতিদের।

মাঠ থেকে ফিরেই ড্রেসিংরুমে আসার পরে সেটা আরও বড় উৎসবের রূপ নেয়। গান, নাচ, শ্যাম্পেন স্নান চলতে থাকে। নানা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যেমে চলে আসে ভিতরের ফুটেজ। তা নিয়ে কাড়াকাড়ি পরে যায় মিক্সড জ়োনে। ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা দল বেঁধে ঢোকেন ড্রেসিংরুমে। আর্থিক পুরস্কার ও প্যারিসে বড় উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করার পরে নাচ আর গান আরও উদ্দাম হয়ে ওঠে। কোচ দিদিয়েঁ দেশ গিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র সঙ্গে দেখা করতে। চ্যম্পিয়ন হওয়ার পরে পুরো দল এক সঙ্গে দেশঁকে আকাশে তুলে নিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভাসিয়েছিল। সাংবাদিক সম্মেলনেও তাঁর মুখে হাসি লেগে। বলে দেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে যে রেকর্ডই ছুঁয়ে থাকি, তা নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই। বরং কুড়ি বছর পরে একটা নতুন প্রজন্ম কাপ জিতেছে সেটাই বিরাট। এর পর সব ফুটবলারই অন্য নানা ক্লাবে খেলতে চলে যাবে, অন্য কোনও প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই আনন্দ ওরা কোনও কিছু জিতে
পাবে না।’’

বিশ্বকাপের সেরা প্রতিশ্রুতিমান হিসাবে এমবাপেকে পুরস্কৃত করেছে ফিফা। দেঁশ বলে দেন ‘‘কুডি বছর আগে যখন আমরা কাপ জিতেছিলাম তখন থিয়েরি অঁরির বয়স ছিল ১৯। দ্বিতীয়বার ও কাপ জিততে পারেনি। এমবাপে সেটা পারবে।’’

দেঁশ ড্রেসিংরুমে ঢোকার পরে উৎসব আরও বাড়ে। রাতভর আনন্দ করেন এমবাপে, গ্রিজম্যানরা। যখন টিম বাসে উঠতে যাচ্ছেন তখন মস্কোর আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন