ঘরে ফেরা। শুক্রবার কলকাতা বিমানবন্দরে লোবো। ছবি: কৌশিক সরকার
আইএসএলে তিনি রাতারাতি ভারতীয় ফুটবলারদের কদর বাড়িয়ে তুলেছেন। এক গোলে পিছিয়ে থাকা আটলেটিকো দে কলকাতাকে দু’গোল করে জিতিয়ে। সেই গোয়া থেকে শুক্রবার শহরে ফেরার মাঝপথে হায়দরাবাদে কেভিন লোবো-কে মোবাইলে ধরে ফেলল আনন্দবাজার।
প্রশ্ন: আটলেটিকো কলকাতার প্রথম তিন ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চেও ছিলেন না। তার পর চার নম্বরে মাঠে নেমেই দু’গোল! অনুভূতিটা কী রকম?
লোবো: আমার দু’গোলের থেকেও বেশি জরুরি ছিল টিমের জয়। গোয়ার মতো কঠিন ভেন্যু থেকে তিন পয়েন্ট আনতে পেরে খুব ভাল লাগছে। নিজেও দলকে সাহায্য করতে পেরেছি, সেটাও একটা বাড়তি সন্তুষ্টি আমার।
প্র: এত দিন আপনাকে সুযোগ না দেওয়াটা কি তা হলে ভুল ছিল কোচ হাবাসের?
লোবো: সেটা কোচ বলতে পারবেন। ওঁর নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কিছু ভাবনা আছে। সেই ভাবনায় হয়তো আমি ছিলাম না।
প্র: দলে সুযোগ পাবেন আশা করেছিলেন?
লোবো: আমার কাজ নিজেকে সম্পূর্ণ ফিট রাখা। জানতাম সুযোগ একবার না একবার আসবেই। যার জন্য তৈরি ছিলাম।
প্র: লুই গার্সিয়ার গায়ে ‘মার্কি ফুটবলার’ তকমা থাকার জন্যই কি আপনি সুযোগ পাচ্ছিলেন না?
লোবো: মনে হয় না। প্রতিটা টিমেই প্রথম দলে ছ’জন বিদেশি ফুটবলার বাছতে হবে। কোচের কাছে ব্যাপারটা সহজ নয়।
প্র: মাদ্রিদে প্রায় এক মাস প্রাক্-মরসুম শিবির কতটা সাহায্য করেছে?
লোবো: পুরো অভিজ্ঞতাটাই দারুণ। আটলেটিকো মাদ্রিদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে প্র্যাকটিস করা, ওদের সমস্ত আধুনিক ট্রেনিং সরঞ্জাম ব্যবহার করা সব কিছু মিলিয়ে আরও উন্নতি হয়েছে আমাদের।
প্র: আপনি গোয়ার ভূমিপুত্র। সেই শহরকে দু’গোল দিয়ে কি এখন নিজেকে ঘরের শত্রু বিভীষণ মনে হচ্ছে?
লোবো: হ্যাঁ, নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হচ্ছে। খুবই নস্ট্যালজিক মুহূর্ত ছিল। যে শহরে বড় হয়েছি, সেখানে, তাদের বিরুদ্ধেই গোল করলাম! কিন্তু আটলেটিকোকে জেতাতে পেরে সব কিছুই সার্থক।
প্র: জিকোর দলের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। রবিবার কি ডেভিড জেমসের মতো বিশ্বকাপ খেলা বহু অভিজ্ঞ কিপারকেও গোল দেবেন?
লোবো: কেন জানি মনে হচ্ছে, রবিবারও গোল পাব! আমি খুব সুযোগসন্ধানী ফুটবলার। সব সময় গোল করার তালে থাকি।
প্র: তার আগের রাতে এল ক্লাসিকো দেখবেন?
লোবো: নিশ্চয়ই। আমি বার্সেলোনার অন্ধ ভক্ত। কোনও ম্যাচ মিস করি না। এল ক্লাসিকো না দেখার তো প্রশ্নই উঠছে না। বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের খেলা দেখাটা আমাদের জন্য জরুরি। হোফ্রে, গার্সিয়ার থেকে মাঝেমাঝে বার্সা নিয়ে গল্পও শুনি।
প্র: ইস্টবেঙ্গলে এসেই মর্গ্যানের কোচিংয়ে ছিলেন। রবিবার পুরনো কোচের বিরুদ্ধে নামার অনুভূতি কেমন?
লোবো: মর্গ্যান এখন কেরল ব্লাস্টার্সের কোচ। আমি আটলেটিকো কলকাতার ফুটবলার। বিপক্ষ দলের কোচকে নিয়ে কথা বলতে চাই না।
প্র: কিন্তু ফুটবলমহল তো বলে মর্গ্যান আপনাকে ফুটবলার হিসাবে উন্নতি করতে সাহায্য করেছিলেন?
লোবো: বললাম তো মর্গ্যান নিয়ে কথা বলব না। রবিবারের ম্যাচটা তো মর্গ্যান বনাম আমি নয়! কেরল বনাম কলকাতা। আর উন্নতি আমি আটলেটিকোয় এসে করেছি।
প্র: গার্সিয়া, বোরহার মতো সিনিয়র বিদেশিরা কি সাহায্য করছেন আপনাকে?
লোবো: হ্যাঁ, প্রতিদিনই গার্সিয়া, বোরহাদের থেকে নতুন কিছু শিখছি। সমস্যা হলে সিনিয়র ফুটবলারদের বলছি। গার্সিয়া ওর আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিপুল অভিজ্ঞতার গল্পও শোনায় মাঝেমাঝে।
প্র: আর কোচ হাবাস?
লোবো: আন্তোনিও হাবাস সব সময় আমায় উদ্বুদ্ধ করছেন। গোয়াতেও ম্যাচের আগে বলেছিলেন, “কোনও সময় হার মানবে না। ফুটবলে কেউ হার মানে না। সুযোগ পেয়েছ খেলার। কাজে লাগাও।’ কোচের কথাতেই আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল।
প্র: এত কম দিনের মধ্যে বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে না?
লোবো: না। টানা পঁয়তাল্লিশ দিন পুরো টিম একসঙ্গে আছি। একে অপরের খেলার ধরন জেনে গিয়েছি। পছন্দ-অপছন্দও। মাদ্রিদে প্রি-সিজন ট্রেনিংটা বোঝাপড়া আরও বাড়িয়ে তুলেছে আমাদের মধ্যে।
প্র: কিন্তু আইএসএলে তো প্রতিটা দলেই বিদেশির সংখ্যা বেশি। এই টুর্নামেন্ট থেকে ভারতীয় ফুটবলারদের কি কিছু উন্নতি হবে?
লোবো: নিশ্চয়ই উন্নতি হবে। বিশ্ব ফুটবলের সব নক্ষত্রদের সঙ্গে এক টিমে খেলছে ভারতীয়রা। এ বার ফুটবলাররা ব্যক্তিগত ভাবে যদি চায় নিজের সেরাটা বার করে আনতে তা হলে ভারতীয় ফুটবল সঠিক পথেই এগোবে। তা ছাড়া, আইএসএলে আস্তে আস্তে ভারতীয়রাও পাল্লা দিয়ে ভাল খেলছে।