এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে খেলতে যাওয়ার আগে আটলেটিকোর দুই তারকা ফিকরু ও বোরহা। বুধবার দমদম বিমানবন্দরে।
জিকোর টিমকে গোল দিয়ে গোয়ায় সমারসল্ট দিতে পারবেন কি?
সকাল সওয়া আটটা। বাইপাসের ধারের টিম হোটেল থেকে বিমানবন্দরগামী বাসে উঠতে গিয়ে জনৈক হোটেল কর্মীর প্রশ্ন শুনে হেসেই অস্থির আটলেটিকো দে কলকাতার গোলমেশিন ফিকরু তেফেরা।
ফিকরুর উত্তর পাওয়া না গেলেও এফ সি গোয়া-র দ্রুতগতির ব্রাজিলীয় লেফট উইংব্যাক আন্দ্রে সান্তোস প্রসঙ্গ উঠতেই ফোঁস করে উঠলেন দিল্লি ডায়ানামোস ম্যাচে দেল পিয়েরোকে বহুবার সফল ট্যাকল করা আটলেটিকো ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডল। “সান্তোসের জন্য আমাদের কোচ নিশ্চয়ই কিছু পরামর্শ দেবেন আমাকে আর হোসেমিকে। তবে সান্তোস বা রবার্ট পিরেসের সঙ্গে র্যান্টিও কিছু কম নয়। একে ওর বহু দিনের চেনা গোয়ার মাঠে খেলা। তার উপর ভারতীয় ফুটবলে প্রায় এক দশক খেলার অভিজ্ঞতা।”
তার মানে আই লিগের সাম্প্রতিক সেই ছবি— গোয়ায় গেলেই কলকাতার ছন্দপতন, সেটাই আইএসএলেও বৃহস্পতিবার দেখার আশঙ্কা! আগের সন্ধেয় গোয়ায় সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যন্ত সে কথা উঠতেই আটলেটিকো দে কলকাতার লেস্টার ফার্নান্দেজের মুখ রাগে লাল। “ভুলে যাচ্ছেন, ওটা আই লিগ। এটা আইএসএল। কে নেই আর কে আছে ও সব ভাবছিই না।”
তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে হাবাসের কলকাতা আইএসএল টেবিলের শীর্ষে। সেখানে এখনও জয়ের মুখ দেখেননি ডেম্পো ফুটবলারে অধ্যুষিত জিকোর গোয়া দল। দু’ম্যাচে এক পয়েন্ট মাত্র। কিন্তু গোয়ার মাঠে এফসি গোয়াকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় ফেরা আর সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ শিকার যে একই জিনিস তা ভালই জানেন কেভিন লোবোরা। এবং তাঁদের থেকে এত দিনে জেনে ফেলেছেন বোরহা, হোফ্রে, হোসেমিরা।
হ্যামস্ট্রিং চোটে মার্কি ফুটবলার লুই গার্সিয়া নেই। দেশের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশ ফিরে গিয়েছেন মামুনুল। কার্ড সমস্যায় বাইরে রাকেশ মাসি। এই অবস্থাতেও কি ম্যাচ বার করা যাবে? সঞ্জু প্রধান বলছেন, “কেন যাবে না? নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক খেলতে পারলে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরব। আর জিকো নিজে তো মাঠে নামবেন না!”
আটলেটিকোর কোচ আন্তোনিও হাবাস।
টিম ম্যানেজার পর্যন্ত বলছেন, আটলেটিকো চাপে নেই। কিন্তু রজত ঘোষদস্তিদাররা মুখে চাপ নেই বললেও চাপ আছে। সেই চাপ— আহত গার্সিয়াকে নিয়ে। ফিকরুকে বল বাড়াবেন কে? আটলেটিকোর তিন ম্যাচে ছ’গোল হওয়ার পিছনে বেশির ভাগ ফাইনাল পাসই গার্সিয়ার। গোয়ার মাঠে তিনি নেই। এ দিন সন্ধেয় গোয়ার মাঠে অনুশীলনে লোবোকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাটাতে দেখা গিয়েছে কোচ হাবাসকে। সূত্রের খবর, মারগাওয়ে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে লোবোরই গার্সিয়ার বদলি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে হোফ্রের সঙ্গে স্কিমারের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন লোবো।
র্যান্টির গোলের জন্য ছোঁকছোঁকানি, মাঝমাঠে বিশ্বকাপজয়ী রবার্ট পিরেসের বিপুল অভিজ্ঞতার সঙ্গে পর্তুগিজ এডগার মার্সেলিনহোর গতি এবং স্কিল যে কোনও মুহূর্তেই ম্যাচের রাশ গোয়ার হাতে এনে দিতে পারে। সঙ্গে চেক ইয়ান সেদার চোখধাঁধানো গোলকিপিং। এবং সবার উপরে জিকোর মগজাস্ত্র। এফসি গোয়ার মহাতারকা কোচ এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গিয়েছেন, “কলকাতার টিমে গার্সিয়া নেই বলে আমাদের অ্যাডভান্টেজ কে বলল? ম্যাচটা তো এগারো বনাম এগারো।”
সান্তোস, পিরেসদের ডিফেন্সিভ থার্ডে আটকাতে হোসেমির নেতৃত্বে কলকাতা রক্ষণের লক্ষ্য একটাই— নো ফাউল, নো রিবাউন্ড। অর্থাত্ স্কোরিং জোনে সেট পিস কিংবা সেকেন্ড বল কোনওটাই দেওয়া যাবে না প্রতিপক্ষকে। আর গোয়ার ফরাসি ডিফেন্ডার আর্নোলিন, নারায়ণ দাসদের টপকে গোল করে আসতে ভরসা সেই বলজিত্, ফিকরুদের যুগলবন্দিই।
টিম সূত্রে খবর ড্রেসিংরুমে নিজের তিনটে আঙুল তুলে ফিকরু ইদানীং তর্জনী আর অনামিকা দেখিয়ে বলে থাকেন, “এটা মেসি আর এটা রোনাল্ডো।”
আর মধ্যমাটা? “ওটা তো আমি। ফিকরু তেফেরা।”
মাণ্ডবীর তীর থেকে আটলেটিকো কলকাতার সেই মধ্যমা-র গোল করে দলকে জিতিয়ে আনার আরও একটা বড় মোটিভেশন রয়েছে। মেসি-রোনাল্ডোর বাইরেও।
জিকোর সামনে পারফর্ম করা!
মারা গেলেন এটিকে সমর্থক
আটলেটিকো দে কলকাতার খেলা দেখতে এসে আর বাড়ি ফেরা হল না ব্যান্ডেলের শুভদীপ কোলের। রবিবার যুবভারতীতে লুই গার্সিয়াদের খেলা দেখতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই ফুটবল সমর্থক। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বছর পঁচিশের এই ফুটবল সমর্থককে ভর্তি করা হয়েছিল বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বাহাত্তর ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর এ দিন দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে আটলেটিকো শিবিরে। আটলেটিকো ম্যানেজমেন্টের তরফে প্রয়াত শুভদীপের মায়ের হাতে এক লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিন।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস