কাঞ্চনজঙ্ঘায় দেখা মুলারে মুগ্ধ শিলিগুড়ি

মেসি-ম্যাজিক মাথায় রেখেও আপাতত মুলারে বুঁদ শিলিগুড়িবাসী। চলতি বিশ্বকাপে মুলার এমনিতেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন। মঙ্গলবার ব্রাজিলের সঙ্গে জার্মানির চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্সের পরে অনেক ভারতীয়ই জার্মানির ভক্ত হয়েছেন। রাতারাতি হিরো হয়ে গিয়েছেন মুলার সহ গোটা জার্মান দল।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায় ও সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৪:৪৪
Share:

মেসি-ম্যাজিক মাথায় রেখেও আপাতত মুলারে বুঁদ শিলিগুড়িবাসী।

Advertisement

চলতি বিশ্বকাপে মুলার এমনিতেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছেন। মঙ্গলবার ব্রাজিলের সঙ্গে জার্মানির চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্সের পরে অনেক ভারতীয়ই জার্মানির ভক্ত হয়েছেন। রাতারাতি হিরো হয়ে গিয়েছেন মুলার সহ গোটা জার্মান দল। এ বারের বিশ্বকাপে পাঁচ গোল করে পরপর দু’টি বিশ্বকাপে পাঁচ গোল করার সতীর্থ মিরোস্লাভ ক্লোসের রেকর্ডও ছুঁয়েছেন। উচ্ছ্বাসটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিলিগুড়িবাসীর আবেগের জায়গাটা আর পাঁচটা ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের চেয়ে একটু আলাদা। তার কারণও রয়েছে।

পাঁচ বছর আগে শিলিগুড়ির মাঠে অনূর্ধ্ব ১৯ সেই ছেলেটার ছটফটে দৌড় এখনও চোখে লেগে রয়েছে শিলিগুড়ির ক্রীড়াপ্রেমীদের। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় বায়ার্নের গোটা দলের সঙ্গে সেদিনের উনিশের সদ্য যুবক টমাসের প্রতিভার আভাস পেয়েছিলেন অনেকেই। শিলিগুড়ি থেকে খেলে যাওয়ার পরের বছর বিশ্বকাপের জার্মানি দলে সুযোগ পেয়েই জাত চিনিয়েছিলেন। পেয়েছেন সোনার বুটও।

Advertisement

সেদিন খেলা ছিল বায়ার্ন মিউনিখের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সঙ্গে শিলিগুড়ি মেয়র একাদশের। মেয়র একাদশে খেলা শিলিগুড়ির মহানন্দা ক্লাবের লিটন শীলের এখনও সেই ঘোর কাটেনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই ধরা পড়ল মুগ্ধতা। বললেন, “বায়ার্নের সঙ্গে খেলেই বুঝতে পেরেছিলাম, ইউরোপীয় ফুটবল কেমন। মুলার সহ গোটা দলটাই অত্যন্ত গতিশীল ফুটবল খেলছিল। আমরা গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরেই পিছিয়ে পড়ি। মুলার তো তখনও গোটা দশেক শট নিয়েছিল গোলের দিকে। আমাদের গোলরক্ষক বিমান দক্ষতার সঙ্গে গোল না বাঁচালে সেদিন অনেক গোল খেতে হত আমাদের।” এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে ফেললেন সেদিনের মুলারের প্রতিপক্ষ।

সেদিন মাঠে থেকে খেলা দেখেছেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ জয়ব্রত ঘোষ। তিনি বলেন, “তখন মুলার বলতে আমাদের চোখে গার্ড মুলার। পরে ২০১০ এর বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ায় মুলারকে ভাল করে লক্ষ করেছিলাম। মিলিয়ে দেখছিলাম সামনে দেখা ছেলেটি কত উন্নতি করেছে। বলতে দ্বিধা নেই, মুলার নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছে।”

বায়ার্ন যে কদিন শহরে ছিল, দলের স্থানীয় ম্যানেজার ছিলেন মনোজ চক্রবর্তী। তিনিও আপ্লুত। মঙ্গলবারের জার্মান পরাক্রম রাত জেগে দেখেছেন। তাঁর মতে “মুলারের নেতৃত্বে জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হব না। কর্নার থেকে করা মুলারের প্রথম গোলটিই ব্রাজিলকে হতভম্ব করে দেয়। তারপর আর রুখে দাঁড়াতে পারেনি সাম্বার দেশ।” বায়ার্ন দলের স্মারক হিসেবে তাঁদের একটি জার্সি সযত্নে রেখে দিয়েছেন।

শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের তৎকালীন সচিব সমীরবিন্দু ধর নিজের হাতে গোটা খেলার আয়োজন করেছিলেন। তিনিও সেদিনের মুগ্ধ। তিনি বলেন, “সেদিন খেলা দেখেই বুঝেছিলাম, এ ছেলে অনেক দূর যাবে।” তাঁর ভবিষ্যতবাণী ফলে যাওয়ায় অবাক হননি সমীরবাবু।

ক্রীড়া পরিষদের বর্তমান সচিব অরূপরতন ঘোষ অবশ্য শুরু থেকেই জার্মানির হয়ে বাজি ধরেছিলেন। তাই তাঁর কাছে এই ফল অপ্রত্যাশিত নয়। মুলারকে নিয়েও তিনি বাড়তি উচ্ছ্বাসে নারাজ। তবে এই কাপে মেসি, রবেন ও মুলারকে একই আসনে রাখতে চান তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধারাবাহিকতায় মুলারই সেরা। পরপর দু’টি বিশ্বকাপে তিনি অনবদ্য। আর সামনে থেকে দেখেছি বলে আবেগ আরও বেশি।”

অজয়, বাপন, রণদীপদের নিয়েই তৈরি হয়েছিল শিলিগুড়ির মেয়র একাদশ। ইস্টার্ন রেলের ফুটবলার বাপন বেরার কথায়, “স্বপ্নের মতো লাগছে। অতবড় মাপের একজন ফুটবলারের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। মেসি, নেইমারদের মতো মূলারও তো এখন বিশ্ব ফুটবলের নজরে।” অজয় নাগের কথায়, “ওই স্মৃতি ভোলার নয়।”

শিলিগুড়ির দীপু বর্মন, লিটন শীল, অভিষেক ছেত্রী, সঞ্জিত কেরকাট্টা, নিশান টোপ্পো, অভিষেক ঠাকুরী এই ছয় জুনিয়র ফুটবলারকে জার্মানিতে গিয়ে কিছু দিন প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে অনুশীলনের মাঠেও সঞ্জিত, লিটনরা খেলেছেন মুলারের সঙ্গে। সঞ্জিত বলেন, “টিভির পর্দায় মুলারকে দেখলেই সে কথা আরও বেশি মনে পড়ে যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন