লক্ষ্মী: অপরাজিত ১০৫
প্রথম ইনিংস লিড তখন খরচের খাতায় চলে যাওয়ার রাস্তায়। হাতে আসা তিন পয়েন্ট শেষ পর্যন্ত হাতে থাকবে কি না, আদৌ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। একশোর কিছু বেশি লিড আছে ঠিকই, কিন্তু বাংলা যে আবার দুঃস্বপ্নের খাদ থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে। ৮-১ অবস্থায় চতুর্থ দিন খেলা শুরু করে কয়েক ওভারের মধ্যেই ৫৫-৪। রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৫), অরিন্দম দাস (২), সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (২৬), মনোজ তিওয়ারি (৪), চার ব্যাটিং-ভরসাই ড্রেসিংরুমে। হাতে টেলএন্ডার-সহ ছয় উইকেট, সামনে মুনাফ পটেলদের হিংস্র বোলিং সামলে গোটা একটা দিন টিকে থাকার যুদ্ধ। বাংলা শিবিরে তখন রীতিমতো টেনশন। ব্যাটিং-ধস আটকাতে না পারলে কী হবে? দেড়শোর কাছাকাছি টার্গেট থাকলে ঘরের মাঠে বরোদার সেটা তুলে দিতে কতক্ষণ?
নাহ, বরোদা ব্যাটিংয়ের সুযোগই পায়নি আর। ২৪৬-৯ স্কোরে বাংলা যখন দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয়, ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছে— বাংলা ৩, বরোদা ১। এবং হঠাত্ তৈরি হওয়া হারের আশঙ্কার কালো মেঘ থেকে বাংলাকে রোদ-ঝলমলে আকাশে নিয়ে যাওয়ার নায়ক— লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
রঞ্জি মরসুমের প্রথম ম্যাচে নামার আগে থেকেই জ্বরে ভুগছেন বাংলা অধিনায়ক। কড়া ওষুধ খেয়ে খেলে যাচ্ছেন। এ দিনও সকালের দিকে শরীর খুব ভাল ছিল না, তাই ব্যাটিং অর্ডারে সাতে নেমে এসেছিলেন। সেই অবস্থায় আড়াই ঘণ্টারও বেশি ব্যাট করে ১১৯ বলে অপরাজিত থাকলেন ১০৫ রানে। মধ্যে আবার একটা সময় দেখতে হল, আট বলের ব্যবধানে উল্টো দিকে তিনটে উইকেট চলে যাচ্ছে। শেষ সঙ্গী তখন এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান ইরেশ সাক্সেনা।
১৬টা বাউন্ডারি, তিনটে ছয় দিয়ে সাজানো থাকল চাপের মুখে আসা বঙ্গ অধিনায়কের মরসুমের প্রথম সেঞ্চুরি। কিন্তু ব্যক্তিগত সাফল্যে ডুবে থাকার অভ্যেসটা তাঁর কোনও দিনই ছিল না। এ দিনও লক্ষ্মীর মুখে নিজের ইনিংস নিয়ে উচ্ছ্বাস বা সন্তুষ্টির চেয়ে অনেক বেশি করে দুই পার্শ্বনায়কের প্রশংসা। “শ্রীবত্সের তিরিশটা রান দরকারের সময় এসেছে। আর শুভজিতের এটাই প্রথম রঞ্জি ম্যাচ। দারুণ খেলেছে ও। খারাপ লাগছে, একটুর জন্য হাফসেঞ্চুরিটা পেল না। ওদের জুটিটা না হলে একটা সময় মনে হচ্ছিল, অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে,” ফোনে বলছিলেন লক্ষ্মী।
অধিনায়ক হিসেবে রঞ্জি অভিযান শুরুর লগ্নে যিনি সবচেয়ে খুশি টিমের ব্যাটিং নিয়ে। খুশি, রঞ্জি মঞ্চে শ্রীবত্স গোস্বামীর পরিণতিবোধ দেখে। খুশি, তরুণ শুভজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাটে ভবিষ্যত্ সম্ভাবনার আভাসে। খুশি, ম্যাচের সেরা সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাটিং মহাকাব্যে। বলছিলেন, “এরা সবাই ভাল ফর্মে আছে। আশা করছি এ বারের রঞ্জিতে ধারাবাহিক ভাল খেলবে।”
আর যদি সেটা না হয়? তা হলে টিমকে বাঁচাবে কে? কে আবার— বঙ্গ ক্রিকেটে ভরসার নাম তো আজও ওই একটাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৪৫৫ ও ২৪৬-৯ ডিঃ
(লক্ষ্মী ১০৫, শুভজিত্ ৪৪, শ্রীবত্স ৩০, দীপক হুডা ৩-৩৯)
বরোদা ৩৫৪।