কলকাতার নাম শুনলেই এই মূহূর্তে তাঁর গলার স্বর বদলে যাচ্ছে!
নিজেকে প্রমাণ করার একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জও যেন চলে আসছে সামনে!
দেখিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে জাগে, তাঁর ক্ষমতা কতটা।
তিনি ডুডু ওমাগবেমি!
নাইজিরিয়ান গোল মেশিনের ক্ষোভের অগ্নুৎপাত ছিটকে ওঠার কারণও যথেষ্ট। গত বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলার পর নতুন মরসুমে ছাঁটাই। এ বছর ফেরা মোহনবাগানে। কলকাতা লিগ খেলার পর ফের বাতিলের তালিকায়। তার পর আটলেটিকো দে কলকাতার সঙ্গে পাকা কথা হয়ে যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে তাঁকে বাতিল করে দিয়েছিলেন আন্তোনিও হাবাস।
বাতিলের ঠোক্কর খেতে খেতে শেষে আইএসএলের দল গোয়া এফ সি-তে সই। এবং নেমে প্রথম ম্যাচেই জিকোর টিমের হয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া হ্যাটট্রিক। তাও আবার মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী টিমের বিরুদ্ধে।
সেই ডুডু এ বার আটলেটিকো দে কলকাতার মুখোমুখি। রবিবার যুবভারতীতে।
গোয়া থেকে কলকাতায় আসার চব্বিশ ঘণ্টা আগে নাইজিরিয়ান গোলমেশিন বৃহস্পতিবার ফোনে বলে দিলেন, ‘‘কলকাতার সঙ্গে বহু ভাল-মন্দ স্মৃতি আছে আমার। অস্বীকার করব না কলকাতার কথা উঠলে আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়িও। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার একমাত্র লক্ষ্য, গোয়ার জার্সিতে কলকাতাকে হারানো। শেষ চার আরও নিশ্চিত করা। আমি তো পেশাদার। পেশাদাররা সব ম্যাচ জিততে চায়। আমিও চাই।’’
অনেক কথা না বলেও বলে দেওয়া। ঘুরিয়ে চ্যালেঞ্জ না নিয়েও নেওয়া। বোঝা যায়, যখন তিনি ফোনে হাসতে হাসতে বলে দেন, ‘‘জিততে তো চাই-ই। তবে নিজে গোল করে জিততে পারলে কার না ভাল লাগে।’’
রবিবার ম্যাচ। তাই শুক্রবার বিকেলেই শহরে চলে আসছে জিকোর গোয়া। আগের ম্যাচেই সুনীল-সুব্রত পালদের সাত গোল দিয়ে যাঁরা হইচই ফেলে দিয়েছে। গড়েছে ইতিহাস। হাওকিপদের সঙ্গে এখন ডুডু-ও যে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন হাবাসের।
ডুডু বলছিলেন, ‘‘আটলেটিকোর সঙ্গে পাকা কথা হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত ওরা দলে না নেওয়া হওয়ায় কিছুটা হতাশ-ই হয়ে পড়েছিলাম। তবে ফুটবলারদের জীবনে ওঠাপড়া তো স্বাভাবিক। এফসি গোয়া আমাকে নিজেকে প্রমাণ করার যে সুযোগটা দিয়েছে, সেটা পুরো কাজে লাগাতে চাই। কলকাতাতেই প্রমাণ করতে হবে, ডুডু এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তাকে যাঁরা বাতিল করেছে তারা ভুল করেছে,’’ কথাগুলো বলার সময় একরাশ অভিমান ধরা পড়ে তাঁর গলায়। সঙ্গে জেদও।
কথা বললেই বোঝা যায়, শুধু হাবাসের টিম নয়, রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় একসঙ্গে অনেক ম্যাচ জিততে নামছেন গোয়ার নতুন স্ট্রাইকার। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসাবে হাজির যেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানও।
গোয়ার হয়ে আইএসএলের প্রথম ম্যাচে নেমেই হ্যাটট্রিক। রবিবার যুবভারতীতেও কি আবার ডুডু-ঝড় উঠবে? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন তিনি। মজা করে বললেন, ‘‘ঝড় না এসে তুমুল বৃষ্টিতেও তো কলকাতা ভেসে যেতে পারে!’’ পরক্ষণেই আবার সিরিয়াস। পেশাদারি কায়দায় বলে দিলেন, ‘‘আমাকে তো সেরাটা দিতেই হবে। তবে আমার কাছে গোয়ার জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। একা আমি নই, গোয়ার প্রত্যেকেই ভাল ছন্দে রয়েছে। আমরা টিম গেম খেলছি।’’
মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল প্রসঙ্গ উঠলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বলে দিচ্ছেন, ‘‘এখন আমি আইএসএলের টিম এফসি গোয়ার ফুটবলার। তাই অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলাটা ঠিক নয়।’’ তবে মোহনবাগান থেকে বাদ পড়ার পর তাঁর ফেরার জেদ বেড়ে গিয়েছিল স্বীকার করলেন। এতটাই যে, ফিনল্যান্ডে ফিরে গিয়ে কঠোর অনুশীলনে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে। ‘‘ফিনল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পর আমি কিন্তু বসে থাকিনি। নিয়মিত অনুশীলন করেছি। জিমে গিয়েছি। নিজেকে ফিট রেখেছি। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা দিয়েছে গোয়া। ওদের জন্য জান লড়িয়ে দেব।’’ এর সঙ্গেই যোগ করলেন, ‘‘জানি একটা ম্যাচই শেষ নয়। আরও ভাল খেলতে হবে। সব ম্যাচেই সেরাটা দিতে হবে।’’ গোয়ার শেষ চারে যাওয়া কার্যত পাকা। ১০ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন লিগ টেবলের শীর্ষে। তবে জিকোর টিমের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার মনে করছেন, ‘‘এখনও আরও ছ’পয়েন্ট পেলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত। আমরা বাকি চার ম্যাচ জিতেই সেমিফাইনালে যেতে চাই। সেই বার্তাই টিম মিটিং-এ দিয়েছেন আমাদের কোচ।’’ আটলেটিকোর খেলা দেখছেন? ‘‘নিশ্চয়ই দেখছি। আইএসএলে সব ম্যাচই দেখার চেষ্টা করছি। আর আটলেটিকো তো বেশ ভাল খেলছে। কঠিন প্রতিপক্ষ। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’’ কিন্তু হাবাসের টিমের রক্ষণ তো প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল খাচ্ছে? নড়বড় করছে। এটা তো ডুডুর পক্ষে বিরাট সুবিধা? প্রশ্ন শুনে ইউরোপে খেলে আসা চতুর স্ট্রাইকারের মন্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে কিছু বলব না। ডুডু তো একা খেলবে না। সবাই খেলবে। গোয়া এ বার যথেষ্ট ব্যালান্সড টিম। গোল করার অনেক লোক।’’