বরোদার বিপ্লব আর বিরোধীদের বাউন্সারে কঠিন পিচে শ্রীনি

সুপ্রিম কোর্টে শুনানির ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে জোড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে গেলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সকাল সাড়ে দশটায় যখন শ্রীনি-মামলা উঠবে, তার কাছাকাছি সময়ে বোর্ডে শ্রীনির ‘অনুগত’ যোদ্ধাও নিজ-ভাগ্যের কথা সরকারি ভাবে জেনে যাবেন। বরোদা ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে এক নোটিশ মারফত বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল জেনে যাবেন তিনি আর বরোদা ক্রিকেটের ম্যানেজিং কমিটিতে নেই! আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

সুপ্রিম কোর্টে শুনানির ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে জোড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে গেলেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।

Advertisement

আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সকাল সাড়ে দশটায় যখন শ্রীনি-মামলা উঠবে, তার কাছাকাছি সময়ে বোর্ডে শ্রীনির ‘অনুগত’ যোদ্ধাও নিজ-ভাগ্যের কথা সরকারি ভাবে জেনে যাবেন। বরোদা ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে এক নোটিশ মারফত বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল জেনে যাবেন তিনি আর বরোদা ক্রিকেটের ম্যানেজিং কমিটিতে নেই! আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সকাল সাড়ে দশটায় যখন শ্রীনি মামলা উঠবে, তখন আদিত্য বর্মার হাতে থাকবে আইসিসি-র গঠনতন্ত্রের কপি! যা দেখিয়ে তিনি আদালতে আর্জি পেশ করবেন, কেন শ্রীনিকে আইসিসি-তে যেতে দেওয়া উচিত নয়।

Advertisement

এক দিকে বরোদা ক্রিকেট সংস্থা। অন্য দিকে চিরপরিচিত আদিত্য বর্মা। খুব সহজে, সুপ্রিম কোর্ট শুনানির আগে শ্রীনির জোড়া ধাক্কা।

বোর্ড সচিবের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ বেশ কয়েক মাস ধরেই তাঁর সংস্থায় পূঞ্জীভূত হচ্ছিল। বেশ কয়েকটা বৈঠকে পটেলকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা আটকে যাচ্ছিল বরোদা প্রেসিডেন্ট নিজের ‘ভেটো পাওয়ার’ ব্যবহার করে তাঁকে রেখে দেওয়ায়। কিন্তু আইনজীবীদের ‘ভোট’ আবার বিরোধী শিবির পেয়ে যাওয়ায় পটেল-অপসারণ আর আটকানো যায়নি। সরকারি কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পটেল বরোদা ক্রিকেট-প্রশাসনে এসেছিলেন কো-অপ্ট সদস্য হিসেবে। যা আইনত বৈধ নয়। বোর্ড সচিব-সহ চার জনকে তাই কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত কারণ শোনা গেল ভিন্ন। বরোদা ক্রিকেট কর্তাদের লক্ষ্য ছিল, বোর্ড নির্বাচনে সঞ্জয় পটেলকে সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করা থেকে আটকানো। ভোটাভুটি হলে বরোদার ভোট পটেলের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া। পটেলকে সরিয়ে দেওয়া মানে, বোর্ড নির্বাচনে বরোদার প্রতিনিধিত্ব অন্য কেউ করতে পারবেন। যিনি শ্রীনি-শিবিরের হবেন না।

ঘটনা হল, বরোদা প্রশাসনে পটেল বনাম তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর যুদ্ধটা নতুন নয়। মাস ছ’য়েক আগে এই ম্যানেজিং কমিটি তৈরির সময়ই তা বোঝা গিয়েছিল। রীতিমতো ভোটাভুটি করে কমিটি গঠন হয়। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর একটা ছিল অংশুমান গায়কোয়াড়-কিরণ মোরেদের। অন্যটা সমরজিৎ সিংহ গায়কোয়াড়-সