অঘটন ঘটাতে ঘটাতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

লিয়োনেল মেসিকে আটকে দেওয়ার পরে হ্যারি কেনকেও খেলতে দেবেন না, বলেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ। সেটা তিনি করালেন দলের দুই ডিফেন্ডারকে দিয়ে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

মস্কো শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৯
Share:

উৎসব: জয়ের পরে কাঁধে ছেলেকে নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ভিদা। ছবি: গেটি ইমেজেস

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই ছবিটা অক্ষয় হয়ে থাকবে হয়তো। ক্রোয়েশিয়ার ফাইনালে ওঠার মতোই অবিশ্বাস্য মনে হল ঘটনাটা।

Advertisement

অতিরিক্ত সময়ে জয়ের গোলটা করার পরে মারিয়ো মাঞ্জুকিচের ঘাড়ের উপরে উঠে পড়েছেন ইভান পেরিসিচ।

ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তোলার নায়কের ঘাড়ের উপরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে উঠে পড়েছেন সমতায় ফেরানোর নায়ক। দুই নায়কের যুগলবন্দির অসাধারণ ছবিটার সঙ্গে সঙ্গত করতে তাঁদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল যেন পুরো দল। আর খেলা শেষে কোচকে মাটিতে শুইয়ে তাঁর উপর সবাই শুয়ে পড়েছেন, সেটাও তো নতুন। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরোপের নতুন এক শক্তির উত্থানের দিনে এ সব দেখে মনে হল, সংকল্পে অটল আর একতা থাকলে সব যুদ্ধে জেতা যায়। ইংল্যান্ডের মতো দলের কাছে পিছিয়ে পড়ে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচও জেতা যায়।

Advertisement

‘এই দলটা অনেক কিছুই ওলটপালট করে দিতে পারে’, রাশিয়া আসার আগে গ্যারেথ সাউথগেটের এই আশার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। না হলে, প্রথম দিকে এত কম সমর্থক আসেন ফুটবলের দেশ ইংল্যান্ড থেকে! কিন্তু শেষ চারে ইংল্যান্ড চলে যেতেই ছবিটা বদলে গিয়েছিল। রাশিয়ায় দলে দলে সমর্থক চলে এসেছেন রাহিম স্টার্লিংদের সমর্থন করতে। ম্যাচের আগে ইংল্যান্ড কোচকে দেখা গেল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে গ্যালারি দেখে যেতে। ফুটবলারদের পরিবারের সঙ্গে বিশেষ গ্যালারিতে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে।

আরও পড়ুন: এমবাপে এক আতঙ্কের নাম, মত রিয়ো ফার্ডিনান্ডের

কিন্তু কিয়েরান ট্রিপিয়ার যে শুরুতেই এ রকম একটা ফ্রি-কিক থেকে গোল করে ফেলবেন, কে জানত? এমনিতে এ বারের বিশ্বকাপে সেট পিসে সব চেয়ে সফল সাউথগেটের ইংল্যান্ডই। এ দিনের গোলটা নিয়ে পনেরোটি কিক স্টার্লিং, দেলে আলিরা তিন কাঠির মধ্যে রেখেছেন। প্রায় কুড়ি গজ দূর থেকে ট্রিপিয়ারের বাঁক খাওয়া শট ক্রোয়েশিয়ায় গোলে আছড়ে পড়তেই মাঠের দখল নিলেন ইংরেজরা। স্টেডিয়ামের এক দিকে তখন উচ্ছাসের ঢেউ।

বিমর্ষ: হ্যারি কেনকে সান্ত্বনা ফিল জোন্সের। ছবি: গেটি ইমেজেস

ইংরেজদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও প্রচুর ক্রোয়েশিয়ার সমর্থক এসেছিলেন মাঠে। দাবার ছকের মতো লাল-সাদা জার্সি পরে আসা লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিতিচের দলের সমর্থকরা দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজার সময় বিশাল একটা ব্যানার তুলে ধরলেন। এক ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকের কাছ থেকে জানা গেল, ওই ব্যানারে লেখা ছিল, ‘‘বিশ্বকে আমরা দেখাতে এসেছি ক্রোয়েশিয়ার শক্তি।’’ ফুটবলের মধ্যে দিয়ে দেশের প্রতি ভালবাসার এই জয়গানে অবশ্য শুরুতে তেমন কিছু করতে পারছিলেন না মদ্রিচরা। পুরো দলটাকে নামার আগে কেমন যেন জড়সড় দেখাচ্ছিল।

বিরতির পরে ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাটকো দালিচ ফর্মেশন সামান্য বদল করতেই সাউগেটের দল নড়ে গেল। লিয়োনেল মেসিকে আটকে দেওয়ার পরে হ্যারি কেনকেও খেলতে দেবেন না, বলেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ। সেটা তিনি করালেন দলের দুই ডিফেন্ডারকে দিয়ে। হ্যারি কেন বল পেলেই তাঁর সামনে চলে আসছিলেন দু’জন ফুটবলার। অফসাইডে ফেলার চেষ্টা করছিলেন স্টারিনিচরা। শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পরেও ইংল্যান্ড আক্রমণের ধার বাড়ায়নি। বরং নিজেদের মাঝমাঠ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে আসার সুযোগ দিচ্ছিল। শুরুর দিকে সেই সুযোগটা নিতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।

কিন্ত বিরতির পরে অন্য ছবি। ভ্রাসালকোর শট অসামান্য দক্ষতায় পা বাড়িয়ে জুতোর নীচের অংশটা দিয়ে চাপড় দিয়ে পেরিসিচ ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরাতেই গ্যালারি বদলে গেল। প্রেস বক্সের ডানদিক থেকে গান চলে গেল বাঁ দিকে। ক্রোয়েশিয়ায় গ্যালারির উচ্ছ্বাসের ঢেউ দেখে মনে হচ্ছিল, লাল সমুদ্রে তুফান উঠেছে। সেই ঢেউয়ের মধ্যেই ফের পেরিসিচের শট পোস্টে লেগে ফিরল।

ওই গোল হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ে ইংল্যান্ডের বিদায় হয়ে যেত। সাউথগেটের দলের তরুণ প্রজন্মের দল ভেবেছিল ক্রোয়েশিয়াকে ফের সুইডেন করা যাবে। সেটা তো হলই না, লুকা মদ্রিচরা ইংল্যান্ডকে অন্ধকারে পাঠিয়ে নিজেরাই ইতিহাসে। ফাইনালে ফ্রান্সকে হারাতে পারলে নতুন এক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেয়ে যাবে ফুটবল বিশ্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন