নতুন বছরে খারাপ দিন নর্ডির। ছবি: উত্পল সরকার
মোহনবাগান ১ (বোয়া)
পুণে এফ সি ১ (সুয়োকা পেনাল্টি)
সতীর্থরা সবাই চলে গিয়েছেন ড্রেসিংরুমে। মাথা নিচু করে রিজার্ভ বেঞ্চে একা বসেছিলেন সনি নর্ডি। যেমন দলের ব্যর্থতার পর গত তিন বছর বসে থাকতেন ওডাফা ওকোলি।
কাতসুমি আর বেলো একটু এগিয়ে গিয়েও ফিরে এলেন। দাঁড়ালেন সনির সামনে। মুখ তুললেন হাইতির স্ট্রাইকার। তার পর প্রশ্ন করলেন, “আমরা কি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলাম?” কাতসুমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, “এখনও সুযোগ আছে। পরের দু’টো ম্যাচ আমাদের জিততেই হবে।”
এর দু’মিনিট পর বাগান ড্রেসিংরুমের পাশের একটি ঘরে দেখা গেল করিম বেঞ্চারিফা হিন্দি গান করতে করতে টেবল বাজাচ্ছেন। নিশ্চিত হারা ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরলে যা হয়। তা-ও আবার যদি সেটা হয় বাগানের বিরুদ্ধে। “ট্যাকটিক্যাল ম্যাচ খেলে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছি আমরা। কলকাতায় যখন কোচিং করাতাম তখন বলতাম প্রথমার্ধটা ফুটবলারদের। দ্বিতীয়াধর্টা কোচের। সেটাই হয়েছে।” মরক্কান কোচের দাবি শুনে মনে হচ্ছিল সেই আপ্তবাক্যটা—ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে। পেনাল্টি পাওয়া তো আর স্ট্র্যাটেজি হতে পারে না।
করিমের টিম যখন দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টিটা পেল এবং সমতায় ফিরল, তার আগে গোলের নিশ্চিত সুযোগের হিসাব বলছে বাগান ৪: পুণে ১। ছাব্বিশ থেকে ছত্রিশ দশ মিনিটে বাগান যে সুযোগ পেয়েছিল তাতে সনি-বোয়ার যুগলবন্দিতে গোল ছাড়াও ম্যাচটা তখনই শেষ হয়। বোয়ার হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল। গতবার ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন চার্চিল ব্রাদাসের্র মতো বলবন্ত সিংহের নতুন জার্সিতে নায়ক হওয়ার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু সেই ম্যাচটাই রং বদলাল বাগানের সৌভিকের হাতে পুণের এরিকের শটটা লাগার পর। সুয়োকার পেনাল্টি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের আশঙ্কাও জাগিয়ে তুলল বাগান শিবিরে। পেনাল্টি সব সময়ই অঘটন, তাত্ক্ষণিক ভুল থেকে হতেই পারে। কিন্তু যে বাগান সেমিফাইনালে উঠতে চায় তাদের ১-১ হওয়ার পর যে তুফানটা তোলা উচিত সেটা কেন হল না? জবাবে “আমি আর অত নীচে থেকে খেলব না। মার্কিং-এ পড়ে যাচ্ছি। ভাবছি কোচকে বলব আমাকে উইথড্রল খেলান। গোল করতে চাই”, বলতে বলতে হোটেলের দিকে পা বাড়ান সনি।
করিম বনাম বাগান মানেই এখন একটা অন্য মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে ম্যাচ। সেখানে ট্যাকটিকাল ঝনঝনানির চেয়েও দেখা যাচ্ছে আবেগ। বাগান-কোচ সঞ্জয় সেন সেই সুড়সুড়িটা দিয়েছিলেন টিম মিটিংয়ে। বলেছিলেন ভুটানের কিঙ্গ কাপে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার কথাও। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত করিম-বধ করতে পারেননি লালকমল-শিল্টনরা। বাগান খারাপ খেলেছে এটা লেখা যাচ্ছে না। ‘আমার টিম তিন গোলে জিতত’ করিমের এই দাবিকেও মানা যাচ্ছে না। ভাস্কোর তিলক ময়দানে সঞ্জয়ের টিমের দু’টো ম্যাচ দেখে একটা কথাই বলা যায়, গোল না পেলে ভাল খেলার কোনও যে নম্বর নেই। উইং প্লে থেকে মাঝমাঠে বল ধরে আক্রমণ সংগঠন, রক্ষণ মজবুত থেকে গোলের জন্য ঝাঁপানোসব, সব হচ্ছে। কিন্তু গোলটাই হচ্ছে না বাগানে। কাতসুমি বা জেজে শেষ দিকে যে দু’টো সুযোগ নষ্ট করলেন তা দেখেই সম্ভবত ফেসবুকে এক বাগান সমর্থক দেখলাম লিখেছেন, “ভাস্কোর মাঠ থেকে সেমিফাইনালে উঠতে গেলে আমাদের একজন ভাস্কো দা গামা দরকার। যে গোলটা আবিষ্কার করবে।”
কিন্তু সেটা কে হতে পারে? সনি নর্দি, বোয়া না অন্য কেউ। কিন্তু মোহনবাগান যে ফমের্শনে খেলছে তাতে স্ট্রাইকারে খেলছেন ভারতীয়রাই। হয় বলবন্ত নয় জেজে বা সাবিথ। ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বাগান কোচ বলছিলেন “যাদের খেলাচ্ছি তারা তো আইএসএলে ভাল খেলে এসেছে। গোল না করতে পারলে আমি কী করব?” বেঙ্গালুরুর পর পুণেজেতা ম্যাচ বাগানের হাতছাড়া হয়ে গেল শুধু তেকাঠিতে বল ঢোকাতে না পেরে। দু’ম্যাচে দু’পয়েন্ট। পাঁচ ম্যাচের গ্রুপে বাগান রয়েছে তিন নম্বরে। সনি-বোয়াদের পরের দু’টো ম্যাচ সালগাওকর এবং শিলং লাজংয়ের সঙ্গে। পরিস্থিতি যা তাতে দু’টো ম্যাচই জিততে হবে শেষ চারে যেতে গেলে।
সাড়ে চার বছর ট্রফি নেই বাগানে। ক্লাবে নানা ডামাডোল। পরিস্থিতি যা, তাতে বাগান না ড্র করতে করতেই বিদায় নেয়। আটলেটিকো দে কলকাতা আইএসএলে অর্ধেকেরও বেশি ম্যাচ ড্র করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাগান যদি সেটা পারে তা হলে কিন্তু বড় অঘটন হবে।
মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, বেলো, আনোয়ার, সৌভিক, সনি, লালকমল (সৌভিক চক্রবর্তী), ডেনসন, কাতসুমি, বোয়া (সাবিথ), বলবন্ত (জেজে)।