টিকিট নেই, বাবাইকে এখন দুঃখ ভোলাচ্ছে সাও পাওলোর রেস্তোরাঁ

ব্রাজিলে বিশ্বকাপ! ‘বাবাই’-এর মনে দুঃখ আছে, আনন্দও! নিজের দেশের ম্যাচ দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ঠিকই, তবে এখনও টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। তাতে যে তাঁর দুঃখ রয়েছে, সেটাও জানাচ্ছেন। কিন্তু ‘বাবাই’-এর দুঃখ ভুলিয়ে দিতে সাও পাওলোর রাস্তায় যে হাজির নতুন নতুন রেস্তোরাঁ!

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০৩:১৬
Share:

ব্রাজিলে বিশ্বকাপ! ‘বাবাই’-এর মনে দুঃখ আছে, আনন্দও!

Advertisement

নিজের দেশের ম্যাচ দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন ঠিকই, তবে এখনও টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। তাতে যে তাঁর দুঃখ রয়েছে, সেটাও জানাচ্ছেন। কিন্তু ‘বাবাই’-এর দুঃখ ভুলিয়ে দিতে সাও পাওলোর রাস্তায় যে হাজির নতুন নতুন রেস্তোরাঁ!

ব্রাজিলে আসা অসংখ্য সমর্থক-পর্যটকের রসনা-তৃপ্তির জন্য যা সেজে উঠছে ক্রমশ। “বিশ্বকাপের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক-সমর্থকরা আসবেন। ওঁদের কথা মাথায় রেখেই সাও পাওলোর রেস্তোরাগুলোতে নতুন নতুন মেনু তৈরি হচ্ছে। নতুন অনেক রেস্তোরাঁও খুলছে। আমি তো খেতে খুব ভালবাসি। তাই মাঝে মাঝেই ওই রেস্তোরাঁগুলোতে ঢুকে পড়ছি। ওঃ কী গন্ধ! বিশ্বকাপ শুরু হলে তো ভিড়ের জন্য জমিয়ে খাওয়া যাবে না। তাই এখনই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কুকদের রান্নার স্বাদ নিচ্ছি। ভাগ্যিস বিশ্বকাপটা আমাদের দেশে হচ্ছে!” বলছিলেন ‘বাবাই’। সাও পাওলো থেকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে চ্যাট করার সময়।

Advertisement

লাল-হলুদের ‘বাবাই’-কে নিশ্চয়ই মনে আছে? বাবা মার্কোস ফালোপার সঙ্গে বছরখানেক আগে আমেরিকো ফালোপাও এসেছিলেন ইস্টবেঙ্গল টিমকে কোচিং করাতে। আমেরিকোর গোলগাল, নাদুস-নুদুস চেহারা দেখে তাঁকে আদর করে সবাই ‘বাবাই’ বলে ডাকতে শুরু করেন। মুখে লাজুক হাসি নিয়ে দুলে দুলে হেঁটে চিডি-মেহতাব হোসেনদের ফিটনেস ট্রেনিং দিতেন আমেরিকো। ভালবাসতেন খেতে।

নিজের দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে, অথচ এখনও আমেরিকোর পকেটে কোনও ম্যাচেরই টিকিট নেই। লাল-হলুদের প্রাক্তন ফিটনেস ট্রেনার আমেরিকো বলছিলেন, “ইচ্ছে রয়েছে ব্রাজিল, স্পেন, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ডের কিছু ম্যাচ দেখার। ব্রাজিলের একটা ম্যাচ তো দেখতেই হবে। কিন্তু টিকিট কোথায়? ব্রাজিলের খেলার সব টিকিট তো শেষ। চেষ্টা করছি যদি অন্য ম্যাচের টিকিট পাওয়া যায়।”

ব্রাজিলে বিশ্বকাপ। উদ্বোধনী ম্যাচ আপনার শহরে, আর এখনও টিকিট নেই আপনার পকেটে? বাবা মার্কোস ফালোপাকে বললেই তো ব্যবস্থা করে দিতে পারেন? উনি তো ফিফার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। আমেরিকো ওরফে বাবাইয়ের যুক্তি, “এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি কলেজ ফুটবল টিমের সঙ্গে যুক্ত আমি। একটি বড় ফুটসল টুর্নামেন্ট হবে ব্রাজিলে। তার দায়িত্ব রয়েছে আমার উপর। মিটিং, ফুটবল সংক্রান্ত নানা কাজ, সব নিয়ে ব্যস্ত। তার মধ্যেই যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি টিকিট জোগাড়ের। অন্য বন্ধুরাও যাবে তো! বাবাকে বললে হয়তো একটা-দু’টো টিকিট পাব। কিন্তু একসঙ্গে চার-পাঁচটা টিকিট! সে তো ব্রাজিলে এখন লটারি পাওয়ার মতো ব্যাপার মনে হচ্ছে।”

যে ম্যাচে টিকিট জোগাড় করতে পারবেন, যাবেন। কিন্তু যে ম্যাচে পারবেন না? ‘বাবাই’ অবশ্য নিজের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলেছেন মনে হল। “যে ম্যাচে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা হবে না, সেই ম্যাচে বন্ধু আর পরিবারের সঙ্গে টিভির পর্দাতেই চোখ রাখব। আর সঙ্গে রাখব প্রচুর খাবার। স্টেডিয়ামে না যেতে পারার দুঃখ ভুলতে ভাল-মন্দ খাবারই আমার কাছে সেরা উপাদান!” বিশ্বকাপ চলাকালীন আমেরিকোর খাওয়ার তালিকায় স্পেশাল মেনু কী থাকছে? “সেটা অবশ্য এখনও ঠিক করিনি। বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনও তো কয়েক দিন বাকি। তবে ব্রাজিলের সমর্থনে গলা ফাটানোর সময় আলাদা করে এনার্জির দরকার! ব্রাজিলের খাবার তো খাই-ই। অন্য দেশের যে সব খাবার তৈরি হচ্ছে নানা রেস্তোরাঁয় সেগুলোই তো স্পেশাল মেনু।”

বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলে এখনও ঝামেলা চলছে। সব স্টেডিয়ামও সে ভাবে তৈরি হয়নি। এমন কী ব্রাজিল টিমকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। কথাগুলো শুনে কিছুটা বিরক্তই মনে হল আমেরিকোকে। “সব দেশেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকেই। সেগুলো থেকে বেরিয়ে এসে তবেই বড় কাজে সাফল্য পাওয়া যায়। দেখবেন, বিশ্বকাপ শুরু হলে কোনও সমস্যাই আর থাকবে না।” এর পাশাপাশি তিনি জানাতে ভুললেন না, সাও পাওলো জুড়ে উৎসবের ছবির কথাও। “ব্রাজিলে কিন্তু এখন উৎসবের মেজাজ। দু’দিন আগে বাড়ি ফেরার সময় কিছু ব্রাজিলের সমর্থক জাতীয় পতাকা নিয়ে, বল নিয়ে কার্নিভালের মতো রাস্তার নেমে পড়েছিলেন। গান-নাচ, হইহই করছিল ওরা! এগুলো দেখার পর সমস্যার কথা বলি কী করে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন