‘গো গোল্ড’ গর্জনে মুছে গেল বার্মি আর্মির গান

তেইশ বছর বাদে সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নেমে প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্টের পৃথিবীজোড়া দর্শকদের দু’টো সহজ বার্তা দিয়ে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। কী সেই জোড়া বার্তা? এক) ফিঞ্চ-ম্যাক্সওয়েলরা এ বার তাঁদের মহাদেশের যেখানে খেলতে যাবেন, সেখানেই মাঠ ভরে তুলবেন ব্যাগি গ্রিনের সমর্থকেরা। ‘গো গোল্ড’ ধ্বনি আজ এমসিজি ঠাসা ৮৪ হাজার ৩৩৬ জন দর্শক যে ভাবে সারাক্ষণ তুমুল ভাবে দিয়ে গেলেন!

Advertisement

চেতন নারুলা

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯
Share:

বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেঞ্চুরি। শনিবার মেলবোর্নে ফিঞ্চের লাফ। ছবি: এএফপি

তেইশ বছর বাদে সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপে নেমে প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্টের পৃথিবীজোড়া দর্শকদের দু’টো সহজ বার্তা দিয়ে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

Advertisement

কী সেই জোড়া বার্তা?

এক) ফিঞ্চ-ম্যাক্সওয়েলরা এ বার তাঁদের মহাদেশের যেখানে খেলতে যাবেন, সেখানেই মাঠ ভরে তুলবেন ব্যাগি গ্রিনের সমর্থকেরা। ‘গো গোল্ড’ ধ্বনি আজ এমসিজি ঠাসা ৮৪ হাজার ৩৩৬ জন দর্শক যে ভাবে সারাক্ষণ তুমুল ভাবে দিয়ে গেলেন!

Advertisement

দুই) টিম অস্ট্রেলিয়াকে এ বার টুর্নামেন্টের প্রথম দিন থেকেই পঞ্চম বিশ্বখেতাব তোলার জন্য মরিয়া দেখাচ্ছে! জর্জ বেইলির দল আজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডকে যে ভাবে ১১১ রানে দুরমুশ করল! আগাগোড়া ম্যাচে প্রভুত্ব দেখিয়ে।

বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশেই সেঞ্চুরি করা অস্ট্রেলীয় ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ তো ম্যাচোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে সটান সেটা বলেও গেলেন। “হ্যাঁ, আমরা টুর্নামেন্টের প্রথম দিনই পরিষ্কার করে দিলাম যে, এ বার নিজের দেশে আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই। যেটা তেইশ বছর আগে হয়নি।” ফিঞ্চের আজকের ১৩৫ তাঁর কেরিয়ারের সপ্তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি হলেও, সেটা একে বিশ্বকাপে, তার উপর আবার নিজের পাড়ায় ঘটায়, তিনি শতরানে পৌঁছতেই মেলবোর্নের মাঠের গর্জন যেন গোটা অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল!

মুগ্ধ ফিঞ্চ ম্যাচ শেষে সেই প্রসঙ্গে বলছিলেন, “ওই মুহূর্তটা আমার বাকি জীবন ভুলব না। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সামনে জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই সেঞ্চুরি করাটা সোজা কথায় গ্রেট ব্যাপার।” ম্যাচের প্রথম ওভারেই মাত্র দু’রানে ক্রিস ওকসের হাতে জীবন পাওয়ার কালা মুহূর্ত দিনের শেষে যেন মনেই রাখতে চাইলেন না ম্যাচের নায়ক ফিঞ্চ।

অথচ টস জিতে ইংল্যান্ড ফিল্ডিং নেওয়ার পর সাততাড়াতাড়ি দুরন্ত ফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভন স্মিথ-সহ তিন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানকে যখন প্যাভিলিয়নে ফেরার রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিল, তখন বিশালাকার এমসিজির একটা কোণ থেকে খুব জোরে না হলেও বার্মি আর্মির গান শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু ফিঞ্চ জর্জ বেইলিকে নিয়েই কিনা পরের কুড়ি ওভারে ১৪৬ রানের অনবদ্য পার্টনারশিপ গড়ে গেমচেঞ্জার-এর কাজটা সেরে ফেললেন! অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং-কেকের উপর এর পরে ক্রিমটা মাখিয়ে গেল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ৪০ বলে ৬৬। যার জেরে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি (৩৪২) পৌঁছয়।

ইয়ন মর্গ্যানের দলে তো কোনও বোথাম বা পিটারসেন নেই। শুধু জেমস টেলর যা একটু চেষ্টা করলেন। বাকি ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা সবাই ধরাশায়ী। ম্যাচের শেষ বলে আম্পায়াররা ভুল না করলে হয়তো টেলরের সেঞ্চুরিটাও হয়ে যেত। হ্যাজলউডের শেষ বলে দু’বার আউট দেন আম্পায়াররা। প্রথমে টেলরের বিরুদ্ধে এলবিডব্লু-র আবেদনে আঙুল তুলে দেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার। ঠিক তখনই ম্যাক্সওয়েল যখন উল্টোদিকের স্টাম্প ভেঙে দেন, তখন অ্যান্ডারসন ক্রিজের বাইরে। রান আউটের আবেদনও হয়। রিভিউয়ে দেখা যায় টেলর এলবিডব্লু ছিলেন না, কিন্তু অ্যান্ডারসন রান আউট ছিলেন। তাই অ্যান্ডারসনকেই আউট ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। ভুল এটাই। পরে আইসিসি তা স্বীকারও করে নেয়। তাদের বক্তব্য, ডিআরএস-এর অ্যাপেন্ডিক্স ৬-এ ৩.৬এ ধারা অনুযায়ী আউট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বল ডেড হয়ে যায় এবং তার পর আর কোনও আউট বা রান হয় না। অর্থাত্‌ ওই বলে কেউই আউট ছিলেন না।

ওই দুপুরের দিকটায় বার্মি আর্মির একটু গানটানের পর মেলবোর্নের মাঠে বিকেল থেকে রাত সারাক্ষণ ‘গো গোল্ড... গো গোল্ড’ শব্দব্রহ্ম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন