তৈরি হচ্ছেন মুলার, ওজিলরা।
ঈগলের শ্যেন দৃষ্টির সামনে মরুভূমির ধূর্ত শিয়াল! প্রি-কোয়ার্টারে জার্মানি-আলজেরিয়া ম্যাচের ক্যাচলাইন হতেই পারে উপরের বাক্য!
প্রশ্ন হতেই পারে, শেষ আটে যাওয়ার জন্য পোর্তো আলেগ্রেতে জার্মানির টমাস মুলারদের লড়াইটা তো আলজিরিয়ার ইসলাম স্লিমানিদের বিরুদ্ধে। সেখানে হঠাৎ ঈগল এবং শিয়াল এসে জুটল কোথা থেকে?
উত্তর অবশ্য লুকিয়ে রয়েছে দু’দলের সমর্থকদের দেওয়া নামে। জার্মানরা তাঁদের জাতীয় দলকে যখন মাতৃভাষায় আদর করে ডাকে ‘দাই আদলার’ (ঈগল) তখন জিনেদিন জিদানের জন্মভূমি আলজিরিয়ার জাতীয় দল দেশের মানুষের কাছে পরিচিত ‘ল্যে ফেনেকস’ (শিয়াল) নামে।
তবে শেষ ষোলোর লড়াইতে আফ্রিকার সেই শিয়ালদের বিরুদ্ধে যে ‘ভিনি-ভিডি-ভিসি’ (এলাম-দেখলাম-জয় করলাম) হবে না তা বলছেন জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। ‘গ্রুপ অব ডেথ’-থেকে টমাস মুলাররা যতই সাত গোল দিয়ে উঠে আসুক না কেন, লো-র সাফ কথা, “আলজিরিয়া ম্যাচ মোটেই সহজ হবে না। এ রকম ম্যারাথন টুর্নামেন্টে গ্রুপ লিগে কী করেছি তা নিয়ে মগ্ন থাকলে চলবে না।” উঠে আসছে ৩২ বছর আগে বিরাশিতে অস্ট্রিয়াকে ১-০ হারিয়ে জার্মানদের নক-আউটে যাওয়ার স্মৃতি। যার জেরে ছিটকে যেতে হয়েছিল আলজিরিয়াকে। কিন্তু সেই তিক্ত ইতিহাসকেও গুরুত্ব দিতে নারাজ তিন বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সামনে প্রথম বার নক আউটে ওঠা আলজিরিয়ানরা থাকলেও ম্যাচটাকে ‘ডেভিড ভার্সাস গোলিয়াথ’ ভাবতে নারাজ টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যেই চার গোল করে ফেলা টমাস মুলার। বরং সতর্ক গলায় বলছেন, “জেতার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে কোনও মতেই পা দেওয়া চলবে না।”
জার্মান শিবিরে খবর, যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচেই দল থেকে বসছেন পোডলস্কি। সেই জায়গায় শুরু করার কথা মারিও গোটজের। যার অথর্, মুলারকে ‘ফলস নাইন’ লো-র পছন্দের ৪-৩-৩ ছকেই মরু যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ বের করে নেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হচ্ছে ঈগলদের বাসায়। দ্বিতীয়ার্ধে ক্লোজেকে নামিয়ে বিপক্ষ রক্ষণে নড়বড়ে রফিক হালিশে এবং মাজিদ বৌঘেরার উপর চাপ বাড়ানোর ছকের পাশাপাশি মিডল থার্ডে আলজিরিয়ার আক্রমণ ভাঙতে এবং জার্মান আক্রমণের জন্য তৈরি জোড়া ফলা সোয়াইনস্টাইগার, টনি ক্রুজও।
দু’দলেই নেই কোনও চোট-আঘাত কার্ড সমস্যা। গ্রুপ লিগে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ড্র করে শেষ ষোলোয় উঠে এসেছে ভাহিদ হালিলহদজিকের দল। জার্মানদের হারাতে তিনি আবার তাকিয়ে সোফিয়ান ফেঘৌলি এবং ইসলাম স্লিমানি এবং ইয়াসিন ব্রাহিমি ত্রিভুজের দিকে। এর সঙ্গে জুড়বে নবিল বেন্তালিবের গোলের জন্য ছটফটানি। আর জার্মানদের পাওয়ার ফুটবল আটকাতে তাঁর অঙ্ক আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল। অর্থাৎ সোয়াইনস্টাইগাররা তাঁর হাফ লাইন পেরোলেই ঘানার মতো প্রেসিং ফুটবল খেলা। যার ফলে তৈরি হতে পারে কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ। ম্যাচের আগে গলার ঝাঁঝ বেশি আলজিরিয়ান কোচের গলাতেই। বলছেন, “আমরা গ্রুপ লিগের চেয়েও ভাল খেলতে পারি। আর সেটা যদি জার্মানদের বিরুদ্ধে হয়, তা হলে ক্ষতি কী?”
৩২ বছর ধরে পুষে রাখা রাগ কি সোমবার রোনাল্ডিনহোর ঘরের মাঠে ঝরে পড়বে আলজিরিয়ানদের পা থেকে? নাকি ধূর্ত শিয়ালদের ঠুকরে খেতে তৈরি ঈগল? জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম যদিও বলছেন, “ওরা লড়াকু দল। তবে ভিডিও সেশনে ওদের দুর্বলতাও আমরা দেখে ফেলেছি।”