পেনাল্টি ফস্কে অবনমন-আতঙ্ক আরও জোরালো মহমেডানের

লাল-কার্ড, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পেনাল্টি নষ্ট, গোট ম্যাচে ন-ন’খানা গোল, লাজংয়ের বিশ্বকাপার কর্নেল গ্লেনের হ্যাটট্রিকতীব্র উত্তেজক এ রকম একটা ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়ার পরেও অবনমনের দিকেই পা বাড়াল মহমেডান। আসলে, মহমেডান আর অবনমন শব্দ দু’টো যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে! দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে লড়াই করে যত বার আই লিগের মূল পর্বে খেলার ছাড়পত্র জোগাড় করেছে, তত বারই অবনমনের গেরোয় আটকে গিয়েছে মহমেডান। বুধবার লাজং এফসি-র কাছে হেরে এ বারও কার্যত অবনমনের মুখে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় সেনের দল।

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

হতাশ পেন। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

লাজং এফসি ৫ (গ্লেন পেনাল্টি সহ ৩, সুভাষ ২)

Advertisement

মহমেডান ৪ (অসীম, পেন, জোসিমার ২)

লাল-কার্ড, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পেনাল্টি নষ্ট, গোট ম্যাচে ন-ন’খানা গোল, লাজংয়ের বিশ্বকাপার কর্নেল গ্লেনের হ্যাটট্রিকতীব্র উত্তেজক এ রকম একটা ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়ার পরেও অবনমনের দিকেই পা বাড়াল মহমেডান।

Advertisement

আসলে, মহমেডান আর অবনমন শব্দ দু’টো যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে!

দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে লড়াই করে যত বার আই লিগের মূল পর্বে খেলার ছাড়পত্র জোগাড় করেছে, তত বারই অবনমনের গেরোয় আটকে গিয়েছে মহমেডান। বুধবার লাজং এফসি-র কাছে হেরে এ বারও কার্যত অবনমনের মুখে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় সেনের দল। বিশেষত সুভাষ ভৌমিকের চার্চিল ব্রাদার্স এ দিন ইস্টবেঙ্গলকে হারানোয় আরও অন্ধকারে চলে গেল সাদা-কালো ব্রিগেড।

সঞ্জয় সেন অবশ্য হাল ছাড়ছেন না। এখনও আই লিগের জটিল অঙ্কের হিসেব কষে চলেছেন সাদা-কালো কোচ। তাকিয়ে রয়েছেন অবনমনের আওতায় থাকা বাকি দলগুলোর ম্যাচগুলোর দিকে। মহমেডানের মাঠ-সচিব কামারুদ্দিন কিন্তু পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, “চার্চিল এ দিন ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দেওয়ার পর আর কোনও আশা দেখছি না। বলাই যায়, আমাদের অবনমন হয়ে গেল।”

অথচ এই মহমেডানের পকেটেই এ বার দু’টি ট্রফি— ডুরান্ড এবং আইএফএ শিল্ড। তবু আই লিগে এ হেন দশা কেন?

মহমেডানের দুর্দশার বিশ্লেষণে যে কারণগুলো উঠে আসছে, সেগুলো এই রকম:

১) ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব।

২) দলের মধ্যে মনোমালিন্য।

৩) স্পনসর না থাকায় বেতন সমস্যা।

৪) বিদেশি ফুটবলারদের বার বার শৃঙ্খলা ভাঙা।

৫) আইএমজিআর-এর ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের মানসিক দূরত্ব।

এত সবের পরও কিন্তু বুধবারের ম্যাচটা জিততেই পারত মহমেডান। পারত আই লিগে নিজেদের ভাসিয়ে রাখতে। ম্যাচের শুরুতে লাল-কার্ড দেখে দলের এক নম্বর কিপার লুইস ব্যারেটো বেরিয়ে যাওয়ার পর ৮০ মিনিট দশ জনে খেলেছে মহমেডান। তা সত্ত্বেও লাজংকে হারাতে পারতেন পেন-জোসিমাররা। নিদেনপক্ষে ড্র তো করাই যেত। কিন্তু লুসিয়ানোর পেনাল্টি মিসের সঙ্গে সঙ্গে মহমেডানের তিন পয়েন্টের আশা শেষ হয়ে যায়। অথচ ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বসন্ত সিংহের বাড়ানো বল থেকে হেডে দুরন্ত গোল করে মহমেডানকে ১-০ এগিয়ে দিয়েছিলেন অসীম বিশ্বাস। শুরুতে ম্যাচের রাশও ছিল সঞ্জয়ের ছেলেদের হাতেই। কিন্তু প্রথম ভুল করেন লুইস ব্যারেটো। বৈথাংকে ফাউল করে। নিজে তো কার্ড দেখেনই, সঙ্গে পেনাল্টির সুযোগ পেয়ে যায় শিলংয়ের দল। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা ফেরান গ্লেন।

টান টান উত্তেজনার ম্যাচে স্লগ ওভারের চার-ছয়ের মতোই যুবভারতী এ দিন ভাসল গোলের বন্যায়। এ মরসুমে আই লিগে এই প্রথম কোনও ম্যাচে মোট নয় গোল হল। বিরতির আগেই ৩-২ এগিয়ে যায় লাজং। সৌজন্যে সুভাষ সিংহ এবং গ্লেন। দশ জনে খেললেও মহমেডানও কিন্তু পাল্টা আক্রমণে লাজংয়ের ডিফেন্স বার বার ভাঙার চেষ্টা করে যায়। বিরতির পর জোসিমার ৩-৩ করে ফেলেন। কিন্তু পেনাল্টি মিস করে দ্বিতীয় ভুলটি করে বসেন লুসিয়ানো। উল্টো দিকে সুভাষ আর গ্লেন মিলে ততক্ষণে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে ফেলেন। পরের মরসুমের জন্য ইস্টবেঙ্গলের দিকে ঝুঁকে থাকা ত্রিনিদাদ টোবাগোর স্ট্রাইকার এ দিন হ্যাটট্রিক করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে সুনীল ছেত্রী, ড্যারেল ডাফির সঙ্গে একই সারিতে ঢুকে পড়লেন। তিন জনই এখনও পর্যন্ত ১৩টি করে গোল করেছেন।

ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে হতাশ গলায় সঞ্জয় বললেন, “আমাদের দলের ফুটবলাররা খেলতে না পারলে কী করা যাবে! ডিফেন্স এত খারাপ খেলেছে, যা চোখে দেখা যায় না। গোলও মিস করেছে জোসিমাররা। পাঁচ গোল খাওয়ার পর কি আর ম্যাচ জেতা যায়?”

মহমেডানের হাতে আর মাত্র একটি ম্যাচ রয়েছে। মুম্বই এফসি-র বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে পেন-জোসিমারদের। সেই ম্যাচ জিতলেও মহমেডানের পয়েন্ট হবে ২৪। এই মুহূর্তে আই লিগের যা পরিস্থিতি তাতে ২৪ পয়েন্টও কিন্তু অবনমন বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন