মাঠের বাইরে লেগে গেল ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার

প্র্যাকটিসে নেমেই মেসি- ০ : ‘রোনাল্ডিনহো’-৫

একই রকম তো দেখতে! সেই লম্বা কোঁকড়া চুল। সেই মোটা কালো হেডব্যান্ড। শিশুসুলভ হাসি দিলে দাঁত তো একই রকম ভাবে বেরিয়ে পড়ছে। হাইটটাও প্রায় এক। লিওনেল মেসির প্র্যাকটিসে তা হলে কি এসে পড়লেন এক সময় তাঁর বার্সার সিনিয়র সদস্য? মেসি-যুগের আগে যাঁর স্কিলকে বিগত দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে ধরা হত? মাঠে কি তা হলে রোনাল্ডিনহো গাউচো?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৪:১৯
Share:

একই রকম তো দেখতে!

Advertisement

সেই লম্বা কোঁকড়া চুল। সেই মোটা কালো হেডব্যান্ড। শিশুসুলভ হাসি দিলে দাঁত তো একই রকম ভাবে বেরিয়ে পড়ছে। হাইটটাও প্রায় এক।

লিওনেল মেসির প্র্যাকটিসে তা হলে কি এসে পড়লেন এক সময় তাঁর বার্সার সিনিয়র সদস্য? মেসি-যুগের আগে যাঁর স্কিলকে বিগত দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে ধরা হত?

Advertisement

মাঠে কি তা হলে রোনাল্ডিনহো গাউচো?

এক ঝলক দেখলে তেমনই মনে হবে। কিন্তু ব্রাজিলের বিখ্যাত দশ নম্বর ইনি নন। ইনি রোনাল্ডিনহোর লুক-অ্যালাইক। যাঁকে প্রথমে দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন লিও মেসিও!

বৃহস্পতিবার আর্জেন্তিনার প্র্যাকটিসে একের পর এক কাণ্ড ঘটতে থাকে। প্রথমে মাঠে ঢুকে পড়েন টাক-মাথা এক সাপোর্টার। এবং মেসিকে হাতের কাছে পেয়ে চলমান কিংবদন্তির জুতো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেন! যা দেখে হাসতে শুরু করেন মেসি। ওই পাগল সমর্থককে জড়িয়ে ধরেন। তার পর নিজের আর্জেন্তিনা সোয়েটার খুলে দিয়ে দেন। সিকিউরিটি গার্ড এসে ওই সমর্থককে সরিয়ে নিয়ে যেতে না যেতেই আবির্ভাব ‘রোনাল্ডিনহোর’।

সিকিউরিটির বজ্রআঁটুনি পেরিয়ে মাঠে যিনি দৌড়তে দৌড়তে ঢুকে পড়লেন। ছুটে গেলেন মেসির দিকে। আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার মুখচোখ ততক্ষণে বিস্ফারিত।

মজার হচ্ছে, রবিনসন অলিভেরা নামের এই ভদ্রলোক রোনাল্ডিনহোর পেশাদার ‘ডাবল’ হিসেবেই কাজ করেন। এবং মেসির সঙ্গে তাঁর যা কথাবার্তা হল, সেটাও প্রবল আকর্ষক। মেসি নাকি তাঁকে দেখে এতটাই অবাক হয়ে যান যে বলতে থাকেন, আরে তোমাকে দৌড়তে হবে না। আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি। তুমি রোনাল্ডিনহো! “ও আমাকে বলছিল, তুমি দৌড়ে আসছ কেন আমাকে দেখার জন্য? আসলে ও বুঝতেই পারেনি আসল রোনাল্ডিনহো ওর দিকে দৌড়ে যাচ্ছে না,” পরে বলেন রবিনসন। যিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, মোটেও ব্যাপারটা আগে থেকে প্ল্যান করে তিনি করেননি। শুধু লিও মেসির হাতটা ধরতে চেয়েছিলেন!

“যখন মেসি আমার হাতটা ধরল, আমি ঝুঁকে পড়ে ওকে কুর্নিশ করলাম। অসম্ভব আবেগের একটা মুহূর্ত ছিল,” বলছিলেন রবিনসন। যে হাত ধরার জন্য মাঠের পাঁচিল টপকে আসতে গিয়ে তাঁর হাত কাটল। কিন্তু তাতে রবিনসনের কোনও দুঃখ নেই। তাঁর মনে হচ্ছে, মেসির হাত ধরার জন্য যদি হাত কাটে, তো কাটুক! তা হলে আজকের পর মেসি না রোনাল্ডিনহো? রবিনসনের কাছে কে আগে?

“রোনাল্ডিনহো অফ কোর্স!”

এত পর্যন্ত পড়লে মনে হবে ‘রোনাল্ডিনহো’ দিয়ে বোধহয় ব্রাজিল স্বাগত জানাল চিরশত্রুদের। মেসির সিনিয়রের লুক-অ্যালাইককে হাজির করিয়ে বোধহয় দিতে চাইল সম্প্রীতির বার্তা। কিন্তু সেটা মোটেও ঠিক নয়। বরং আর্জেন্তিনা প্র্যাকটিসে নামতে না নামতেই টের পেয়ে গেল আগামী এক মাস শুধু মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, মাঠের বাইরের ব্রাজিল সমর্থকদের সঙ্গেও তাদের ম্যাচ খেলতে হবে।

বেলো হরাইজন্তের ইন্ডিপেন্ডেন্সিয়া স্টেডিয়ামে আর্জেন্তিনা প্র্যাকটিসে নামার সময় বিদ্রূপাত্মক সব আওয়াজ শুরু হয়ে যায়। যা আরও বাড়তে থাকে মেসি, দি’মারিয়াদের মাঠে নামতে দেখে। অবশ্যই এঁরা বেলো হরাইজন্তে শহরের স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু মেসি বা দি’মারিয়া কেউই বিদ্রূপের মুখে পড়ে মেজাজ হারাননি। বরং নিজেদের ফ্যানদের দিকে হাত নাড়িয়ে ট্রেনিংয়ে মন দেন। এবং নিজেদের দেশের মহানায়কদের এমন অস্বস্তিকর অবস্থা দেখে উপস্থিত আর্জেন্তিনীয় সমর্থকরা পাল্টা দিতে শুরু করেন। রোজারিওর সেবাস্তিয়ান যেমন বলতে থাকেন, “যে টিমটা মাঠে এখন প্র্যাকটিস করছে, ওরাই বিশ্বকাপ আনবে।” সঙ্গে যোগ করেন, “বিদ্রূপগুলো শুনুন। ভাবুন তো, এক মাসের মধ্যে এই দেশ থেকেই যদি আমরা বিশ্বকাপ নিতে পারি, তা হলে তার চেয়ে মিষ্টি আর কী হতে পারে?” যার আবার পাল্টা দিয়ে দেন জনৈক ব্রাজিল ফ্যান, “ওরা আসুক এখানে। ট্রেনিং করুক। তার পর ওরা নিজেরাই বুঝে যাবে, টুর্নামেন্টের আসল রাজা কে!”

আসল নয়। তবে হুবহু রোনাল্ডিনহোর মতো দেখতে। আর্জেন্তিনা প্র্যাকটিসে ঢুকে পড়লেন জনৈক
ব্রাজিলীয়। পৌঁছে গেলেন মেসির কাছে। অবশ্য দ্রুত ব্যবস্থাও নিলেন নিরপত্তারক্ষীরা। ছবি: রয়টার্স

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন