তারুণ্যের এই জোশে যেন পেলেকে মনে করালেন এমবাপে

এমবাপের খেলার মধ্যেও সেই নিজস্বতা রয়েছে। মাঠে নেমে ফরাসি তারকা যে ভাবে খেলেন, তাতে মনে হবে খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু আপনি সেটা করতে গেলেই বুঝবেন কাজটা কতটা কঠিন।

Advertisement

ট্রেভর জেমস মর্গ্যান

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৮
Share:

নায়ক: বিশ্বকাপের সেরা আবিষ্কার কিলিয়ান এমবাপে। ছবি: গেটি ইমেজেস

আশ্চর্য মিল দুই তারকার উত্থানের কাহিনিতে।৬০ বছর আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন পেলে। রবিবার কিলিয়ান এমবাপে বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে করলেন একটি গোল। প্রথম বিশ্বকাপে পেলে করেছিলেন ছ’টি গোল। রাশিয়ায় এমবাপে করলেন চারটি গোল।

Advertisement

ফুটবলপ্রেমীরা ইতিমধ্যেই পেলের সঙ্গে এমবাপের তুলনা শুরু করে দিয়েছেন। অভিষেকের বিশ্বকাপে ফুটবল সম্রাট না ফ্রান্সের নতুন তারা কে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। আমি অবশ্য কোনও তুলনায় যাব না। দু’জনের খেলাতেই আমি মুগ্ধ ও অভিভূত।

আমার শৈশব ও যৌবন জুড়ে ছিলেন পেলে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র দুই। সেই বিশ্বকাপটা না দেখলেও পেলেকেই মনে মনে আদর্শ মেনে নিয়েছিলাম। আমি ইংল্যান্ডে জন্মালেও শৈল্পিক ফুটবলের প্রতি বরাবরই দুর্বল ছিলাম। অবাক হয়ে দেখতাম, কী ভাবে অনায়াসে বিপক্ষের চার-পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করতেন। বল যেন ছিল তাঁর পোষা পাখি। যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন। বহুবার চেষ্টা করেছি পেলেকে নকল করার। যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলাম, ফুটবল সম্রাটের খেলার নকল করা অসম্ভব।

Advertisement

এমবাপের খেলার মধ্যেও সেই নিজস্বতা রয়েছে। মাঠে নেমে ফরাসি তারকা যে ভাবে খেলেন, তাতে মনে হবে খুব সহজ ব্যাপার। কিন্তু আপনি সেটা করতে গেলেই বুঝবেন কাজটা কতটা কঠিন। এমবাপের বল নিয়ে ইউসেইন বোল্টের মতো দৌড়নো থেকে কাট করে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ঢুকে পড়া— সব কিছুর মধ্যেই শিল্পের ছোঁয়া। সব চেয়ে বড় কথা ওঁর মানসিকতা। তারকারা মনে হয় এ রকমই হন। সতেরো বছরের পেলের মানসিকতায় যে কাঠিন্য ও তেজ ছিল, উনিশের এমবাপের মধ্যেও তা দেখলাম।

অভিজ্ঞতাই যে পার্থক্য গড়ে দেয় তা আরও একবার প্রমাণিত হল রবিবার মস্কোয় লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালে। লুকা মদ্রিচেরা এ দিন যে-ভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল ফ্রান্সকে মনে হয় খালি হাতেই ফিরতে হবে। আমার বন্ধুরা যারা ইংল্যান্ড থেকে ফাইনাল দেখতে মস্কোয় গিয়েছে, ওরা বলছিল, ফ্রান্সকে দাঁড়াতেই দেবে না ক্রোয়েশিয়া। আমি বললাম, এই ধরনের ম্যাচে তারাই এগিয়ে থাকে, যাদের দলে অভিজ্ঞ ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। যা রয়েছে ফ্রান্সের।

আরও পড়ুন: পেলের পর কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল এমবাপের

ক্রোয়েশিয়ার প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল প্রেসিং ফুটবল। কিন্তু পল পোগবা, এমবাপেরা এই ধরনের ফুটবলের বিরুদ্ধেই খেলতেই অভ্যস্ত। তা-ই শুধু চাপ বাড়িয়ে ওঁদের ছন্দ নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব নয়। পোগবা-রা নিজেদের মধ্যে পাস খেলে গতি কমিয়ে প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলছিলেন। দুর্দান্ত রণনীতি ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশঁর। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক জানতেন, পুরো ম্যাচ একই গতিতে খেলা সম্ভব নয় মারিয়ো মাঞ্জুকিচদের পক্ষে। ঠিক সেটাই হয়েছে। ১৮ মিনিটে আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যানের ফ্রি-কিক বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে ব্যাক হেডে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেন মাঞ্জুকিচ। দশ মিনিটের মধ্যেই অবশ্য দুরন্ত গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফেরান পেরিসিচ। কিন্তু ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন গ্রিজ়ম্যান।

বিশ্বকাপ ফাইনালে একটা দল দু’বার গোল খেল নিজেদের ফুটবলারদের ভুলে— বিরল ঘটনা। অনেকে অবশ্য পেনাল্টির জন্য দায়ী করছেন পেরিসিচকে। আমার মতে প্রথম ভুলটা করেছিলেন ডিফেন্ডার দোমাগোই ভিদা। ওঁর ভুল থেকেই কর্নার পায় ফ্রান্স। গ্রিজ়ম্যানের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ব্লেস মাতুইদি। বল লাগে পেরিসিচের হাতে। যদিও প্রথম বার দেখে আমার মনে হয়েছিল, পেনাল্টি নয়। ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার) দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। আমিও রিপ্লে দেখে নিশ্চিত হলাম পেনাল্টির ব্যাপারে। ৫৯ মিনিটে গোল করেন পোগবা। ছয় মিনিট পরে দুরন্ত গোল এমবাপের। ৬৯ মিনিটে ফ্রান্স গোলকিপার উগো লরিসের ভুলে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ব্যবধান কমান মাঞ্জুকিচ। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম বার ফ্রান্সের গোলকিপারকে ভুল করতে দেখলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন