একা পথ চলা। লিসবন বিমানবন্দরে সিআর সেভেন। শনিবার। ছবি: এএফপি
আড়াই সপ্তাহে যে এ ভাবে তাঁর পৃথিবী বদলে যাবে স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ব্রাজিল বিশ্বকাপ অভিযান সেরে দেশে ফেরার পর সমর্থকদের মাতামাতি তো দূরের কথা, লিসবন বিমানবন্দরে বিশ্বের সেরা প্লেয়ারকে বাড়ি নিয়ে যেতেই কেউ আসেননি। শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সি চেপে বাড়ি ফিরতে হয় পর্তুগাল মহাতারকাকে।
দিন কয়েক আগেই বিশ্বকাপের গ্রুপ থেকে বিদায় নেওয়া আরেক ইউরোপিয়ান টিম ইংল্যান্ডের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স নিয়ে একটা টুইট বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘মেসি আর্জেন্তিনাকে বইছেন, নেইমার ব্রাজিলকে আর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ দেশে ফেরার পথে বইছে ইংল্যান্ড টিমটাকে।’ ওয়েন রুনিদের মতো একটাও ম্যাচ না জিতে বিদায় নেওয়ার মতো খারাপ না হলেও রোনাল্ডোদের পারফরম্যান্সে সমর্থকরা যে কতটা হতাশ সেটা বিমানবন্দরের ছবিতেই পরিষ্কার। হাতে গোনা যে ক’জন সমর্থক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরাও বেশিরভাগই চুপচাপ ছিলেন। যেন শোকের আবহ।
প্রচারের আলোয় থাকা রোনাল্ডোও কি দেশে ফিরে এই অভ্যর্থনা আশা করেছিলেন? দিন দু’য়েক আগেই তো ব্রাজিলে রিয়াল মাদ্রিদ তারকার হোটেলের ঘরে এক খুদে ভক্তের ঢুকে পড়া নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। রোনাল্ডো তখন হোটেলে ছিলেন না। সেই সুযোগে ব্যালকনি থেকে বছর পনেরোর রোনাল্ডো ভক্ত সটান রোনাল্ডোর ঘরে ঢুকেই শুধু ক্ষান্ত হননি, প্রিয় তারকার বিছানাতেও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। রোনাল্ডো পরে নিজের ঘরে সেই কিশোর ভক্তকে আবিষ্কার করে অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকেননি। বরং ছবি তোলার আবদার মেনে তাঁকে অটোগ্রাফও দেন।
এ দিন চিত্রটা ছিল পুরো উল্টো। কোথায় ভক্ত, কথায় তাঁকে নিয়ে সমর্থকদের হুড়োহুড়ি! সতীর্থদের বিদায় জানিয়ে ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা ব্যাগ আর বুট ট্যাক্সিতে ছুড়ে দিয়ে একাই উঠে যান। যেন বেড়াতে এসেছেন শহরটায়। অবশ্য এ দিনও নিজেদের হতশ্রী পারফরম্যান্স নিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না পর্তুগাল প্লেয়ারদের। রোনাল্ডো যেমন বিমানবন্দর থেকে বিদায় নেওয়ার আগে বলেন, “এটাই ফুটবল। আমরা মাথা উচু করে বিদায় নিচ্ছি। সাধ্যমত চেষ্টা করেছি।”
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের উইঙ্গার নানিও একই সুরে বলে যান, “আমাদের লক্ষ্যই ছিল বিদায় নিলেও মাথা উচু করে যাব।” ডিফেন্ডার পেপে আবার বলেন, “আমরা একই ভুল আবার করতে পারব না। আমরা পরের রাউন্ডে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দুর্ভাগ্যবশত সেটা সম্ভব হয়নি।” তবে ভুলটা ঠিক কী? সেটা ভাঙেননি জার্মানি ম্যাচে লালকার্ড দেখা রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার।
এক মাত্র পর্তুগাল মিডফিল্ডার জোয়াও মৌতিনহো ব্যর্থতার দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন ব্রাজিলের মানাউসের অত্যধিক তাপমাত্রার উপর। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। “৩০ মিনিট পরই প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবে সেটা তো সবাইকেই সহ্য করতে হয়েছে। তাই এটা কোনও অজুহাত হতে পারে না।”
ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে কেন প্রস্তুতি শিবির করেছিল পর্তুগাল সে নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। মৌতিনহো সাফাইয়ে বলেন, “কাম্পিনাসের মতো আবহাওয়া বলেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুতি শিবির করা হয়েছিল। বিশ্বকাপে সফল হলে এ সব প্রশ্ন উঠত না।”