মেরি ক্রিসমাস: বিশ্বজয়ের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে উৎসব শুরু রোহিতদের

নয়া প্রজন্মকে দেখে নেওয়ার চেষ্টা সফল

মুম্বইয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রায় সেই রিজার্ভ বেঞ্চ দিয়েই বাজিমাত করে নিল ভারত। যা দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সমমানের দু’টো দল তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৮
Share:

অপ্রতিরোধ্য: আবার বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ জিতে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা যেন সবাই ‘সান্তা ক্লজ’। রবিবার ওয়াংখেড়েতে। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ১-০ এবং ওয়ান ডে সিরিজ ২-১ জিতেছিল ভারত। ছবি: এএফপি।

টেস্ট সিরিজ, একদিনের সিরিজ জেতার পরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রবিবার টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও ৩-০ জিতে নিল ভারত। তাও আবার প্রথম দলের কয়েক জনকে না খেলিয়েও। টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে দেখলাম জয়দেব উনাদকাট, ওয়াশিংটন সুন্দরদের। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তির ব্যাপারটা।

Advertisement

এ দিন মুম্বইয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রায় সেই রিজার্ভ বেঞ্চ দিয়েই বাজিমাত করে নিল ভারত। যা দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সমমানের দু’টো দল তৈরি হচ্ছে। ইদানীং আরও একটা ব্যাপার দেখছি। বোলার, ব্যাটসম্যান যে-ই হোক না কেন, নতুন ছেলেরা দলে সুযোগ পাওয়া মাত্র ঠিকঠাক খেলে দিচ্ছে। ফলে কোনও সিরিজের জন্য দল বাছতে বসলে নির্বাচকদের কাজটা কতটা কঠিন হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি। অবশ্য কিছু করারও নেই। দু’বছর পরেই বিশ্বকাপ। তার আগে দেশের সব তরুণ প্রতিভাকে দেখে নিতে হবে নির্বাচকদের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে যেমন কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহাল-রা নিজেদের জাত চিনিয়েছে। ম্যাচ ফিট এ রকম বিকল্প মুখ যত হাতের কাছে থাকবে নির্বাচকদের, তত লাভ ভারতীয় ক্রিকেটের। আর এ ভাবে নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টর এই পরীক্ষা করার প্রচেষ্টাও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। বলতে হবে, এই পরীক্ষা পুরোপুরি সফলও।

রবিবার যেমন মুম্বইয়ে বোলিং ওপেন করতে দেখলাম জয়দেব উনাদকাট এবং ওয়াশিংটন সুন্দরকে। এদের সঙ্গেই বল করল মহম্মদ সিরাজও। তৃতীয় জন সিরাজ (১-৪৫) একটা উইকেট পেলেও সে রকম ছাপ ফেলতে পারেনি। কিন্তু বল হাতে ওয়াশিংটন (১-২২) এবং জয়দেব (২-১৫) কিন্তু বেশ ভালই পারফর্ম করল। ম্যাচ সেরা হওয়ার সঙ্গে সিরিজের সেরাও হল জয়দেব। দু’জনের কেউ দক্ষিণ আফ্রিকাগামী দলে নেই। কিন্তু সুযোগ পাওয়া মাত্রই ছাপ ফেলার মতো পারফরম্যান্স করে দিল। বোঝাই যাচ্ছে, দু’জনই ভারতের বিশ্বকাপ অঙ্কে থাকবে। বাঁ-হাতি উনাদকাট এ রকম পারফর্ম করতে থাকলে তো বিরাট কোহালিদের সমস্যা অনেক মিটে যাবে। ভাল বাঁ-হাতি পেসার পেয়ে যাবে ওরা।

Advertisement

আপাতত যা দেখছি, প্রথম দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দলের ফারাক খুব বেশি নয়। যেটা আগে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে দেখা যেত। তার ফলে ধারাবাহিক ভাবে এক সময় সাফল্য পেয়ে গিয়েছে স্টিভ ওয় বা রিকি পন্টিং-রা। এ বার সেই ধারাটা আমাদের দেশের ক্রিকেটেও জাঁকিয়ে বসছে। ম্যাচ ফিট এত বিকল্প ক্রিকেটার অতীতে দেখা যায়নি।

বিশেষ করে জয়দেবের কথা বলতেই হচ্ছে। যখন প্রথম ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিল তখন ও এতটা তৈরি ছিল না। এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ও পুরোপুরি তৈরি। জয়দেব ও দলের তরুণ ক্রিকেটারদের দাপটে এ দিন ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৫-৭ আটকে রেখেছিল রোহিত শর্মার দল। ফলে পরে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা (২৭), শ্রেয়স আইয়ার (৩০) এবং মণীশ পাণ্ডে (৩২)-দের কাজটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।

শ্রেয়সও বেশ ভাল ব্যাট করছে ইদানীং। তবে ক্রিকেটের মজাটা হল, খেলাটা ঠিক কখনও ঘুরবে তা আগাম আন্দাজ করা যায় না। ঠিক তেমনই এ দিন মণীশ পাণ্ডে আউট হয়ে যাওয়ার পরে ১০৮-৫ হয়ে গিয়ে হঠাৎ একটা চাপের আবহ তৈরি হয়েছিল। সেই সময় দরকার ছিল ২৩ বলে ২৮ রান। ১০ বলে ১৬ রান করে চার বল বাকি থাকতেই ভারতকে পাঁচ উইকেটে জয় এনে দিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের এই মিশেল সমৃদ্ধ করছে ভারতীয় দল-কে।

সপ্তাহ দুয়েক পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম টেস্ট কেপ টাউনে। শ্রীলঙ্কাকে দেশের মাটিতে টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি— তিন ধরনের ফর্ম্যাটেই হারিয়ে যাওয়ার ফলে বিরাট কোহালির দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে। আর কেপ টাউনের উইকেটও খুব দ্রুতগতির নয়। বরং সেখানকার উইকেটে বল ঘোরে। ফলে এ রকম উইকেটে সিরিজের শুরুটা ভাল হবে বলেই মনে হয়।

স্কোরকার্ড

শ্রীলঙ্কা ১৩৫-৭ (২০ ওভার)
ভারত ১৩৯-৫ (১৯.৫ ওভার)

শ্রীলঙ্কা

ডিকওয়েলা ক সিরাজ বো উনাদকাট ১

তরঙ্গ ক পাণ্ড্য বো উনাদকাট ১১

কুশল ক ও বো ওয়াশিংটন ৪

সমরবিক্রম ক কার্তিক বো পাণ্ড্য ৫

গুণরত্নে ক কুলদীপ বো পাণ্ড্য ০

গুণতিলক ক পাণ্ড্য বো কুলদীপ ৩

থিসরা ক রোহিত বো সিরাজ ১১

শনাকা ন.আ. ২৯

ধনঞ্জয় ন.আ. ১১

অতিরিক্ত

মোট ১৩৫-৭ (২০)

পতন: ৮-১ (ডিকওয়েলা, ১.৫), ১৪-২, (কুশল, ২.৬), ১৮-৩ (তরঙ্গ, ৩.৩), ৫৬-৪ (সমরবিক্রম, ৮.৩), ৭২-৫ (গুণতিলক, ১১.৪), ৮৫-৬ (থিসরা, ১২.৬), ১১১-৭ (গুণরত্নে, ১৭.৩)।

বোলিং: ওয়াশিংটন ৪-০-২২-১ উনাদকাট ৪-০-১৫-২,

সিরাজ ৪-০-৪৫-১, পাণ্ড্য ৪-০-২৫-২, কুলদীপ ৪-০-২৬-১।

ভারত

রোহিত শর্মা ক কুশল বো শনাকা ২৭

রাহুল এলবিডব্লিউ বো চামিরা ৪

শ্রেয়স রান আউট ধনঞ্জয় ৩০

মণীশ পাণ্ডে বো চামিরা ৩২

হার্দিক ক ডিকওয়েলা বো শনাকা ৪

কার্তিক ন.আ. ১৮

ধোনি ন.আ. ১৬

অতিরিক্ত ৮

মোট ১৩৯-৫ (১৯.২)

পতন: ১৭-১ (রাহুল, ৩.২), ৩৯-২ (রোহিত, ৬.৬), ৮১-৩ (শ্রেয়স, ১৩.২), ৯৯-৪ (পাণ্ড্য, ১৪.৬), ১০৮-৫ (মণীশ, ১৬.১)।

বোলিং: ধনঞ্জয় ৪-০-২৭-০, চামিরা ৪-০-২২-২, থিসরা ৩.২-০-২২-০,

প্রদীপ ৪-০-৩৬-০, শনাকা ৪-০-২৭-২।

৫ উইকেটে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা জয়দেব উনাদকাট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন