শহরের এক স্কুলে বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে নিজস্বী ব্রুস বাওয়েনের। ছবি: উত্পল সরকার
ছ’ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা। আবির্ভাবেই দু’হাত জড়ো করে পরিষ্কার ভারতীয় কায়দায় নমস্কার করে স্বাগত জানালেন সবাইকে!
কে বলবে, এক সময় কোবি ব্রায়ান্ট, মাইকেল জর্ডানদের মতো কিংবদন্তি বাস্কেটবলারদের কোর্টে আটকানোর দায়িত্ব নিতে হত এই ছ’ফুট সাত ইঞ্চিকেই।
তিনি— তিনবারের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন সান অ্যান্টোনিও স্পার্স-এর তারকা ব্রুস বাওয়েন।
তিনি— এনবিএ-র ইতিহাসে সেরা লকডাউন ডিফেন্ডারদের অন্যতম।
তিনি— কলকাতায় আসা প্রথম এনবিএ তারকা।
প্রাক্তন মার্কিন বাস্কেটবলার বাওয়েন হাসি মুখে শুক্রবারটা শহরে কাটালেও তাঁর কথায় ধরা পড়ল এখানে তিনি কেবল বেড়াতেই আসেননি। এসেছেন এখানে প্রচারের অন্ধকারে পড়ে থাকা বিশ্বব্যাপী এক জনপ্রিয় খেলার উন্মাদনা ছড়াতে।
কিন্তু ক্রিকেট-শাসিত কোনও দেশে কি বাস্কেটবলের উন্মাদনা তৈরি সম্ভব? যে প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজারকে একান্তে বাওয়েন বললেন, “কে বলল ক্রিকেটের উন্মাদনা কমাতে এসেছি? ক্রিকেট থাক না ভারতের এক নম্বর খেলা হয়ে। আমার ইচ্ছা ক্রিকেটের মতো বাস্কেটবলও খেলে আনন্দ পাক ভারতীয়রা। আর্জেন্তিনাও তো শুধু ফুটবল খেলার জন্যই পরিচিত। কিন্তু ওরাও তো দু’হাজার চার অলিম্পিকে বাস্কেটবলে সোনা জিতেছিল।”
ইপিএল, লা লিগার মতো এনবিএ-ও এখন ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের আগ্রহে। স্পোর্টস চ্যানেলে এনবিএ-র প্রতিটা ম্যাচ সরাসরি দেখতে পাচ্ছে এ দেশের আধুনিক প্রজন্ম। বাওয়েনও সেটাই বললেন। “লেব্রন জেমস, কোবি ব্রায়ান্টের মতো বিশ্বের সেরা বাস্কেটবলারদের খেলা সরাসরি টিভিতে দেখতে পাচ্ছে ভারতের তরুণ প্রজন্ম। যখন লেব্রন স্ল্যাম ডাঙ্ক মারে তখন নিশ্চয়ই ওদের মধ্যেও ইচ্ছা জাগে, আমরাও সুযোগ পেলে পারব এ রকম করতে। আমার বিশ্বাস, ভারতে অনেকেই বাস্কেটবল ভালবাসে। কিন্তু ওরা খেলতে সাহস পায় না। কারণ কেউ উত্সাহ জোগায় না বলেই।”
‘এনবিএ জ্যাম’-এর প্রচারে শহরে এসেছেন বাওয়েন। যে টুর্নামেন্ট হতে চলেছে ভারতের সেরা কলেজ বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট। দেশের প্রতিটা নামী কলেজ থেকে তিন জন খেলোয়াড় দিয়ে গড়া হবে দল। আঞ্চলিক পর্বে ফাইনালে উঠবে যারা, তারা আবার জাতীয় পর্যায়ে খেলতে পারবে। এ দিন টুর্নামেন্টের সূচনায় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের বাস্কেটবল কোর্টে এসে পাঁচ বছর আগে এনবিএ থেকে অবসর নিয়ে ফেলা বাওয়েন রীতিমতো নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন। কোর্টে ঢুকে প্রথমেই বাস্কেটবল নিয়ে ফ্রি থ্রো করলেন। উপস্থিত থাকা খুদে বাস্কেটবলারদেরই চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন দূর থেকে বাস্কেট করার। থ্রো নেওয়ার পরে প্রতিযোগীদের বুঝিয়েও দিলেন কার কী ভুল হচ্ছে। কী ভাবে আরও ভাল থ্রো করা যায়।
কলকাতায় প্রায় দুশোর বেশি বাস্কেটবলারের এই টুর্নামেন্টে রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় বাওয়েন জানালেন, কোনও সন্দেহ নেই তৃণমূল স্তরে খেলাটার প্রতি ভালবাসা আছে এই শহরে। শুধু তা সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। “এক সময় বিশ্বে শুধু আমেরিকারই একক আধিপত্য ছিল বাস্কেটবলে। গত কয়েক বছরে ইউরোপ থেকে অনেক কোচ যুক্তরাষ্ট্রে আসছে ট্রেনিং নিতে। নিট ফল, টোনি পার্কার, পাও গ্যাসলের মতো ইউরোপিয়ান প্রতিভাও দেখতে পাচ্ছি। আমি চাই ভারতীয় বাস্কেটবল কোচেরাও আসুক আমেরিকায়। ভাল করে ট্রেনিং নিয়ে যাক। তবেই তো তারা ভাল প্রতিভা তুলে আনবে এ দেশে।”
ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম বাস্কেটবলার সিম ভুল্লার এনবিএ-র নতুন মরসুমে সই করেছেন স্যাক্রামেন্টো কিংসে। যা ভারতীয়দের আরও উদ্বুদ্ধ করবে যে, ভুল্লার পারলে আমরা কেন পারব না, সেই কথাই জানালেন প্রাক্তন এনবিএ চ্যাম্পিয়ন বাওয়েন।
কেরিয়ার জুড়ে বস্টন সেল্টিক্স, মায়ামি হিটের মতো নামী দলগুলোতেও খেলেছেন। পাঁচ বার সেরা ডিফেন্সিভ দলে থেকেছেন। এত বছরের কেরিয়ারে কোন কিংবদন্তির বিরুদ্ধে খেলা সবচেয়ে কঠিন ছিল? “কোবি ব্রায়ান্ট। লোকটাকে আমার সহ্য হত না। কোর্টে নামলেই ওর সঙ্গে ঝামেলা করতাম। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে ততই ওর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে আমার। কারণ প্রতি মরসুমেই দেখতাম ও আরও উন্নতি করেছে। আর এক জন অবশ্যই মাইকেল জর্ডান। আমি ভাগ্যবান, বস্টনে থাকার সময় জর্ডানের শিকাগো বুলসের বিরুদ্ধে খেলেছি। সামনে থেকে দেখে বুঝেছিলাম কেন বাস্কেটবলের ইতিহাসে ও সেরার সেরা। ওর গতি। যারা জর্ডানের খেলা দেখেনি তাদের জন্য আমার খারাপই লাগে!”