সোনার শনিবার

ঐতিহাসিক সোনা তিরন্দাজ দল ও এক বাঙালির

প্রথম সাত দিনে ১৭ পদক। শনিবার এক দিনেই ১১! পদক তালিকায় এক লাফে সতেরো থেকে এগারোয়! এর পর এশিয়াডের অষ্টম দিনকে ভারতের সোনার দিন বলা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়! সোনার পদকও তো আজ জোড়া! দুটোই ঐতিহাসিক। অলিম্পিকে থাকলেও এশিয়াডে ইনচিওনেই তিরন্দাজিতে প্রথম কম্পাউন্ড টিম ইভেন্ট চালু হয়েছে। আর তাতে উদ্যোক্তা এবং তিরন্দাজিতে ষোলোটি অলিম্পিক সোনাজয়ী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদেরই ঘরের মাঠে ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র দু’পয়েন্টে (২২৭-২২৫) হারিয়ে সোনা জিতল ভারত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইনচিওন শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

সফল ভারতীয় স্কোয়াশ টিম। ছবি: পিটিআই।

প্রথম সাত দিনে ১৭ পদক। শনিবার এক দিনেই ১১! পদক তালিকায় এক লাফে সতেরো থেকে এগারোয়!

Advertisement

এর পর এশিয়াডের অষ্টম দিনকে ভারতের সোনার দিন বলা ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!

সোনার পদকও তো আজ জোড়া! দুটোই ঐতিহাসিক। অলিম্পিকে থাকলেও এশিয়াডে ইনচিওনেই তিরন্দাজিতে প্রথম কম্পাউন্ড টিম ইভেন্ট চালু হয়েছে। আর তাতে উদ্যোক্তা এবং তিরন্দাজিতে ষোলোটি অলিম্পিক সোনাজয়ী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদেরই ঘরের মাঠে ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র দু’পয়েন্টে (২২৭-২২৫) হারিয়ে সোনা জিতল ভারত। তার চেয়েও তাৎপর্যের, তির-ধনুকের ময়দানে এটাই ভারতের প্রথম সোনার পদক।

Advertisement

রজত চহ্বণ, সন্দীপ কুমার, অভিষেক বর্মা (তিনি তো আবার আজ ব্যক্তিগত বিভাগে রুপো জিতে নায়কদের দলে মহানায়ক!) বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে উঠে এলেও অসাধারণ দলগত সংহতি দেখিয়ে তিরন্দাজির সুপারপাওয়ারকে পরাজিত করেন। উচ্ছ্বসিত মণিপুরি কোচ রঞ্জন সিংহ বলেছেন, “আজকের দিনটার জন্য আমরা দু’বছর ধরে তৈরি হয়েছি। ভারতীয় তিরন্দাজির এটা বৃহত্তম জয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় আসার আগে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটি-তে বিখ্যাত কোচ ডি উইল্ডের কাছে পনেরো দিন ট্রেনিং নিয়েছি। সত্যি বলতে কী, সেটা দারুণ উপকারে লেগেছে।”

চলতি এশিয়াডের প্রথম সকালে শু্যটার জিতু রাইয়ের সোনার সাত দিনের মাথায় ভারতকে মাত্র দ্বিতীয় সোনার পদক শনি-সকালে তিরন্দাজ দল যদি এনে দেয়, তা হলে তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিন নম্বর সোনা জয়ের পিছনে এক বঙ্গসন্তানের হাত। স্কোয়াশে পুরুষদের দলগত বিভাগে ভারতের প্রথম এশিয়াড-সোনা জয় কলকাতার ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের (যদিও লিডসেই বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন!) সৌরভ ঘোষালের নেতৃত্বেই। টুর্নামেন্টের শীর্ষ বাছাই সৌরভ ফাইনালে শক্তিশালী মালয়েশিয়া দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্লেয়ার অং বেং হি-কে ম্যারাথন পাঁচ গেমে ৩-২ হারাতেই ভারত ২-০ ম্যাচের লিড নিয়ে সোনার পদক নিশ্চিত করে ফেলে। তার আগে সৌরভের তরুণ সতীর্থ হরিন্দর সিংহ সাঁধু চার বছর আগে গুয়াংঝৌ এশিয়াডে ব্যক্তিগত সোনাজয়ী মহম্মদ আজলানকে হারিয়ে চমকে দেন।

ব্যক্তিগত রুপো জেতার পর আজ দলগত সোনার পদক নিয়ে সৌরভ বলে দেন, “সিঙ্গলস ফাইনালে হারায় দলগত বিভাগের এই সোনাটা দেশকে দেওয়ার জন্য আমি মরিয়া ছিলাম। গোটা দলের জন্য আমি গর্বিত। পাশাপাশি একটু খারাপও লাগছে। ব্যক্তিগত সোনাটা অল্পের জন্য না ফস্কালে আজ আমার এবং আমার দেশের আরও একটা বেশি সোনার পদক পকেটে থাকত।”

