আশা করছি রাজস্থানকে হারিয়ে আরও স্মরণীয় করে রাখব মে মাসটা

কেকেআরের অন্দরমহলের সব খবর নিয়ে পূর্ব ভারতে একমাত্র আনন্দবাজারে কলম ধরছেন নাইটদের ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরমে মাসের দিকে আমি বরাবরই তাকিয়ে থাকি। স্কুলে মে মাস মানে ছিল গরমের ছুটি। তখন ওই ছুটিটাকে মনে হত ক্লাস টাইম টেবিলের একটা লম্বা গেমস পিরিয়ড। খেলাধুলো ছাড়া গরমের ছুটির মেন্যুতে থাকত প্রচুর ম্যাঙ্গো শেক, লেবুর শরবত, আরও ম্যাঙ্গো শেক আর লেবুর শরবত। যারা একটু বুদ্ধি ধরত, তাদের কাছে কারেন্ট চলে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০৩:০২
Share:

মে মাসের দিকে আমি বরাবরই তাকিয়ে থাকি। স্কুলে মে মাস মানে ছিল গরমের ছুটি। তখন ওই ছুটিটাকে মনে হত ক্লাস টাইম টেবিলের একটা লম্বা গেমস পিরিয়ড। খেলাধুলো ছাড়া গরমের ছুটির মেন্যুতে থাকত প্রচুর ম্যাঙ্গো শেক, লেবুর শরবত, আরও ম্যাঙ্গো শেক আর লেবুর শরবত। যারা একটু বুদ্ধি ধরত, তাদের কাছে কারেন্ট চলে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। আমাদের কাছে অবশ্য পাওয়ার-কাট মানে লুকোচুরির খেলা আর বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করা যে, আমরা সারা জীবন একে অন্যের পাশে থাকব। সত্যি, জীবন তখন কী সুখের ছিল!

Advertisement

বছরকয়েক পরে মে মাসের মানে দাঁড়াল দিল্লিতে গরমকালের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যেগুলো খেলার সৌজন্যে আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরও সব নামী কলেজে গিয়েছি। হিন্দু কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই তাই জেনে গিয়েছিলাম যে, ওখানকার ক্যান্টিনে কী কী খাবার পাওয়া যায়। মে মাসের সন্ধে মানে অস্থায়ী কোর্টে দুটো একশো ওয়াটের বাল্বের আলোয় ব্যাডমিন্টন খেলা। তখন খেলা বলতে শুধু জেতাই বুঝতাম। ক্লান্তি ব্যাপারটা যে কী, জেনেছিলাম আরও কয়েক বছর পরে।

এখন মে মাস মানে কেকেআর আর আইপিএল। ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যার জন্য আমি মরতেও রাজি। একশো ওয়াটের ওই দুটো বাল্বের জায়গায় এখন ক্রিকেট মাঠের চারটে বিশাল ফ্লাডলাইটের স্তম্ভ। এখন ম্যাঙ্গো শেক খাওয়াটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিন্তু লেবুর শরবত আমার কাছে সব সময় স্বাগত। বন্ধুদের সঙ্গে করা কয়েকটা প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছি। কয়েকটা এখনও রাখা বাকি। এখনও ব্যাডমিন্টন খেলা উপভোগ করি। এখনও সমান লড়াই করতে পারি। আর এখনও ক্লান্ত হয়ে পড়ি না।

Advertisement

এখন মে মাস আমার কাছে আরও সুখের। এই মাসের প্রথম দিনই নাতাশা আমাদের মেয়ের জন্ম দিয়েছে। রাঁচি যাওয়ার পথে যখন আমি দিল্লিতে, তখনই আমাদের জীবনে এই ছোট্ট পরীর আবির্ভাব। ওর আবির্ভাবের সময়টা আরও কয়েক দিন পরে ছিল। কিন্তু ও বোধহয় সিএসকে-র বিরুদ্ধে বড় ম্যাচে বাবার জন্য চিয়ার করতে চাইছিল। ম্যাচটায় হারলাম ঠিকই। কিন্তু ওর জন্মের সময় যে আমি ওর কাছে থাকতে পারলাম, তার জন্য ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাবা হওয়ার অনুভূতি এখনও পুরোটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু নিজেকে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ, মে। ধন্যবাদ, ঈশ্বর।

আমদাবাদে বসে কলামটা লিখছি। এখানে সোমবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ। যখন ম্যাচের কথা চিন্তা করছি না, তখন মেয়েকে নিয়ে ভাবছি। আমার বন্ধুরা বলত, বাবা হওয়ার পর আমার জীবনে শুভ পরিবর্তন আসবে। এখন বুঝতে পারছি ওরা কী বলতে চাইছিল। আমার মা আর নাতাশা কেনাকাটার ব্যাপারটা দেখে, তাই আমি একেবারেই শপিং করতে পছন্দ করি না। কিন্তু মনে হচ্ছে এ বার ব্যাপারটা পাল্টাতে হবে। আমার ধুসর আর কালো রং সরিয়ে এ বার গোলাপি রংটাকে স্বাগত জানাব। মেয়েদের তো ওই রংটা খুব পছন্দ। গোলাপি জামা, গোলাপি জুতো, গোলাপি বিছানা, গোলাপি চাদর, গোলাপি সাবান কত কিছুই না কেনার আছে!

তবে তার আগে রাজস্থান রয়্যালসের নীল টিমের বিরুদ্ধে একটা ক্রিকেট ম্যাচ জেতার আছে। আমাদের টিমে কত প্রতিভা আছে, রাজস্থানের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে মনে হয় সেটা ভালই দেখিয়ে দিয়েছি। সাকিব আর সূর্য ওই ম্যাচটা প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিল আমাদের। কিন্তু ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল। আমাদের টিম এ বার প্রচণ্ড তেতে আছে। নিজেদের প্ল্যানটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে এই টুর্নামেন্টে যে কোনও টিমকে আমরা হারিয়ে দিতে পারি। আশা করব, মে মাসটাকে আমরা আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন