বিশ্বকে চিরবিদায় জানানোর জন্য আলফ্রেদো দি’স্তেফানো কি অভিমান করে বিশ্বকাপ চলার সময়টাই বেছে নিলেন? সোমবার তাঁর হৃদরোগে মারা যাওয়ার খবর শুনে এ রকমটাই মনে হচ্ছিল।
সত্যি কি না, কোনও দিন আর জানা যাবে না। কিন্তু কী অদ্ভুত কাকতালীয়! ঠিক যেমন তিন-তিনটে দেশআর্জেন্তিনা, কলম্বিয়া, স্পেনের হয়ে খেলা সত্ত্বেও দি’স্তেফানো কোনও দিন বিশ্বকাপ খেলেননি! সেটাও আমার কাছে কাকতালীয়! যেন কখনও বিশ্বকাপ খেলতে না পারার অভিমানে বিশ্বকাপের ভরা বাজারে চলে গেলেন বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের ব্র্যাকেটে থাকা এক মহান প্লেয়ার!
বছর কয়েক আগে কলকাতায় এসেছিলেন সেপ ব্লাটার। ফিফা প্রেসিডেন্টের কাছে সে দিন বিনম্র ভাবে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি বিশ্ব ফুটবলের প্রধান। আপনার মতে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? পেলে, না মারাদোনা? ব্লাটার হেসে বলেছিলেন, ওদের কেউই নয়। আলফ্রেদো দি’স্তেফানো। শুনে মনে-মনে ভালই লেগেছিল। আমার খেলোয়াড়জীবনের দিনগুলোর দি’স্তেফানো-স্মৃতি উস্কে দেওয়ার জন্য।
সেই পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে দি’স্তেফানোর রিয়াল মাদ্রিদ তখন টানা পাঁচ বার ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে যা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতছে! সেই অদ্বিতীয় পঞ্চপাণ্ডব দি’স্তেফানো-পুসকাস-জেন্তো-ডিডি-ফ্রাঙ্ক দি’মারিয়ার রিয়াল। যতটুকু বিদেশি স্পোর্টস ম্যাগাজিন-টিন হাতে আসত তখন, দি’স্তেফানো নিয়ে যা থাকত, গিলতাম! আর যতটা সম্ভব তাঁকে অনুকরণের চেষ্টা করতাম। তখন থেকেই আমার অতি প্রিয় ফুটবলার দি’স্তেফানো।
ফুটবল মাঠে দি’স্তেফানো ফোর-ইন-ওয়ান! সর্বোচ্চ মানের পাসার, ড্রিবলার, ট্যাকলার এবং অবশ্যই গোলস্কোরার। বল কন্ট্রোলে তো তুখোড় বটেই। আমার মতে ফুটবলের সারকথা; ড্রিবলিং আর বল কন্ট্রোল। সর্বোচ্চ মানের ড্রিবলিং দক্ষতা না থাকায় তাই রোনাল্ডো আমার মতে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকায় আসবে না। যেখানে পেলে, মারাদোনা, দি’স্তেফানো, মেসি, জিদান... আছে। আর দি’স্তেফানো-পুসকাস আমার মতে ফুটবলে সর্বকালের ভয়ঙ্করতম ফরোয়ার্ড জুটি। রিয়ালের সেই সোনার সময়ে দি’স্তেফানো আর পুসকাস পাল্লা দিয়ে গোল করতেন। দি’স্তেফানো একটা গোল দিলে পরের গোলটাই পুসকাসের। শ্রেষ্ঠত্বের একটা সুস্থ লড়াই ছিল দু’জনের মধ্যে। সঙ্গে ছিল একের অপরের প্রতি শ্রদ্ধাও।
অষ্টাশি বছরে মৃত্যু মানে পূর্ণ বয়সে চলে যাওয়া। তবে ওই যে বললাম, চলে যাওয়ার সময়টা যেন অভিমান করেই বেছে নিলেন আলফ্রেদো দি’স্তেফানো!
আলফ্রেদো দি’স্তেফানো
জন্ম: ৪ জুলাই ১৯২৬
মৃত্যু: ৭ জুলাই ২০১৪
জন্মস্থান: বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্তিনা
পজিশন: ফরোয়ার্ড ডাক নাম ব্লন্ড অ্যারো
ক্লাব ফুটবলে: রিয়াল মাদ্রিদে ১১ বছর। টানা পাঁচ বার ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতেছেন। ৮টি লা লিগা খেতাব। মোট ১৫ ট্রফি।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে: আর্জেন্তিনার হয়ে ১৯৪৭ সালে কোপা আমেরিকা জিতেছেন। টাকার অভাবে কলম্বিয়ান লিগের মিলিওনেয়ারস ক্লাবে সই করতে হয় তাঁকে। যে কারণে কলম্বিয়ার জার্সিতে খেলতে হয়। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ আবার স্পেনের হয়ে খেলেন।
কোচিং জীবন: রিয়াল মাদ্রিদ কোচ ১৯৮২-৮৪, ১৯৯০-৯১। জেতেন কোপা দেল রে, ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ।