গ্রুপ পর্ব শেষ আর প্রাথমিক লক্ষ্যটাও আমরা ছুঁয়ে ফেলেছি। নক আউট পর্বের ছাড়পত্র জোগাড়ের কথা বলছি। এটা ঠিক যে আমাদের কাছে সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু এখন যা দিনকাল পড়েছে, বাংলাদেশ যে ভাবে উঠছে, অ্যাসোসিয়েট দেশগুলো যে ভাবে দিন দিন নিজেদের পারফরম্যান্সের উন্নতি ঘটাচ্ছে, তাতে কোনও কিছুই আর ধরে নিয়ে বসে থাকার উপায় নেই!
আমাদের নক আউটে ওঠার রাস্তাটা খুব মসৃণও ছিল না। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচ খুবই কঠিন ছিল। ওরা নিজেদের দেশে, নিজেদের চেনা পরিবেশে খেলছিল। গ্রুপে একটাও ম্যাচ না হেরে নক আউটে যেতে পারলে খুবই ভাল হত। কিন্তু বিশ্বকাপে যে মানের সব টিম খেলছে, কয়েকটা ধাক্কা আসারই ছিল।
নিজের দিকটা নিয়ে বলি। এমন রানের মধ্যে থাকতে পারাটা খুবই ভাল ব্যাপার। ক্রিকেট নিয়ে বরাবরই খেটেছি আমি। চেষ্টা করেছি কী ভাবে নিজের খেলাকে আরও উন্নত করব। আজ সেই অক্লান্ত খাটাখাটনি, রগড়ানির দাম পাচ্ছি। যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা একটা কথা আমাকে খুব বলতেন। বলতেন, পরিবর্তনকে একদম ভয় পাবে না। বদলাতে ভয় পাবে না। ওটা আমার জীবনের একটা বিশাল শিক্ষা বলতে পারেন। আসলে আমার কেরিয়ারের সব সময়ই বাবা আমাকে সাহায্য করে গিয়েছেন।
গত দু’বছর ধরে যেমন শুধু ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টিতে নিজের ক্রিকেটকে আরও ধারালো করার জন্য খেটেছি। কয়েকটা নতুন স্ট্রোক আনলাম, কয়েকটায় ফাইন টিউন করলাম। মানে, একটু এ দিক ও দিক বদল আর কী। সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে আরও ক্ষুরধার করার চেষ্টা করে গিয়েছি। এগুলোই আমাকে আরও ধারাবাহিক করেছে। ভাল স্ট্রাইক রেট রেখে বড় রান করতে সাহায্য করছে।
এখন অনেকেই দেখছি আমাকে জিজ্ঞেস করছে, কেন অবসর নিচ্ছি। কিন্তু অবসর কেউ ফর্মের জন্য নেয় না। অবসর নির্ভর করে সময়ের উপর, নিজের ভাবনার উপর। যে সত্যিই এখন ভাবছি কি না, এ বার সরে যাওয়া উচিত। তুমি খেলতে পারছ, না পারছ না, সেটার উপর কখনও অবসরের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে না। কয়েকটা কারণের জন্য আমার মনে হচ্ছে এটাই সঠিক সময়। আর কোনও ভাবে নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাবও না আমি। ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে বিশ্বকাপের পরই অবসর নেব। আর অগস্টে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের পর নেব টেস্ট ক্রিকেট থেকে।
তবে তার পর ক্রিকেট একেবারে ছেড়ে দেব, এমন নয়। নিজের কেরিয়ারকে আস্তে আস্তে গুটোতে চাই, চাই কেরিয়ারের শেষ লগ্নকে উপভোগ করতে। তাই আগামী কয়েকটা বছর সারের হয়ে খেলার ইচ্ছে আছে আমার।
যাক, এখন থাক সে সব। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বকাপ। সিডনিতে পরের সপ্তাহে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের উপরই এখন নিজের যাবতীয় ফোকাস রাখছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধটা খুব কঠিন হবে। কিন্তু প্রবল চাপের মধ্যে ভাল খেলার রেকর্ড আমাদের আছে। আশা করি ওই কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়লে নিজেদের খেলার মানও বাড়িয়ে ফেলব আমরা। আসল কথা হল ম্যাচটাকে স্রেফ উপভোগ করে আমাদের ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটটা খেলে যাওয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার জয়
মাত্র এক রানের জন্য সেঞ্চুরি হল না এবি ডে’ভিলিয়ার্সের। সাড়ে তিনশো পেরোনোও হল না দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু অমিরশাহির বিরুদ্ধে ১৪৬ রানে জেতার পথে বৃহস্পতিবার ব্যাটিং প্র্যাক্টিসটা ভালই সেরে নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকানদের তোলা ৩৪১-৬ রানের জবাবে আমিরশাহির ইনিংস শেষ হয়ে গেল ১৯৫ রানে। তবে বিশ্বের সেরা পেসার ডেল স্টেইনের নেতৃত্বাধীন সেরা বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকলেন আমিরশাহির ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যাটসম্যান স্বপ্নিল পাটিল। সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ৪৭.৩ ওভার পর্যন্ত লড়াই চালাতে পারাটা উত্সাহ দেবে আমিরশাহির মতো টিমকে।