টুম্পাই-কাণ্ডের ধাক্কায় বাগান কর্তারা দিশাহারা

মোহনবাগানের একশো পঁচিশ বছর পূর্তির ঘোষিত ধামাকা অনুষ্ঠান কি বন্ধ হয়ে যাবে? বাগানের গ্যালারি আর তাঁবু সংস্কারের যে বিরাট যজ্ঞ চলছিল, তাও কি থমকে যাবে? ছেলে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় আগের মতো দল গড়তে কি আর্থিক সাহায্য করবেন টুটু বসু? বাগানের সচিব পদে যাঁর অভিষেক ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, অন্য কর্তাদের সেই চেষ্টা কি প্রবল ধাক্কা খাবে? সামনের জানুয়ারিতেই হতে চলা বাগান নির্বাচনে কি এই গ্রেফতারের প্রভাব পড়বে?

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

মোহনবাগানের একশো পঁচিশ বছর পূর্তির ঘোষিত ধামাকা অনুষ্ঠান কি বন্ধ হয়ে যাবে?

Advertisement

বাগানের গ্যালারি আর তাঁবু সংস্কারের যে বিরাট যজ্ঞ চলছিল, তাও কি থমকে যাবে?

ছেলে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় আগের মতো দল গড়তে কি আর্থিক সাহায্য করবেন টুটু বসু?

Advertisement

বাগানের সচিব পদে যাঁর অভিষেক ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা, অন্য কর্তাদের সেই চেষ্টা কি প্রবল ধাক্কা খাবে?

সামনের জানুয়ারিতেই হতে চলা বাগান নির্বাচনে কি এই গ্রেফতারের প্রভাব পড়বে?

সারদা কাণ্ডে মোহনবাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুকে শুক্রবার সিবিআই গ্রেফতার করার পর এ রকম নানা প্রশ্নে ময়দান তোলপাড়! বাগানের পরিচিত মুখ টুম্পাই জেলে যাওয়ার খবরে ক্লাব তাঁবুতে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। দিশাহারা সবুজ-মেরুন কর্তারাও।

মাস তিনেক আগে ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার গ্রেফতার হওয়ার পর লাল-হলুদে যেমন অন্ধকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার চেয়ে সামান্য কম হলেও প্রায় একই রকম অবস্থা এ দিন বিকেলে বাগান তাঁবুতে। ক্লাবের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই টুম্পাইয়ের গ্রেফতার নিয়ে সতর্ক তিন লাইনের মন্তব্য করেছেন সচিব অঞ্জন মিত্র। ফোনে ধরা হলে বলে দিলেন, “টুম্পাইয়ের ব্যাপারটা বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে এর প্রভাব ক্লাবে বা ফুটবল টিমের উপর পড়বে না।”

কিন্তু আপনাদের একশো পঁচিশ বছর উদযাপনের জন্য যে বিদেশি ক্রিকেট, ফুটবল টিম আনার চেষ্টা শুরু করেছিলেন সৃঞ্জয়, তার কী হবে? বছরভর নাচ-গানের অনুষ্ঠান কি আদৌ হবে? অঞ্জন বলে দেন, “আজ আমার মন ভাল নেই। যা বলার কাল বলব।” ‘পুত্রসম’ টুম্পাইয়ের গ্রেফতারের খবরে অঞ্জনের মতো পোড়খাওয়া কর্তাও চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। কারণ তেইশ বছর বাগান শাসন করা কর্তা বোধহয় বুঝে গিয়েছেন, এর ফল কতটা সুদুরপ্রসারী!

এমনিতে বাগানে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা নেন চার জন— প্রেসিডেন্ট টুটু বসু, সচিব অঞ্জন মিত্র, সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু, অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত। টুটু এখন বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন। আর সচিব অঞ্জন এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। টুম্পাই নামেই ছিলেন মোহনবাগান সহ-সচিব। গত দেড় বছর সচিব অঞ্জনের দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে ‘বাগানের টুম্পাই’ হয়ে উঠেছিলেন ডি ফ্যাক্টো সচিব। তাঁর নির্দেশে অথবা তাঁকে না জানিয়ে কিছুই হত না ক্লাবে। তা সেটা দীর্ঘ দিনের ভেঙে পড়া গ্যালারি সংস্কারের কাজ হোক, বা সোনি নর্ডিকে টিমে আনা— সব কিছুই। ক্লাবের স্পনসর আনার কাজেও নিজের সাংসদ-প্রভাব কাজে লাগাতেন রাজ্যসভার এমপি সৃঞ্জয়। ফলে শুক্রবার থেকে বাগানে যে একটা শূন্যতা তৈরি হল তা মানছেন সবাই। সার্বিক বিচারে ক্লাবের বড় ক্ষতি, ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা স্বীকারও করছেন কর্তারা প্রায় সবাই। শুধু মোহনবাগানের অন্যতম শীর্ষ কর্তা নন, প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব ভবানীপুরের সচিব সৃঞ্জয়। সেই ক্লাবেরও বা কী হবে এখন? ময়দানে যে সব ক্লাবের ক্রিকেট টিমগুলি স্পনসর করেন টুটু-পুত্র তাদেরও কী হবে? ফলে সৃঞ্জয়ের গ্রেফতারে শুধু বাগান নয়, ময়দান জুড়েই নেমে এসেছে আশঙ্কা। হতাশাও।

