শিলিগুড়ির পথে লাল-হলুদ দেওয়ালি

মোহনবাগানের জেজের পেনাল্টি গোলরক্ষকের হাতে যেতেই আতসবাজির আলোয় ভেসে গেল শিলিগুড়ি। যেন অকাল দেওয়ালির ছবি দেখা গেল। হাজার-হাজার মোবাইল-টর্চ জ্বলে উঠল স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শেষ হতেই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের দখলে চলে যায় শিলিগুড়ির সব রাস্তাই। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান শিবিরে তখন ক্ষোভ, হতাশার দৃশ্য। কেউ প্রিয় দলের জার্সি খুলে তা দিয়ে মুখ ঢেকেছেন। অনেকে মাঠেই জার্সি খুলে ভিড়ে মিশে গিয়েছেন।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫২
Share:

আলোর উৎসব লাল-হলুদ গ্যালারিতে। —নিজস্ব চিত্র।

মোহনবাগানের জেজের পেনাল্টি গোলরক্ষকের হাতে যেতেই আতসবাজির আলোয় ভেসে গেল শিলিগুড়ি। যেন অকাল দেওয়ালির ছবি দেখা গেল। হাজার-হাজার মোবাইল-টর্চ জ্বলে উঠল স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শেষ হতেই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকদের দখলে চলে যায় শিলিগুড়ির সব রাস্তাই। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান শিবিরে তখন ক্ষোভ, হতাশার দৃশ্য। কেউ প্রিয় দলের জার্সি খুলে তা দিয়ে মুখ ঢেকেছেন। অনেকে মাঠেই জার্সি খুলে ভিড়ে মিশে গিয়েছেন।

Advertisement

ম্যাচের শেষে যখন মোহনবাগান সমর্কদের হাহাকার, তখন লাল হলুদে শুধুই বসন্ত। জেতার পরে ডংকে নিয়ে মাঠে দর্শকদের অভিনন্দন কুড়োলেন গোটা লাল হলুদ শিবিরই। খেলোয়াড়দের চোখমুখের তৃপ্তিই বলে দিচ্ছিল তাঁরা তৃপ্ত। ম্যচ শেষে খেলোয়াড়দের অনেকই জানালেন শিলিগুড়ি তাঁদের কাছে ‘স্পেশাল’। কারণ কলকাতাতেও এমন একতরফা সমর্থন তাঁরা পান না। তাই এখানে আবার আসতে চান বলে ক্রীড়া পরিষদ কর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন অর্ণব মণ্ডল, সঞ্জু প্রধান, মেহতাব হোসেনরা। সঞ্জুর তো এটা আবার ঘরের মাঠই। খেলার পরে তৃপ্ত লাল-হলুদের ঘরের ছেলে তৃণমূলের ভাইচুং ভুটিয়া। তিনি বলেন, ‘‘আমি দু’দলেই খেলেছি। ভাল খেলা হয়েছে। আমি তৃপ্ত। তবে যে কেউ জিততে পারত।’’

মোহনবাগানের পেনাল্টি মিস খেলার অঙ্গ বলেই মনে করছেন তিনি। মোহনবাগান সমর্থক বিজেপি নেতা রথীন বসু হতাশ হলেও হারটাকে ‘স্পোর্টিংলি’ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য পরিস্কার, ‘‘মোহনবাগানের জয় চেয়েছিলাম। তবে ম্যাচ হিসেবে খুব উঁচু মানের ম্যাচ হয়েছে।’’ তারকাদের সঙ্গে সহমত কলকাতার বেলঘরিয়ার সৌরভ গুঁই, বালিগঞ্জের বাসু সরকার, সিঁথির মোড়ের রবিন পাইক কিংবা সন্তোষপুরের সুশোভন চন্দরা।

Advertisement

প্রথম থেকেই লাল-হলুদ আবিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে সবুজ মেরুনও। মশাল মার্কা ঝাণ্ডার সঙ্গে পালতোলা নৌকার প্রতিকৃতি নিয়ে টক্কর দিয়েছেন তাঁরা। খেলার শুরু থেকেও মোহনবাগানের দাপট ছিল। এরপরে খেলার গতির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি থেকে গোল করতেই প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষ একসঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন। উঠল মেক্সিকান ওয়েভও। ডংয়ের শট জালে জড়াতেই সমস্ত গ্যালারি একসঙ্গে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে দিল। মনে হল যেন ঝকঝকে আকাশের সব তারা একসঙ্গে জ্বলছে। কাঞ্চনজঙ্ঘায় তখন শুধুই মেক্সিকান ওয়েভ আছড়ে পড়ছে। পেনাল্টি নিয়ে তাও বিতর্ক ছিল, ডংয়ের পরের গোলটার পরে জবাব দেওয়ার তৃপ্তিতে উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে য়ায়। তখনই জয়ের গন্ধ পেয়ে যাওয়া লাল-হলুদ সমর্থকেরা যে আবেগের হোলি খেলা শুরু করেন, তা শেষ হয়নি ম্যাচের পরেও। খেলা শেষ হওয়ার প্রায় ৪৫ মিনিট পরেও গ্যালারি ছাড়েননি অনেকে। তখনও জ্বলছে মশাল, পুড়ছে তুবড়ি, নাচছে লাল-হলুদ জনতা। পার্কিংয়ের জায়গা মাঠ থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় সমর্থকেরা বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইস্টবেঙ্গল পতাকা, ব্যানার নিয়ে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বিধান রোড, স্টেশন ফিডার রোড, বাঘাযতীন রোড দিয়ে কার্যত মিছিল করে গিয়েছেন।

খেলা শুরুর নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে চারটে হলেও সকাল ১১টা থেকেই কাতারে কাতারে মানুষ স্টেডিয়াম চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন। এদিনের ভিড়ের একটা বড় অংশ ছিল কলকাতা থেকে আসা দু’দলের কট্টর সমর্থকেরা। এক মোহনবাগান সমর্থক বিশরপাড়ার গোপাল মুদি ট্রেনের সাধারণ কামরায় না ঘুমিয়ে এসেছেন, পয়সা বেশি নেই তাই দুটো খেয়ে ঘুমিয়ে নিয়েছেন স্টেডিয়ামের সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে ক্লাবের পতাকা পেতেই। এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক পাইকপাড়ার বিশু নন্দী চায়ের দোকান চালান। শনিবার সন্ধে পর্যন্ত দোকান করেছেন। রাতে পদাতিক ধরে শিলিগুড়ি। এ দিন খেলা দেখে ফের রাতের ট্রেন ধরবেন। সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, ইসলামপুর, মালদহ থেকেও দু’দলের সমর্থকেরা এসেছেন। আরও অনেকে আসতে পারেননি। তবে উন্মাদনায় ঘাটতি ছিল না কারওই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement