গুস্তাভোর প্রথম দিন। মঙ্গলবার মোহনবাগান মাঠে কাতসুমির সঙ্গে। ছবি: উৎপল সরকার
নেইমারের বিরুদ্ধে খেলেছেন!
কড়া ট্যাকল করেছেন রোনাল্ডিনহোর মতো সুপারস্টারকেও!
লুইস ফ্যাবিয়ানো, আদ্রিয়ানোদের বিরুদ্ধে খেলেও সাফল্য পেয়েছেন।
সেই ব্রাজিলিয়ান স্টপার গুস্তাভো সিলভা এ বার র্যান্টি মার্টিন্স, ডু ডং-দের আটকানোর ক্ষেত্রে বড় অস্ত্র হতে পারেন ধরে নিয়েছেন বাগান সমর্থকরা। সোমবার শহরে এসেছেন গুস্তাভো। আর মঙ্গলবার সকালেই প্র্যাকটিসে নেমে পড়লেন তিনি। লম্বা বিমান যাত্রার ধকল কাটিয়ে কাতসুমিদের সঙ্গে এ দিন পাল্লা দিয়ে প্র্যাকটিস করে গেলেন তিনি। আর প্র্যাকটিসের পর পাশে দোভাষী দলেরই ফিজিও গার্সিয়াকে বসিয়ে বলে দিলেন, ‘‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোহনবাগানের ঐতিহ্যের কথা জেনেছি। এ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমার ক্লাব, সেটাও অজানা নয়। আমার লক্ষ্য দলকে সাফল্য দেওয়া।’’
মোহনবাগানে খেলতে আসার অনেক আগেই অবশ্য কলকাতার ফুটবল সম্পর্কে জেনেছিলেন বন্ধু হাডসন লিমার কাছ থেকে। লিমা মোহনবাগান এবং ভবানীপুরে খেলে গিয়েছেন। ওঁর থেকেই ডার্বির গল্প শুনেছেন। জেনেছেন এই ম্যাচকে ঘিরে এখানকার ফুটবলপ্রেমীদের প্রবল উৎসাহ আর উত্তেজনার কথাও। এ দিন সকালে ডার্বির প্রসঙ্গ উঠতেই হাসতে হাসতে গুস্তাভো বলে দেন, ‘‘লিমার সঙ্গে ব্রাজিলের একটি অ্যাকাডেমির হয়ে খেলার সময় কলকাতা ফুটবল সম্পর্কে জেনেছিলাম। সে সময়ই ওর থেকে ডার্বি ম্যাচকে ঘিরে সমর্থকদের উৎসাহের কথাও শুনেছি।’’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘এই ম্যাচকে ঘিরে এখানকার মানুষের আবেগের কথা জানি। মোহনবাগানের জার্সি গায়ে খেলতে নামার গুরুত্বটাও বুঝি। এই ম্যাচে ভাল খেলে ক্লাবকে সাফল্য দিতে চাই।’’
মে মাসে শেষ ম্যাচ খেলেছেন। তবে রিও ডি জেনেইরোতে থাকলেও এত দিন ধরে গার্সিয়ার তৈরি করে দেওয়া ট্রেনিং সূচি মেনে ফিটনেস প্র্যাকটিস করে গিয়েছেন। এ দিন প্র্যাকটিসে গুস্তাভোকে দেখে এক বারের জন্যও মনে হয়নি, তাঁর কোনও চোট আছে বা তিনি ফিট নন। বরং শক্তপোক্ত চেহারার ব্রাজিলিয়ানকে দেখে বেশ ফিট-ই মনে হয়েছে। প্রথম দিন এমন ভাবে সবার সঙ্গে মিশে গেলেন মনে হল তিনি টিমম্যানও। ফিজিক্যাল ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পর এ দিন প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলেন গুস্তাভো। যে ভাবে বার বার উপরে উঠে আবার দ্রুত নীচে নামছিলেন, বিপক্ষের ফুটবলারদের কভার করছিলেন বা ট্যাকল করছিলেন, তা দেখে উচ্ছ্বসিত মাঠে উপস্থিত সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। গুস্তাভো নিজেও টিমের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বললেন, ফিটনেস নিয়ে সমস্যা হবে না। টিমের সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মানিয়ে নিয়ে মোহনবাগানকে সব রকম সাহায্য করতে চাই।’’ পাশাপাশি তিনি এটাও জানিয়ে দেন, একটু সরগড় হয়ে গেলে কাদা মাঠে খেলতেও কোনও সমস্যা হবে না তাঁর।
ব্রাজিলে নাকি এখন ভারতীয় ফুটবল ঘিরে প্রবল উৎসাহ। আই লিগের বিভিন্ন ক্লাবের পাশাপাশি আইএসএলের টিমগুলোতেও বহু ব্রাজিলিয়ান খেলতে আসছেন। সে জন্য ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে এখন ভারতীয় ফুটবল নিয়ে তুমুল চর্চা। ‘‘ভারতীয় ফুটবল ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। বহু ব্রাজিলিয়ান এখানে খেলতে আসছে। আর মোহনবাগান এই মুহূর্তে ভারত সেরা। তাই এই ক্লাবে খেলতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’’ বলছিলেন ছ’ ফুট এক ইঞ্চির ডিফেন্ডার, যাঁর আদর্শ ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ৭৯টি ম্যাচ খেলা হুয়ান সিলভেইরা স্যান্টোস।
গুস্তাভোর এই মুহূর্তে এক মাত্র ভাষা সমস্যা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। আর এই সমস্যা মেটাতে ইংরেজি শিখতে চান তিনি। ইতিমধ্যেই গার্সিয়ার কাছে ক্লাস নিতে শুরু করে দিয়েছেন। বোঝাই যায় টিঁকে থাকতেই এসেছেন হোসে ব্যারেটো-বেটোর দেশের ফুটবলার। কোচ সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘একদিন দেখলাম। তা-ও মাঠের অবস্থা খারাপ ছিল। তবে প্রথম দেখায় খারাপ লাগেনি। বৃহস্পতিবার অনুশীলন ম্যাচ খেলব সিএফসি-র সঙ্গে। দেখা যাক।’’