সৌরভদের সোনা জয়ের পর দীপিকা পাল্লিকাল-জোৎস্না চিনাপ্পারা মেয়েদের দলগত স্কোয়াশ ফাইনালে মালয়েশিয়ার কাছেই হেরে রুপো পান। তিন হাজার মিটার স্টিপলচেজে ভারতের প্রতিবাদে সোনাজয়ী বাহরিন অ্যাথলিট টেকনিক্যাল কারণে বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রথমে ব্রোঞ্জজয়ী ললিতা বাবর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় আরও একটি রুপো এসেছে।

ভারতের এ দিনের বাকি ছ’টা পদকই ব্রোঞ্জ। শু্যটিংয়ে চেইন সিংহ, তিরন্দাজ তৃষা দেব ও মেয়েদের কম্পাউন্ড টিম, কুস্তিতে গীতিকা ঝাখর ও ভিনেশ ফোগাট আর অ্যাথলিট সুধা সিংহসবাই পদক-মঞ্চের তৃতীয় ধাপে উঠতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে ভারতের ঝুলিতে ৩ সোনা, ৫ রুপো ও ২০ ব্রোঞ্জ-সহ মোট ২৮ পদক।

আরও কমপক্ষে পাঁচটা ব্রোঞ্জ টেনিস কোর্ট থেকে নিশ্চিত। সিঙ্গলসে য়ুকি ভামব্রি, ডাবলসে য়ুকি-দ্বিবীজ, সাকেত-সনম, সানিয়া-প্রার্থনা আর মিক্সড ডাবলসে সানিয়া-সাকেত সেমিফাইনালে উঠে পদক রাউন্ডে ঢুকে পড়েছেন। বক্সিংয়ে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি কম-সহ তিন প্রতিযোগী কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন। টেবল টেনিসে শরথ কমলের পুরুষ দল এবং অঙ্কিতা দাসের মহিলা দল প্রাথমিক রাউন্ডে জিতে চলেছে। কায়াক ও ক্যানোয়িং-য়েও ফাইনালে ভারতীয়রা। এশিয়াডে ভারতের আলোর দিনে অন্ধকার শুধু ভলিবলে। শক্তিশালী চিনের কাছে ০-৩ গেমে হেরে মেয়েদের দল কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে যাওয়ায়!

শেষ চারে কোরিয়ার সামনে সর্দাররা

ভারতের সবচেয়ে ঝলমলে দিনে আলো ছড়াল হকিও। চিনকে ২-০ হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত করলেন সর্দার সিংহরা। তবে বিশ্বের ন’নম্বর ভারতকে তাদের চেয়ে আঠারো ধাপ পিছিয়ে থাকা চিনকে হারাতে যে ভাবে বেগ পেতে হল, সেমিফাইনালের আগে তা চিন্তায় ফেলতে পারে ভারতের কোচ টেরি ওয়ালশকে। প্রথম ৩০ মিনিট কোনও দলই গোল করতে পারেনি। আগের ম্যাচেই ১-২ পাকিস্তানের কাছে হারের পর শেষ চারে যেতে হল ভারতকে অন্তত ড্র করতে হত এ দিন। কিন্তু ভারতীয় ফরোয়ার্ডরা চিনা রক্ষণ ভেদ করতে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় দু’দলের মধ্যে ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিট কোনও পার্থক্যই ছিল না। সবচেয়ে হতাশাজনক ড্র্যাগ ফ্লিকার ভি আর রঘুনাথের পারফরম্যান্স। গোটা ম্যাচে পাঁচটা পেনাল্টি কর্নার পেলেও তার মধ্যে মাত্র একটি কাজে লাগাতে সফল হন তিনি। ওমান ম্যাচে চোট লাগার জন্য এ দিনও খেলতে পারেননি দ্বিতীয় ড্র্যাগফ্লিকার রুপিন্দর পাল সিংহ। রঘুনাথের পেনাল্টি ফস্কানোয় তাঁর অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠছিল। ঘরের মাঠে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকা কোরিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে ভারতকে কিছুটা আশা দিলেন বীরেন্দ্র লাকরা। আকাশদীপ সিংহের সঙ্গে ‘ওয়ান টু’ খেলে দুরন্ত গোলে দলকে এগিয়ে দেন বীরেন্দ্র। অন্য সেমিফাইনালে পাকিস্তান নামবে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। শেষ চারে এ বার কোরিয়াকে হারিয়ে সর্দাররা ফাইনালে উঠতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন