আমরা এখন পোকার খেলি: নেইমার

আর গোল নয়, বিরতিতেই ঠিক করে ফেলে জার্মানি

ক্ষমাঘেন্না! যতই নরমসরম শব্দ, যতই ব্যাপারটাকে ‘স্রেফ এক দিনের ঘটনা’ বলে দেখানো হোক, যতই মেসুট ওজিল থেকে টমাস মুলার বলে যান ‘ব্রাজিল ১-৭ খাওয়ার টিম নয়’, জার্মান ড্রেসিংরুমে মঙ্গলবারের খবরাখবর বেরিয়ে পড়তে যে নির্যাস দাঁড়াচ্ছে, তা ওই একটা শব্দ!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

ক্ষমাঘেন্না!

Advertisement

যতই নরমসরম শব্দ, যতই ব্যাপারটাকে ‘স্রেফ এক দিনের ঘটনা’ বলে দেখানো হোক, যতই মেসুট ওজিল থেকে টমাস মুলার বলে যান ‘ব্রাজিল ১-৭ খাওয়ার টিম নয়’, জার্মান ড্রেসিংরুমে মঙ্গলবারের খবরাখবর বেরিয়ে পড়তে যে নির্যাস দাঁড়াচ্ছে, তা ওই একটা শব্দ!

জার্মানি সে দিন বেলো হরাইজন্তে ড্রেসিংরুমে হাফটাইমে ঢুকে ঠিক করেছিল, ব্রাজিলকে আর অপমান নয়। আর বেশি গোল দেওয়া নয়। তাতে ব্রাজিলের মতো টিমকে আরও ছোট করা হবে। পাঁচ গোল দেওয়া পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু সেটা আট-দশে শেষ করার কোনও মানে নেই।

Advertisement

“আমরা ড্রেসিংরুমে বিরতিতে সে দিন ঠিক করেছিলাম, ব্রাজিলকে আর হয়রান করব না। বরং নিজেদের ফুটবলে ফোকাস রাখব,” বলে দিয়েছেন জার্মান ডিফেন্ডার মাট্স হুমেলস। “আমরা আরও বলেছিলাম, আমাদের সিরিয়াস থাকতে হবে। লোক দেখানো ব্যাপারে না গেলেও চলবে। বরং ব্রাজিলের মতো টিমকে সম্মানটা ঠিকঠাক দেখানো দরকার। আমরা সে দিন কোনও ম্যাজিক দেখানোর চেষ্টায় যাইনি। বরং চেষ্টা করেছিলাম নব্বই মিনিট যে ভাবে খেলছিলাম, সে ভাবে খেলে যেতে।” জার্মান ডিফেন্ডারের মনে হচ্ছে, এ জিনিস জীবনে এক বারই ঘটবে। কী জার্মানি, কী ব্রাজিলের। আর তাতে যদি মাথা ঘুরে যায়, তা হলে মারাকানার ফাইনালে নিজেদের বিপদ নিজেদেরই ডেকে আনা হবে। “আসলে ব্রাজিল দ্বিতীয় গোলটা খাওয়ার পর কী রকম ধন্দে পড়ে গিয়েছিল। অগোছাল হয়ে গিয়েছিল। আমরা ঠিক করেছিলাম পাঁচ গোল না হওয়া পর্যন্ত কোনও ঝুঁকিতে যাব না। যা-ই খেলুক, দিনের শেষে টিমটার নাম ব্রাজিল। যা কিছু যে কোনও সময় করে দিতে পারে। তবে এটাও ঠিক, এমন জিনিস তো বারবার ঘটবে না। আমরা চেয়েছিলাম ব্যাপারটাকে স্রেফ উপভোগ করতে। আর এখন চেষ্টা করছি নিজেদের পা মাটিতে রেখে যেতে। যেটা আমাদের কাছে সমস্যা নয়।”

হুমেলসের টিম তবু পাঁচ গোল না দেওয়া পর্যন্ত অভিশাপের ব্রাজিল নিয়েও নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। অথচ ব্রাজিলেরই এক নম্বর তারকা নেইমার পাঁচ গোলের অনেক আগেই সে দিন টিভি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। টিমের রকমসকম দেখে তাঁর এক বারও মনে হয়নি, এদের পক্ষে কোনও প্রত্যাবর্তন ঘটানো সম্ভব। না, সে দিন কাঁদেননি নেইমার। ভাঙা শিরদাঁড়া নিয়ে ম্যাচ দেখতে দেখতে অসহ্য রাগে ফুঁসেছেন, টিভি রিমোট ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন, আর শেষে গালাগাল দিয়ে বলে উঠেছেন, “এই ব্রাজিল আর ফুটবল খেলে না। পোকার খেলে!”

গুয়ার্জুয়ায় নিজের পৈতৃক বাড়িতে সে দিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ম্যাচ দেখতে বসেছিলেন নেইমার। ম্যাচ শুরুর আগে জুলিও সিজার আর দাভিদ লুইজের তাঁর দশ নম্বর জার্সি নিয়ে ‘নাটক’ দেখে কেঁদেও ফেলেছিলেন। কিন্তু ম্যাচ যত এগিয়েছে, সতীর্থদের প্রতি ঘৃণা তত বেড়েছে নেইমারের। পরের পর গোল খেতে দেখে বন্ধুদের নেইমার বলেও ফেলেন, “ফা... ইউ! আমি এ সব দেখতে পারছি না! এরা কি পোকার খেলতে নেমেছে?”

ফুটবল ছেড়ে ব্রাজিল পোকার ধরল কি না, সময় বলবে। কিন্তু মুলারদের খেলা দেখে এক ব্রাজিল কিংবদন্তির মতো বাকি বিশ্ব মোটামুটি একমত। যে ফুটবলটা দশ-বারো বছর আগেও ব্রাজিলকে খেলতে দেখা যেত, যে কারণে তারা ছিল ফুটবল পৃথিবীর সম্রাট, সে সমস্ত কারণ এবং সেই ফুটবল আভিজাত্য বর্তমানে হাত বদল হয়ে গিয়েছে। সেটা এখন জোয়াকিম লো-র জার্মানির সম্পত্তি। ব্রাজিলের ওই কিংবদন্তি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেওছেন, ‘দশ বছরে কত কিছু বদলে যেতে দেখলাম! এ বার বিশ্বকাপ দেখে মনেও হয়েছিল, বিশ্বকাপটাও বদলে যাচ্ছে। শুধু একটা ব্যাপার বদলাল না। জার্মান ফুটবলের ঐতিহ্য। আগে যা ছিল ব্রাজিলের, আমাদের, তা এখন ওদের। ওরাই এখনকার ব্রাজিল।’

বক্তার নাম— রোনাল্ডিনহো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement