মশা মারতে কামান দাগা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু বাঁদর তাড়াতে হনুমান?
বাজি রেখে বলা যায় শোনেননি। মুশকিল হল, শুধু শোনা-টোনা নয় কানপুর সেটা হাতেগরম আবার দেখিয়েও দিল! আন্দাজ ঠিকই— গ্রিন পার্কে বাঁদরের উপদ্রব ঠেকাতে এখন সেখানে হনুমান ভাড়া করে আনতে হচ্ছে! কানপুর প্রশাসকরা মনে করছেন, বাঁদরদের বাঁদরামি ঠেকানোর একটাই অস্ত্র, একটাই উপায়।
হনুমানের চোখরাঙানি!
এমনিতেই ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে কানপুরের খুব সুনাম নেই। বহু দিন পরপর ম্যাচ পায়। প্রশাসনিক ব্যাপারস্যাপারেও থাকে গয়ংগচ্ছ মনোভাব। এই যে, রবিবার ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ওয়ান ডে এখানে হচ্ছে, দেখে কে বলবে? একটা হোর্ডিং নেই, দু’টিমের ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিস বাদে ক্রিকেটীয় পরিবেশের কোনও অস্তিত্ব নেই। ধোনি-ডে’ভিলিয়ার্সের সাংবাদিক সম্মেলনের সময় দেখা গেল, কানপুরের আধা-সওয়া-সিকি কর্তারা মোটামুটি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দুই ক্যাপ্টেনের উপর। প্রেস কনফারেন্স রুমটা নামেই, আদতে অস্থায়ী ছাউনি দেওয়া একটা কাঠামো। ধোনির তবু নিজের দেশ। জানেন, চেনেন। ডে’ভিলিয়ার্সের চোখমুখ মোটামুটি বিস্ফারিত। যেন কেউ তাঁর হাত থেকে ব্যাটটা কেড়ে নিয়ে মিচেল জনসনকে খেলতে বলছে!
এ হেন বিচিত্র পরিবেশে হনুমান ভাড়া করলে আর আশ্চর্য কী?
এবং পবনপুত্ররা রীতিমতো ঘুরে ঘুরে তদারকিও করবেন কোথায় বাঁদরকুল বেয়াদপি করে বেড়াচ্ছে! এ দিন গ্রিন পার্কে দেখা গেল, একসঙ্গে দু-দু’টো হনুমানকে নানা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শোনা গেল, ঘুরিয়ে নাকি দেখানো হচ্ছে বিভিন্ন ‘চেক পয়েন্ট’! মানে, যে সব জায়গা দিয়ে বাঁদরকুল স্টেডিয়ামে ঢুকে দর্শকদের এটা-ওটা ধরে টান মারে আর কী! এক জন কর্তা যা বললেন, তা মোটামুটি বাঁধিয়ে রাখার মতো। ‘‘আরে, হনুমান ঘুরছে টের পেলে বাঁদর আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না। ওরা ঠিক খবর পেয়ে যাবে যে এখন মাঠে ঢুকলে বিপদ আছে।’’ মুশকিলটা বাঁধিয়েছে নাকি নিকটবর্তী এক মন্দির। সেখানকারই বাসিন্দা শ’য়ে-শ’য়ে বাঁদর। যারা যথেচ্ছ ভাবে স্টেডিয়ামেও ঘোরাফেরা করে। ঠিক করে ফেলা হয়েছে, রবিবার ম্যাচের দিন পুরো সময়টাই দুই হনুমানকে রেখে দেওয়া হবে গ্রিন পার্কে। রীতিমতো গাঁটের কড়ি খরচ করে। বিনামূল্যের গল্প নেই, দুই হনুমানের ম্যাচ থেকে নূন্যতম আয় কিন্তু সম্মিলিত দশ হাজার! আর ওভারটাইম করলে চার্জ আলাদা! মানে, ঘণ্টা পিছু রেট ধার্য হবে তখন। এবং এটাও মনে করবেন না যে, পবনপুত্ররা ম্যাচ না থাকলে এখানে বেকার বসে থাকেন! দৈনিক এঁদের নিয়ে যাওয়া হয়, নানা ফ্ল্যাটে, একই কারণে। বাঁদর তাড়াতে। দৈনিক দেড় থেকে দু’হাজার খরচ করে!
সত্য সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!