ভারতকে মঙ্গলবার মাত্র ১৫৩ রানে শেষ হয়ে যেতে অনেকে আঁতকে উঠবেন সন্দেহ নেই। এটাও জানা যে, স্টিভ ফিনকে বল বুক পর্যন্ত তুলতে দেখে কেউ কেউ এটাও ভাবছেন, বিশ্বকাপে তা হলে এরা মর্নি মর্কেলের সামনে কী করবে? একটা স্টিভ ফিন-জিমি অ্যান্ডারসন সামলানো যাচ্ছে না, ম্যাচ হারতে হচ্ছে ন’উইকেটে, স্টেইন-মর্কেল জুটির সামনে পড়লে কোথায় দাঁড়াবে এই ব্যাটিং?
আমি আজকের ১৫৩ নিয়ে খুব একটা আতঙ্কে নেই। একদিন হয়েছে। রোজ রোজ হবে না। আমি বরং আতঙ্কে ধোনিকে দেখে। বিশ্বকাপের চব্বিশ দিন আগেও ওর টিম কম্বিনেশন খুঁজে না পাওয়া দেখে।
স্টুয়ার্ট বিনিকে দিয়ে বোলিং ওপেন করানো দেখে প্রচুর সমালোচনা চলছে। আমি বলব, ওটা বোলারদের কম্বিনেশন নিয়ে ধোনির বিভ্রান্তির ফল। ধোনি দেখে নিতে চাইছিল স্টুয়ার্ট নতুন বলে কী রকম করে। কারণ উমেশ, শামি, ভুবিকেউ তো ওকে নতুন বলে উইকেট দিতে পারছে না। ক্যাপ্টেনকে ভরসা দিতে পারছে না।
ধোনিকে যতটুকু আমি চিনি, তাতে টিমে খুব বদল ও চায় না। বরাবরই ও চায় সেট এগারো-বারো জন ধরে এগোতে। বড়জোর একটা বা দু’টো বদল করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে টিমের কম্বিনেশন কী হওয়া উচিত, দেখে মনে হচ্ছে ধোনি এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। অম্বাতি রায়ডুকে এ দিন তিন নম্বরে পাঠিয়ে দিল। আর রায়ডু পারল না। বিশ্বকাপের আগে টিম নিয়ে ধোনির এমন নাড়াচাড়াতে খুব ভুল কিছু দেখছি না। আমার একটাই প্রশ্ন, তুমি যখন সমস্ত রকম কম্বিনেশনই ভেবে দেখছ, তা হলে ওপেনিংটা নিয়ে কেন ভাবছ না?
ভারত এ দিন ১৫৩ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বলব, ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। টিমে রাহানে, রোহিত, কোহলির মতো কিছু ক্রিকেটার আছে যারা ব্যাকফুটে খুব ভাল। এখন রায়নাও খারাপ করে না। নিজের একটা স্টাইল আমদানি করেছে। সফল এরা হবে। আর এটা ইংল্যান্ডের উইকেট নয়। অস্ট্রেলিয়ার উইকেট। এখানে বল সুইং করবে না। গতিতে আসবে, বাউন্স বেশি থাকবে পিচে। যে ব্যাকফুটে ভাল, সে পারবে সামলে দিতে। গণ্ডগোলটা আসলে হচ্ছে ওপেনিংয়ে। শিখর ধবনের আত্মবিশ্বাস এতটাই তলানিতে যে, ও বুঝে উঠতে পারছে না কী করা উচিত। এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যখন কোনও ক্রিকেটার যায়, তখন সে প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকে। রান পাচ্ছে না, মিডিয়া তুলোধোনা করছে, সমালোচকরা আক্রমণ করছে এত কিছু সামলে পুরনো ফর্ম ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। বোর্ডের উচিত ওকে এখন ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া। বলা উচিত, তোমাকে এক সপ্তাহ ক্রিকেটের মধ্যে থাকতে হবে না। ঘুরে এসো। তার পর আবার খেলবে। যাতে ওর লাভ হবে। আবার টিমও দেখে নিতে পারবে ওর পরিবর্তে কাকে ভাবা যায়।
যেমন স্টুয়ার্ট বিনি।
জানি, অনেকেই অবাক হবে। কিন্তু বিনির ব্যাটিং এ দিন সবচেয়ে জমাট দেখিয়েছে। ও ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রমাণ করেছে সুইংটা ম্যানেজ করতে পারে। আবার এ দিন দেখাল, বাউন্স সামলাতেও অসুবিধে হয় না। এটা ঠিক যে, নতুন বলের সামনে পড়লে কী হবে জানা নেই। কিন্তু মনে হয় খুব খারাপ করবে না। আর ওকে দিয়ে ওপেন করালে ভারতের হাতে একটা অপশন খুলে যাচ্ছে চার পেসার, দুই স্পিনার নিয়ে নামার। ২০০৩ বিশ্বকাপে দাদিকে (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) তো দেখেছিলাম এমনই একটা ফাটকা খেলে জিতে বেরোতে। রাহুল দ্রাবিড়কে দিয়ে কিপিং করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করায় দাদি বলেছিল, “ভাবিস না তোকে নিয়ে নেগেটিভ কিছু ভাবছি। রাহুল কিপ করলে আমার একটা অপশন খুলে যাবে।” ধোনিও দেখুক না একবার করে কী দাঁড়ায়।
আরও একটা ব্যাপার বলব। তিন নম্বরটা নিয়ে ধোনির একটু গভীর ভাবে ভাবা দরকার। এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে বিরাট এখন থেকে চারেই নামবে। তিনে এমন কাউকে চাই যে দশ ওভারে দু’টো উইকেট পড়ে গেলে যেমন সামলে দেবে, আবার দরকারে শট মেরে রানটাও তুলবে। রোহিত বা রাহানের মধ্যে নির্দিষ্ট করে এখন থেকেই এক জনকে খেলানো দরকার। রোহিত এ দিন চোটের কারণে খেলতে পারল না। পরের ম্যাচে ওকে দেখা যেতে পারে।
আশা করি, এগুলো মিটে যাবে। যে সমস্যাটা মেটার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না বোলিং। এ দিনও উমেশকে দেখলাম সেই ওভারে দু’টো ফ্লিক করার বল দিচ্ছে। বৈচিত্র নেই। শামির মধ্যেই সেই আগের শার্প ব্যাপারটা পাচ্ছি না। পরিষ্কার বলছি, বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলিং কেমন করবে, অনেকটাই এখন ইশান্ত শর্মা সুস্থ হওয়া না হওয়ার উপর নির্ভর করে আছে।