যুবভারতীতে বাজছে আইএসএলের বাদ্যি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মিনিট সাতেক নাচবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তাঁর জন্য ফিতের মাপজোক আর পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলল পাঁচ ঘণ্টা। সকাল থেকে গ্যালারির একটি অংশে নাগাড়ে চলছে সহশিল্পীদের প্রস্তুতি।
রণবীর কপূর বা সচিন তেন্ডুলকর, অভিষেক বচ্চন অথবা জন আব্রাহামদের কী ভাবে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে, কী প্রশ্ন করা হবে, কোন কায়দায় কথা বলতে হবে অ্যাঙ্করদের তাঁর মহড়া চলছে মাঠের নানা জায়গায়। পুণেতে বলিউড তারকা হৃতিক রোশন যে এ দিনই মালিক হিসাবে যোগ দিয়েছেন এবং রবিবার শহরে আসছেন তখনও জানেন না ওঁরা।
ঢাউস সাউন্ড সিস্টেমের আওয়াজের সঙ্গে কর্পোরেট বক্স তৈরির জন্য হাতুড়ি-পেরেকের ঠোকাঠুকির মিশেলের শব্দব্রহ্মে মনে হচ্ছে দক্ষযজ্ঞ চলছে।
বাইশ লাখ টাকা খরচ করে স্টেডিয়াম পরিষ্কারের চেষ্টা হচ্ছে। তাতে অবশ্য গ্যালারির শ্যাওলা পুরোপুরি ওঠেনি।
কর্পোরেট বক্সের পিছনে খাওয়া-দাওয়ার জন্য এয়ারকন্ডিশনড্ লাউঞ্জ তৈরির কাজ শেষ। কিন্তু শেষ মহূর্তে গ্যালারিতে ছয় হাজার বাকেট চেয়ার বসানো যাচ্ছে না সময়াভাবে।
নতুন দু’টি ড্রেসিংরুমের রং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের—নীল-সাদা। যেখান থেকে রবিবার খেলতে নামবেন লুই গার্সিয়া, লিউনবার্গ, সুব্রত পাল, রহিম নবিরা। স্টেডিয়ামের বাইরের প্রধান গেটের রং-ও করা হচ্ছে ড্রেসিংরুমের মতো। ওখান থেকেই তো টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করতে মাঠে ঢুকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আটলেটিকো দে কলকাতার ফ্লেক্সে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী রিজার্ভ বেঞ্চও। মাঠের পাশে আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞাপন বোর্ড। একটি অস্থায়ী স্কোর বোর্ডের কাজ অনেকটাই শেষ। অন্যটির কাজ শুরু হয়নি।
ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে আড়ম্বরের টুর্নামেন্টের বর্ণাঢ্য উদ্ধোধনের দু’দিন আগের কোলাজ এ রকমই।
সাতশো কোটির টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধন গতবছর আই পি এলের উদ্ধোধন অনুষ্ঠানকে ছাপিয়ে যাবে কিনা সেটা রবিবাসরীয় সন্ধ্যা বলবে। তবে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালেই পুরো ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে শহরে আসছেন টুর্নামেন্টের প্রধান সংগঠক নীতা অম্বানি স্বয়ং। নিজের মাকে সঙ্গে নিয়ে। সন্ধ্যায় পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া দেখবেন তিনি। পরের দিন অর্থাত্ রবিবার সকালে অমিতাভ বচ্চনকে সঙ্গে নিয়ে আসার কথা শিল্পপতি মুকেশ অম্বানিরও। অন্তত আইএমজি-এর সূত্রে সে রকমই খবর।
কিন্তু শেষ দিনের মহড়া দেখে কি সন্তুষ্ট হবেন বিশ্বের অন্যতম ধনী শিল্পপতির স্ত্রী? সেটা ভেবেই অস্থির তাঁর সংস্থার লোকজন। কারণ এখনও তো যুবভারতীতে প্রচুর কাজ বাকি। দু’টি ভি আই পি বক্স থাকছে অতিথিদের জন্য। পুরনো একটি ছিলই, নতুনটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। তার সামনে কাঠের গ্যালারি তৈরি করে নীল কার্পেট বসানোর কাজ চলছে সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকদের বসার জন্য। কার্পেটের উপর সোফা বসানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে প্রশাসন। বিকেলে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের লোকজন এসে তিনটি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ঘিরে দিতে বলায় মাথায় হাত সংগঠকদের। কখন হবে? সময় কোথায়?
আসলে পুজোর ছুটির ধাক্কায় এখনও অপ্রস্তুত যুবভারতী। মাঠের বাইরে স্টেডিয়ামের চারপাশের জঞ্জাল বা জমা করা ভাঙা চেয়ারের কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, ভিতরের প্রস্তাবিত সব কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই। বারবার প্রকট হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমঝোতার অভাব। মাঠের ভিতর সেন্টার লাইনের উপর প্রধান মঞ্চ হচ্ছে। যেখানে মূল অনুষ্ঠান হবে। সেটা জানেনই না যুবভারতীর সিইও জ্যোতিস্মান চট্টোপাধ্যায়। বলছিলেন, “মাঠের ভিতর মঞ্চ হবে আমাকে কেউ এ কথা জানায়নি।” স্টেডিয়ামে কিছু হলে সবার আগে তাঁকেই জানানোর কথা। উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পর মাঠের ব্যাপারটা তো তাঁকেই দেখতে হবে। যেমন চিন্তায় রয়েছে দমকলের লোকজন। প্রচুর দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হচ্ছে স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে। দফায় দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন তাঁদের অফিসাররা।
এক দিকে ঘুর্ণিঝড় হুদহুদ নিয়ে ভাবনা, অন্য দিকে ঘড়ির কাঁটা ধরে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ— আইএসএলের উদ্বোধনের কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য যে মুখিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা।