ধোনি যখন দর্শক... চেন্নাই-বধের নায়ক ম্যাক্সওয়েল। শুক্রবার।
ম্যাচটা ছিল টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বিপজ্জনক দলের সঙ্গে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের। সেখানে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন, চার বারের ফাইনালিস্ট চেন্নাই সুপার কিংসের দশের উপর টার্গেটকেও এক ওভারের বেশি থাকতে চার উইকেটে টপকে গেল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। ২০ ওভারে ২০৫-৪-এর জবাবে ১৮.৫ ওভারে ২০৬-৪।
তবু আমার কাছে এটা সিএসকে-র একটা খারাপ দিন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ম্যাক্সওয়েলের (৪৩ বলে ৯৫, ১৫X৪, ২X৬) মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানের ব্যাট শুক্রবারও দারুণ চলায় ধোনির দলকে অসহায় দেখাল। সহবাগ বেশি রান (১০ বলে ১৯) করতে পারেনি হয়তো, কিন্তু ওর ব্যাটিংয়ে একটা কিছু করার চেষ্টা দেখলাম। পূজারা ভারতের ওয়ান ডে দলে ঢোকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিংস ইলেভেনের ওপেনার হিসাবে ওকেও তাই বিপজ্জনক দেখাচ্ছে। ডেভিড মিলার তো গত বার আইপিএল থেকেই ‘মিলার দ্য কিলার’ হয়ে উঠেছে। এ দিনও প্রায় দেড়শো স্ট্রাইকরেটে ৫৪ নট আউট থেকে পঞ্জাবের হয়ে ম্যাচটা শেষ করল। দলের ক্যাপ্টেন এবং কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের আর এক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান জর্জ বেইলির (১০ বলে ১৭ নট আউট) জন্যও কাজ বাকি না রেখে। গোটা ম্যাচে একমাত্র মিচেল জনসনের (৪ ওভারে ০-৪৭) নিজের স্ট্যান্ডার্ডে বল করতে না-পারা ছাড়া পঞ্জাবের সব কিছুই ভাল দেখিয়েছে। ওদের ঋষি ধবন ছেলেটা এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডার। এ বার রঞ্জিতে হায়েস্ট উইকেট পেয়েছে। এ দিন দরকার না পড়লেও ওর ব্যাটের হাতও বেশ ভাল। পরভিন্দর আওয়ানার পেস বোলিয়ে বৈচিত্র আছে। সব মিলিয়ে কিংস ইলেভেন দারুণ চ্যালেঞ্জার।
ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসে উচ্ছ্বসিত পঞ্জাব মালকিন প্রীতি।
আর ওদের ম্যাক্সওয়েলের জন্য তো আলাদা একটা প্যারাগ্রাফ রাখতেই হবে। অস্ট্রেলীয় ছেলেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই ভয়ঙ্কর ফর্মে আছে। যদি এ ভাবেই আইপিএল-টা খেলে তবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে অন্য সব ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের বোলারদেরই কপালে দুঃখ আছে। অসাধারণ ক্লিন হিটার। অসমসাহসী ব্যাট। ফলে ক্যাচ তুলে বেঁচে গেলেও পরের বলটাই আবার মাঠের বাইরে ফেলে দিতে এতটুকু ভয় পায় না। এই ধরনের গদার মতো ব্যাট ঘোরানো ব্যাটসম্যান সামলাতে বিপক্ষ দলে অন্তত এক জন এক্সপ্রেস গতির পেসার থাকা দরকার। ধোনির দলে যা গত মরসুমেও ছিলবোলিঞ্জার। এ বার সে রকম কাকে কিনেছে ওরা আমি ঠিক জানি না। তবে প্রবীণ আশিস নেহরা বা নবীন মোহিত শর্মার মতো গতির বোলার দিয়ে, ওই পেস দিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে আটকানো অসম্ভব। দরকার মালিঙ্গার মতো এক্সপ্রেস গতির পেসার। যে ডেথে বলে-বলে ডট বল করে দেবে।
ধোনির আবু ধাবির মাঠে তিন জন স্পিনার (অশ্বিন-জাডেজা-নেগি) খেলানোও আমার মতে ভুল সিদ্ধান্ত। দুবাইয়ের মাঠ হলে তবু একটা কথা আছে। ওখানে বল টার্ন করে, দু-একটা ডেলিভারি লাফায়। আবু ধাবি পেসারদের দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকা মূলত ব্যাটিং স্ট্রিপ। যেখানে ধোনির তিন স্পিনার মিলে ১১ ওভারে ১২১ রান দিয়ে মাত্র দু’উইকেট তুলল! সিএসকের এ দিন ফিল্ডিংও খারাপ ছিল। ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ পড়েছে। সহবাগের ক্যাচ ছেড়েছে। তার উপর চোট পাওয়ায় ডোয়েন ব্র্যাভো এক ওভারও বল করতে পারল না। সব মিলিয়ে দিনটাই সিএসকের ছিল না! তবু বলব, সিএসকের বিরুদ্ধে খেলা মানেই ম্যাচের আগে বিশেষজ্ঞরা প্রথমেই ভাবে, ধোনিরাই জিতবে। যেমন ইপিএলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে যে দলই খেলুক, ফেভারিট সব সময় ম্যান ইউ-ই।
আমার মতে আইপিএলের ম্যান ইউ হল সিএসকে। ধোনিদের একটা হারে তাই টুর্নামেন্ট থেকে মুছে ফেলতে চাইলে বড় ভুল হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চেন্নাই সুপার কিংস ২০৫-৪ (ম্যাকালাম ৬৭, ডোয়েন স্মিথ ৬৬, বালাজি ২-৪৩),
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৮.৫ ওভারে ২০৬-৪ (ম্যাক্সওয়েল ৯৫, মিলার ৫৪ নঃআঃ, অশ্বিন ২-৪১)।
ছবি: পিটিআই।
উত্তেজক জয় রাজস্থানের
নিজস্ব প্রতিবেদন
টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে রাজস্থান রয়্যালসের নতুন অধিনায়ক শেন ওয়াটসন বলেছিলেন, “এই উইকেটে দুশোর কম যে কোনও টার্গেট তাড়া করতে খুব পছন্দ করব।” বিশ্ব টি-টোয়েন্টি থেকে খারাপ ফর্ম চলা ওয়াটসন (৩) আইপিএলে দলের প্রথম ম্যাচে নিজে যথারীতি রান না পেলেও ক্যাপ্টেনের ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্যি করে রাজস্থান প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ১৩৩-৬ সফল ভাবে তাড়া করে ম্যাচ জিতল চার উইকেটে। তিন বল বাকি থাকতে তারা করে ১৩৫-৬।
ডেল স্টেইন, ভুবনেশ্বর কুমার, ইশান্ত শর্মা, ডারেন স্যামি সানরাইজার্সের শক্তিশালী পেস আক্রমণের সঙ্গে অভিজ্ঞ অমিত মিশ্রের লেগ স্পিন ‘ডেথে’ জ্বলে উঠে গোটা তিনেক উইকেট তুলে নিলেও স্টুয়ার্ট বিনিকে আটকাতে পারেনি। তার আগে ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন অজিঙ্ক রাহানে (৫৯)। তবে রাজস্থান রয়্যালস মেন্টর রাহুল দ্রাবিড়ের মুখে হাসি ফোটালেন তাঁর মুলুকের বিনি-ই (৩২ বলে ৪৮ নঃআঃ)। স্টেইন (২-২৯) উনিশতম ওভারেও উইকেট তুললেও শেষরক্ষা করতে ব্যর্থ।
যেমন সানরাইজার্স অধিনায়ক শিখর ধবন (৩৪ বলে ৩৮) ফকনারকে ফিরতি ক্যাচ তুলে বেঁচে গেলেও ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। রাজস্থানের তরুণ অস্ট্রেলীয় পেসার কেন্ রিচার্ডসন (২-২৫) বলের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও (তিনটি ক্যাচ) নজর কেড়েছেন। জয়ের পর উচ্ছ্বসিত রাজ কুন্দ্রার টুইট, ‘এটা কিন্তু সবাইকে মানতেই হবে যে, রাজস্থান রয়্যালস আইপিএলে সর্বদা উত্তেজক ম্যাচই উপহার দেয়!’