বুধবার যারা সানরাইজার্স-কিংস ইলেভেন ম্যাচ দেখতে টিভির সামনে বসেছিলেন, তাঁরা একবার ভেবে দেখুন তো নমন ওঝা মিচেল জনসনের ক’টা বল খেলেছে? ঋদ্ধিমান সাহাও তেমন ভাবে ডেল স্টেইনের সামনে পড়েনি।
হায়দরাবাদের ম্যাচে সে দিন এই দু’জন যেভাবে তিন নম্বরে নেমে দু’শোর উপর স্ট্রাইক রেটে তুমুল পেটাল, তাতে বলতেই হয় বিপক্ষের ক্যাপ্টেনদের বেশ বোকা লেগেছে। একটু তলিয়ে ভাবলে অবশ্য ওদের অতটা বোকা মনে হয় না। আসলে ওরা ওদের সেরা বোলারদের রেখে দিয়েছিল বিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যানদের জন্য। হায়দরাবাদের ফিঞ্চ, ধবন ও ওয়ার্নার এবং পঞ্জাবের ম্যাক্সওয়েল, মিলারদের কথাই বিপক্ষের ক্যাপ্টেনদের মাথায় ছিল। অন্য দিক থেকে নমন, ঋদ্ধিমানরাও উঠে এসে যে এমন বিষ্ফোরক হয়ে উঠতে পারে, তা ভাবতেও পারেনি ওরা। এটাই স্বাভাবিক। অতি সাধারণ সৈনিকদের চেয়ে বড় বড় যোদ্ধাদের কথা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করাই তো বুদ্ধিমানের কাজ।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আইপিএলে সেই ভাবনা ভাবা বোধহয় ঠিক না। এ বার দলের ‘ইউটিলিটি ম্যান’-রাও ক্রমশ সামনের সারিতে চলে আসছে। করুণ নায়ার, কেদার যাদব, মণীশ পান্ডে, এমনকী অম্বাতি রায়ডুর ব্যাটও যে বারুদে ঠাসা, তার প্রমাণও মিলেছে। প্রায় সব দলেরই ব্যাটিংয়ে ক্রমশ উন্নতি আসছে। ব্যাটিংয়ে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে সবাই।
মনন ভোরাও এই ক্লাবের সদস্যপদ নিয়ে ফেলল। একমাত্র যে ছেলেটাকে পঞ্জাব রেখে দিয়েছিল, সেই ভোরা এ বার আইপিএলে তার প্রথম ম্যাচটা খেলল বুধবার। আর সুযোগ পেতেই ঝলসে উঠল তার ব্যাট। তবে মজার কথা, ২০ বলে ৪৭-এর ইনিংসে ভুবনেশ্বর কুমারের একটা বলও কিন্তু সে খেলেনি। তবে কয়েকটা অসাধারণ শট কিন্তু খেলেছে ও।
আইপিএলের আর অর্ধেক বাকি। এ বার যেটা হতে পারে, তা হল, ব্যাটসম্যানরা বোলারদের ঘাড়ে ক্রমশ চেপে বসতে পারে। তাই যে টিমগুলোতে পাঁচজনই নিয়মিত বোলার রয়েছে, তাদের কিন্তু এ বার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। যেমন পঞ্জাবের কথাই ধরুন। বুধবার ওদের দলে পাঁচ জনের বেশি হাত ঘোরানোর ছেলে ছিল না। তা ছাড়া ওই সেরা ব্যাটসম্যানদের জন্য সেরা বোলারদের মজুত করে রাখার কৌশলও এখন তামাদি হতে চলেছে। এটা নিয়েও নতুন করে ভাবার সময় এসে গিয়েছে।
আরও একটা বিষয় ভাবার আছে। এ বার অনেকে তাদের তথাকথিত দুর্বল ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং অর্ডারের উপর দিকে নামানোর সাহস দেখাবে। এতে বিপক্ষের সেরা বোলারদের সঠিক ভাবে ব্যবহার করা ও ঠিকঠাক ফিল্ডিং সাজানো দুটো ব্যাপারই বিপক্ষের ক্যাপ্টেনদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে। লিগ পর্যায়ের শেষ সপ্তাহের ম্যাচগুলোতে এমন গেরিলা কায়দায় আক্রমণ দেখার জন্য তৈরি থাকুন।
ম্যাক্সওয়েল-মিলার বা যুবি-স্মিথদের জন্য গলা ফাটান, আপত্তি নেই। কিন্তু ঋদ্ধিমান, নমনদের ভুলে যাবেন না। এ বারই তো বোলারদের আসল পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে।