Custody Of Child

বাঙালি মায়ের কানাডিয়ান কন্যা, শিশুর নাগরিকত্ব বিতর্কে ভিন্‌দেশে বাবাকে ফোন কলকাতা হাই কোর্টের! উদ্বিগ্ন বিচারপতিরা

২০২০ সালে কানাডাবাসী এক বাঙালি দম্পতির কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স পাঁচ বছর। কানাডায় জন্ম বলে শিশুটি সে দেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। এর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় শিশুর বাবা-মায়ের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৫০
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মা ভারতীয়। কলকাতার বাসিন্দা এবং বাঙালি। বাবা কানাডার নাগরিক। তিনি থাকেন সে দেশেই। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় জন্মসূত্রে কানাডিয়ান সেই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার আদালত থেকে ফোন গেল ভিন্‌দেশে। দুই পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে শিশুর নাগরিকত্ব বিতর্কে সমাধান করতে উদ্যোগী হল আদালত।

Advertisement

২০২০ সালে ওই কানাডাবাসী দম্পতির কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স পাঁচ বছর। কানাডায় জন্ম বলে শিশুটি সে দেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। এর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় শিশুর বাবা-মায়ের। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও দায়ের হয়। স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামী তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করেন। তা ছাড়া বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে স্বামীর। ওই অশান্তির মধ্যে এক দিন কানাডা ছাড়েন মহিলা। নাবালক সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়।

তার পরেই শুরু হয়েছে আর এক আইনি সমস্যা। কন্যাসন্তানের কানাডিয়ান পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের মুখে। এখনও সে ভারতে মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবা। তিনি চান, সন্তান থাকুক কানাডায় তাঁর কাছে। অন্য দিকে, মেয়েকে ছাড়তে নারাজ মা। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই শুনানি চলাকালীন বিচারপতিদের নির্দেশে এজলাস থেকেই কানাডায় শিশুর বাবাকে ফোন করেন আইনজীবী। জানতে চাওয়া হয়, কবে তিনি ভারতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে বসে সন্তানের অধিকারের বিষয়টির নিষ্পত্তি করবেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, শিশুটির কানাডিয়ান পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘বাবা-মায়ের দ্বন্দ্ব নিয়ে আমাদের কোনও উৎসাহ নেই। আমরা উদ্বিগ্ন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে। বাবা মায়ের দ্বন্দ্বের জন্য একটি শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে না।’’

দুই বিচারপতি এজলাসে উপস্থিত শিশুর মাকে ডেকে একান্তে কথাও বলেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি জানার পর তাঁরা এজলাস থেকেই মহিলার স্বামীকে ফোন করতে নির্দেশ দেন। কথোপকথন শেষে তাঁর আইনজীবী জানান, যে হেতু আবেদনকারী (স্বামী) কানাডিয়ান নাগরিক, তাই ভিসা পেতে সময় লাগবে। এক দেড় মাসের আগে তাঁর ভারতে আসা সম্ভব নয়!

এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি বসাকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আমরা চাই শিশুটি কানাডাতেই ফিরে যাক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মা এবং মেয়ের নিরাপত্তা-সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আদালত চিন্তিত।’’ আদালত জানিয়েছে, যে হেতু শিশুটি এবং তার বাবা, দু’জনেই কানাডার নাগরিক, সেখানে আদালতের ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু ভারতীয় নাগরিক মায়ের বিষয়টি আদালত বিবেচনার মধ্যে রেখেছে। সমস্যা সমাধানের জন্য এবং শিশুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আদালত বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে—

১) স্বামীকে কানাডার আদালতে এবং কলকাতা হাই কোর্টের কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে শিশু এবং তার মায়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না।

২) স্ত্রী-কন্যাকে কানাডায় আলাদা থাকার ব্যাবস্থা করে দেবেন স্বামী।

৩) শিশুটির বাবা-মা দু’জনকেই আর্থিক খরচ বহন করতে হবে।

৪) স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী ওই বাসস্থানে প্রবেশ করতে পারবে না।

৫) স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে সন্তানের সঙ্গে বাবা দেখা করতে পারবেন সীমিত সময়ের জন্য।

৬) কানাডায় স্ত্রী-কন্যার বসবাসের জন্য বাড়ির ভাড়া বা খরচ স্বামীকেই বহন করতে হবে।

৭) কানাডার আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয় বিবেচনা করবেন স্বামী। তার জন্য আদালতের প্রস্তাব উভয়পক্ষকে মঙ্গলবার থেকে প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময়ে ফোনে বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে আলোচনা করতে হবে। এই সময়ে বাবা তাঁর সন্তানের সঙ্গেও কথা বলতে পারবেন।

হাই কোর্টের নির্দেশ, আগামী জানুয়ারি মাসে উভয়পক্ষকে তাঁদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করতে হবে আদালতকে। তবে আদালত আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে উভয় পক্ষ সমাধানের পথ খুঁজে পাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement