আম্পায়ারিং নিয়ে বেনজির ভাবে সরব ধোনি

ফিল হিউজ স্পিরিট এখন তিক্ততার সিরিজ

সিরিজ শুরুর আগে বলা হচ্ছিল এটা খেলা হবে নাকি ফিল হিউজ স্পিরিটে! এক-একটা করে দিন যাচ্ছে আর এমন তিক্ততা বাড়ছে যে, অষ্টম দিনের মাথায় সেটা মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে গিয়েছে। দুই শিবিরের প্লেয়াররা ছাড়া জড়িয়ে পড়ছেন স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারক, ক্যাটারার, এমনকী ভাষ্যকাররা! গতকালই ঠিকঠাক নিরামিষ খাবার না পাওয়ায় ইশান্ত শর্মা-রায়নাদের স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়ে খেতে হয়েছিল।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

ব্রিসবেন শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪২
Share:

সিরিজ শুরুর আগে বলা হচ্ছিল এটা খেলা হবে নাকি ফিল হিউজ স্পিরিটে!

Advertisement

এক-একটা করে দিন যাচ্ছে আর এমন তিক্ততা বাড়ছে যে, অষ্টম দিনের মাথায় সেটা মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে গিয়েছে। দুই শিবিরের প্লেয়াররা ছাড়া জড়িয়ে পড়ছেন স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারক, ক্যাটারার, এমনকী ভাষ্যকাররা!

গতকালই ঠিকঠাক নিরামিষ খাবার না পাওয়ায় ইশান্ত শর্মা-রায়নাদের স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়ে খেতে হয়েছিল। অপরাধদমন শাখার লোকেরা তখন বলেন, আমরা আপনাদের পাবলিকের মধ্যে ম্যাচ চলাকালীন এ ভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। আমরাও তা হলে আপনারা খাওয়ার সময় সঙ্গে থাকব। শনিবারের আনন্দবাজারে সেই খবর এক্সক্লুসিভ বার হওয়ার পর এ দিন জানাজানি হতে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে ভারত অভিযোগ করে প্র্যাকটিস উইকেট নিয়ে। এর পর ইয়ান চ্যাপেল এবিসি রেডিওয় বলতে শুরু করেন, ভারত এত কাঁদুনি গাইছে কেন! এক বার বলছে খাবার নেই। এক বার বলছে প্র্যাকটিস উইকেট নেই।

Advertisement

একটু পরেই বিরাট কোহলি দ্বিতীয় স্লিপে স্টিভ স্মিথের ক্যাচ ফেলেন। চ্যাপেল তখন আক্রমণ শুরু করেন কোহলিকে। “তুমি স্লিপে এত ক্যাচ ফ্যালো। তার পরেও স্লিপে গিয়ে দাঁড়াও কেন? স্লিপে তো তুমি ফেলবেই কারণ তোমার স্লিপে ক্যাচ ধরার টেকনিকই নেই।” ওয়ার্ন এই সময় বাড়তি তথ্য জোগান যে, ভারতের গত চারটে বিদেশ সফরে স্লিপে ৩০ ক্যাচের মধ্যে পনেরোটা নাকি কোহলি ফেলেছেন।

চ্যাপেল একটু পর কথায় কথায় তেন্ডুলকরকেও টেনে আনলেন। কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা তেন্ডুলকরকে স্মরণ করছেন অন্য কারণে! তাঁদের ধারণা, মাঠে এ বার ভিড়ই হয়নি সচিন না থাকায়। ক্রিকেট বিপণনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা বলছেন, “যেখানে তেন্ডুলকর নেই ইন্ডিয়া টিমে, সেখানে টিকিটের দাম অ্যাসেজ সিরিজের সমান করাটাই তো মূর্খামি হয়েছে।”

চ্যাপেল কিন্তু এ সব শ্রেষ্ঠত্বের প্রিজমে এখন মরাঠিকে দেখতেই রাজি নন। সহজবোধ্য কারণে। বললেন, “তেন্ডুলকরের অভ্যেস ছিল এই রকম দুমদাম করে স্লিপে দাঁড়িয়ে যাওয়া। একবার তো রাহুলের মতো এত ভাল স্লিপ ফিল্ডারকে ও ফার্স্ট স্লিপ থেকে সেকেন্ডে সরিয়ে দিল। রাহুলের স্লিপে ক্যাচ ধরার বিশ্বরেকর্ড আছে। বেচারিকে কিনা চলে যেতে হল সেকেন্ড স্লিপে। আমি রাহুল হলে বলতাম, তোমার ডান দিকে তাকাও। যে দিকে দু’চোখ যায়। তার পর যে কোনও একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ো। এই জায়গাটা তোমার নয় ভাই।”

তেন্ডুলকরকে নিয়ে না হয় বোঝা গেল আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার পর চ্যাপেল ভাইদের জ্বালা। কোহলি হঠাত্‌ কেন চক্ষুশূল হয়ে উঠলেন বোঝা যাচ্ছে না। মিচেল জনসন ব্যাট করতে নামার পর একটা আবেদন নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। কোহলি এগিয়ে এসেছেন। ওয়ার্ন চ্যানেল নাইনে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, “তুমি কেন এসেছ বিরাট? ক্যাপ্টেনকে কথা বলতে দাও। তুমি তো ক্যাপ্টেন না। বারবারই যে কোনো ঝামেলায় তুমি এগিয়ে আসছ কেন?”

তা-ও তো ম্যাচের শেষে ধোনি যে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রকাশ্য অসন্তোষ প্রকাশ করলেন, সেটা এঁরা জানেন না। ধোনি আম্পায়ারিং নিয়ে প্রকাশ্যে বোধহয় বহু বছর পর এমন সরব হলেন। “প্রত্যেকটা ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে দিচ্ছে এটা কেমন কথা?”

শুনলাম অজি মিডিয়া কাল ভারতীয়দের স্টেডিয়ামের বাইরে প্রতিবাদ-সহ এই খেতে বেরিয়ে যাওয়া, প্র্যাকটিস উইকেট নিয়ে অভিযোগ আর ধোনির আম্পায়ারিং সমালোচনা নিয়ে ত্রিমুখী আক্রমণে যাচ্ছে। তা হলে পরের টেস্ট যতই ক্রিসমাসের পরের দিন শুরু হোক, বড়দিনের আবহেও উত্তাপটা বেড়েই থাকল!

শিখর-রহস্য

ম্যাচের আগে প্র্যাকটিসে চোট পান শিখর ধবন। তিনি নামবেন, না কোহলি সে নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়
ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। যা নিয়ে পরে মুখ খুললেন অধিনায়ক এবং টিম ডিরেক্টর। শুনলেন গৌতম ভট্টাচার্য।

ধোনি শিখর নামবে কি না, এটা নিয়ে আমাদের ড্রেসিংরুমে প্রচণ্ড কমিউনিকেশনের অভাব হয়েছিল। এটা ড্রেসিংরুমে একটা অশান্তি, একটা আনরেস্ট তৈরি করেছিল। এ রকম সময় ড্রেসিংরুমে একটা প্রশান্তি বিরাজ করা উচিত, যা এ ক্ষেত্রে হয়নি। একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যায়। (ধোনি এ কথা বলায় সাংবাদিকরা আশ্চর্য হয়ে পড়েন।) আমি যখন ব্যাট করতে যাই তখন দেখি ধবন ফিরছে। বলল ওর লেগেছে। কিন্তু তখনও জানি না, লেগেছে বলে যে নামতে পারবে না। তার পর কিছুক্ষণ বাদে জানলাম যে ও নামতে পারবে না। ততক্ষণে আমি ড্রেসিংরুমে ফেরত এসেছি কিন্ত খেলা শুরু হতে আরও মিনিটপাঁচেক বাকি। বিরাটকে বলি, তাড়াতাড়ি নামো। ওই মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে নেমে পড়ার জন্য বেচারি কোনও মানসিক প্রস্তুতিই পায়নি। কিন্তু এটা হল আমি আর ডানকান যেহেতু প্র্যাকটিস এরিনায় ছিলাম, ড্রেসিংরুমের ভেতরে ছিলাম না।

এ বার প্রশ্ন ওঠে, শাস্ত্রী তা হলে তখন কী করছিলেন? তিনি কোহলিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আগে নেননি কেন?
শাস্ত্রী: ধোনি ব্যাপারটা বোঝেনি। ও আসলে তখন প্র্যাকটিস করছিল বলে জানত না যে, ধবনকেই আমরা পাঠাতে চাইছিলাম। কিন্তু ফিজিওকে ডেকে ওকে দেখানোর পর শিখর বলতে থাকে, তখনও হাতে যন্ত্রণা হচ্ছে। তাই বিরাট নামল। এর মধ্যে কোনও কমিউনিকেশন গ্যাপ নেই। কোনও রহস্যও নেই। বললাম তো, ধোনি বাইরে ছিল বলে এখানে কী হচ্ছিল দেখতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন