খেতাব-যুদ্ধ বাঁচিয়ে রাখার প্রস্তুতি। শুক্রবার অনুশীলনে চিডি ও সুয়োকা।
গোয়া থেকে ফোন-আড্ডায় সুভাষ ভৌমিকের ভবিষ্যদ্বাণী, “এখন ইস্টবেঙ্গল যদি টানা পাঁচ ম্যাচ জিততে পারে তা হলে মিরাকল হবে। ওদের কিন্তু গোয়ায় এসে চার্চিলের সঙ্গেও খেলতে হবে।”
আর গল্ফগ্রিনের বাড়িতে বসে সুব্রত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “কঠিন। ভীষণ কঠিন। সব ম্যাচ জিততেই হবে, না হলেই আশা শেষ এটা ভয়ঙ্কর চাপ। কোচের এ ক্ষেত্রে বিরাট দায়িত্ব। মোটিভেট করতে হবে পুরো টিমকে।”
দুই বঙ্গসন্তান কোচের পকেটে সব মিলিয়ে পাঁচ-পাঁচটা আই লিগ। আর একা আর্মান্দো কোলাসোর পকেটেই পাঁচটা। লিগ জেতার অঙ্কটা যে তিনি জানেন না, তা মোটেই নয়। আর সেটা সুভাষ-সুব্রতর ভাবনার সঙ্গে মিলবে না, সেটা হয় নাকি?
ফলে গোয়ায় ডেম্পো কোচ থাকার সময় যে ফর্মুলা প্রয়োগ করে সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছেছিলেন, কলকাতায় খেতাবের গন্ধে সেটাই প্রয়োগ করে ফেললেন লাল-হলুদেও। শনিবার সকালে। অনুশীলন শেষে পুরো টিম মাঠে রেখে সহকারীদের নিয়ে সোজা তাঁবুর পথে হাঁটতে শুরু করলেন আর্মান্দো। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “তোমরা নিজেরাই নিজেদের মোটিভেট করো। আলোচনা করে নিজেদের সমস্যার সমাধান বের করো।”
শুরু হয়ে গেল টিম মিটিং— গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উগা-মোগা ছাড়া পুরো আর্মান্দো ব্রিগেড। অ্যালভিটো ডি’কুনহা শুরু করলেন, “এ রকম সুযোগ আসবে না। বাকি পাঁচটা ম্যাচ নক আউট ধরে এগোতে হবে আমাদের। কাল প্রথম নক আউট ম্যাচ।” চোটের জন্য দলের বাইরে অধিনায়ক মেহতাব হোসেন। তাঁকে বলা হল কিছু বলতে। মেহতাব দেখালেন চিডিকে। চিডি বলতে শুরু করলেন, “আমরা পরপর দু’টো ম্যাচ এ বার জিতিনি। কাল সেই সুযোগ। চাকাটা ঘোরাতেই হবে এ বার।”
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যুদ্ধ জারি রাখতে হলে সব মিলিয়ে পাঁচ লাইফ লাইন ইস্টবেঙ্গলের সামনে! একটা পিছলে গেলেই কার্যত ‘বাপি বাড়ি যা’। মহমেডানের পর একে একে পুণে (দু’বার), চার্চিল ব্রাদার্স, ইউনাইটেড স্পোর্টস।
আজ শনিবার যুবভারতীতে প্রথম লাইফ লাইন নেওয়ার সুযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই মহমেডানও তো এখন খাদের কিনারায়। এই ম্যাচটা হেরে গেলে অবনমন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে সঞ্জয় সেনের টিমের। আর এই পিঠ ঠেকে যাওয়া ব্যাপারটাকেই প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছেন আর্মান্দো। “দু’টো ট্রফি পাওয়া মহমেডান কেন যে অবনমন লড়ছে সেটাই অবাক করছে আমাকে। টিমটা বেশ ব্যালান্সড। ভাল বিদেশি আছে। অবনমনে থাকা টিম সব সময় ভয়ঙ্কর হয়। মানসিক ভাবে আমরা অবশ্য একটু এগিয়ে আছি প্রথম ম্যাচটা জিতেছিলাম বলে,” বলার সময় ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচের গলায় আশঙ্কা আর আশার মিলিত স্রোত।
কোচ মাঠ ছাড়ার পর আর্মান্দো-ব্রিগেড।
কিন্তু মহমেডান কোচ শনিবার যে অঙ্ক বই নিয়ে নামতে চাইছেন, তার উত্তর দেওয়া কি এত সহজ হবে চিডি-সুয়োকাদের?
যুবভারতীতে অনুশীলন এবং পেন ওরজির জন্মদিনের কেক কাটার পর যে স্লোগান জোসিমার-লুসিয়ানো সাব্রোসাদের জন্য ড্রেসিংরুমে ঝুলিয়ে দিয়েছেন মহমেডান কোচ, তা হল— তিন পয়েন্ট না পাও, হেরে কিন্তু মাঠ ছেড়ো না। চৌম্বকে যার সারাংশ— এক পয়েন্ট পেলেও ক্ষতি নেই। “আগের ম্যাচে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে শেষ দিকে গোল খেয়ে হেরেছিলাম। আর সেই ভুল করব না,” বলছিলেন সাদা-কালো কোচ। সঞ্জয় দাবি করলেন, কোচিং জীবনে সব সময় ‘সাদা’-ই (পড়ুন সাফল্য) দেখে এসেছেন, ‘কালো’ (পড়ুন অবনমন) দেখেননি। ‘‘কোচিং জীবনে এ রকম অবস্থায় কখনও পড়িনি’’ বলার পর জোসিমারদের কোচ গলায় জোর এনে বললেন, “আমি বলছি, দেখে নেবেন আমাদের অবনমন হবে না।” কোন জ্যোতিষীর বিচারের পর যে তিনি এত আত্মবিশ্বাসী কে জানে?
ইস্টবেঙ্গল টিমে কোনও চমক থাকছে না। মাত্র একটাই পরিবর্তন হতে পারে। শুক্রবার সকালের অনুশীলনে যে ডামি টিম দেখিয়েছেন আর্মান্দো, তাতে রাইট ব্যাকে নওবা সিংহের জায়গায় অভিষেক দাস নামতে পারেন। গোলপোস্টের নীচে থেকে যাচ্ছেন এত দিনের ‘ব্রাত্য’ অভ্র মণ্ডল-ই। পুণেতে খেলার সময়, প্রথম বছর টানা এগারো ম্যাচ অপরাজিত ছিলেন। পরের বছর টানা সাত ম্যাচ। ঈশ্বরভক্ত এবং ভাগ্যে বিশ্বাসী আর্মান্দো তূণ থেকে এই তিরটা ব্যবহার করবেন, এটা প্রত্যাশিত ছিলই। লাল-হলুদের ঘরের ছেলে অভ্র এ দিন বাড়ি ফেরার আগে বলে গেলেন, “সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। জিততেই হবে।”
মহমেডানে অবশ্য বড় চমক থাকছে। গোল নষ্ট দেখে-দেখে বিরক্ত কোচ সঞ্জয় বড় ফাটকা খেলছেন অজয় সিংহ নামের এক স্ট্রাইকারকে নামিয়ে। যাঁকে অনেক মহমেডান সমর্থকও হয়তো চেনেন না। পৈলান অ্যারোজের এই প্রাক্তনী বহু দিন চোটের জন্য বাইরে ছিলেন। অসীম বিশ্বাসকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে কেন অজয়? কীসের ভরসায়? “সবাইকে তো দেখলাম, দেখি না ছেলেটাকে নামিয়ে। ভাল ফর্মে আছে,” বলছিলেন মহমেডান কোচ। তাঁর বড় ভরসা লুসিয়ানো সুস্থ এবং থাকছেন স্টপারে। “গতবার লুসিয়ানো চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আমরা গোল খেয়ে গিয়েছিলাম,” বলছিলেন সঞ্জয়।
পরিসংখ্যান বলছে, আই লিগে দু’দলের মধ্যে ন’টা ম্যাচ হয়েছে এ পর্যন্ত। একটাও জেতেনি মহমেডান। তবুও স্বপ্ন দেখছেন সঞ্জয়। দান উল্টে দেওয়ার স্বপ্ন।
এক জন পয়েন্ট নষ্ট করলেই খেতাব থেকে ছিটকে যাবেন, অন্য জন হারলে চলে যাবেন আরও অন্ধকারে। আর্মান্দো এবং সঞ্জয়— দুই কোচেরই শনিবারের রাতটা বিনিদ্র কাটবে, অনুমান করাই যায়।
দেখার হল, রবিবারের রাতটা কে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটান!
শনিবারে আই লিগ ফুটবল
ইস্টবেঙ্গল: মহমেডান (যুবভারতী ৫-০০), ডেম্পো: মুম্বই এফসি (মারগাও)।
ছবি: উৎপল সরকার।