দেবব্রত সরকারের গ্রেফতারের পর ইস্টবেঙ্গলে অচলাবস্থা তৈরি হতে শুরু করেছে। স্পনসর বা ফুটবলার পেমেন্ট, অথবা সামনেই ক্লাবের নির্বাচন না থাকায় সেই সমস্যাগুলো হয়তো সামনে আসছে না। কিন্তু দৈনন্দিন কাজে প্রতি মুহূর্তে সমস্যা হচ্ছে মানছেন লাল-হলুদের প্রায় সব কর্তা। শীর্ষকর্তার অবর্তমানে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় কোচ আর্মান্দো কোলাসো। চতুর্থ বিদেশি থেকে গোলকিপার কোচ সবই বাছার ও আনার দায়িত্ব বর্তাচ্ছে এই গোয়ান কোচের উপর। যা নিতু-জমানায় কখনও হয়নি। ক্লাব সূত্রের খবর, কোচের সঙ্গে প্রধান কর্তাদের দেখা প্রায় হয়ই না। এতে নাকি তীব্র ক্ষুব্ধ কোলাসো। নিয়ম করে মাঝেমধ্যে সন্ধ্যায় ক্লাবে আসেন সচিব কল্যাণ মজুমদার। আসেন কিছু কর্তাও। সচিব তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নানা সিদ্ধান্ত নেন কর্পোরেট কর্তার ঢঙে। এ দিনও কল্যাণবাবু এসেছিলেন তাঁবুতে। তবে পড়শি ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তার গ্রেফতার নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। বলে দিয়েছেন, “আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু সবাইকে ছেড়ে শুধু ফুটবলমহলকেই কেন বারবার ডাকা হচ্ছে জানি না। আইপিএল ক্রিকেটের অনেক টিমেই তো অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা খেটেছে। তাদের কিন্তু ডাকা হচ্ছে না। এতে ময়দানের দুই প্রধানের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। বাংলার ফুটবলের ক্ষতি হচ্ছে।”

শীর্ষকর্তা দেবব্রত জেলে থাকলে পরের মরসুমে টিমের কী হাল হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ইস্টবেঙ্গলের প্রায় সব কর্তাই। তাঁরা জানেন দেবব্রত ওরফে নিতু স্পনসর আনা থেকে টিম তৈরির জন্য যা-যা করতেন, তা করার মত কোনও কর্তা এখনও তৈরি হয়নি লাল-হলুদে। ঠিক তেমনই সৃঞ্জয় যদি সমস্যায় আরও জড়িয়ে পড়েন, তা হলে টুটু-অঞ্জন পরবর্তী অধ্যায়ে কে বাগানের হাল ধরবেন তা নিয়ে ও সমানচিন্তিত সবাই। কারণ প্রভাব এবং আর্থিক ক্ষমতায় সৃঞ্জয়ের সমকক্ষ কেউ এই মুহূর্তে নেই বাগানের শাসকগোষ্ঠীতে। তার উপর রয়েছে জানুয়ারির ক্লাব নির্বাচন। এই সুযোগে কি বিরোধীরা মাঠে নামবেন ক্লাব দখলে? সে রকম কোনও ভাবনা অবশ্য এখনও নেই বিরোধীদের। বিরোধী গোষ্ঠীর কর্তা বলরাম চৌধুরী বললেন, “টুম্পাাইয়ের খবরটা শুনে খারাপ লাগছে। তবে এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই।”

দুই ক্লাবের দুই শীর্ষকর্তা জেলে যাওয়ার পর তাদের দলের সমর্থকরা অবশ্য ‘যুদ্ধ’ বিরতিতে নারাজ। ফেসবুক ভরে উঠেছে নানা পোস্টে। তার মধ্যে বোধহয় সবচেয়ে তাত্‌পর্যের পোস্ট এটাই— ইস্টবেঙ্গল ১ (নিতু) : মোহনবাগান ১ (টুম্পাই)। রেফারি সিবিআই।

সিবিআই আর সারদা কাণ্ডের ধাক্কায় বাঙালির ফুটবলের দুই চিরন্তন আবেগের ক্লাবে অমাবস্য নামতে শুরু করেছে। তা কিন্তু এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সোশ্যাল নেটওয়াকিং সাইটের কোনও পোস্টেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন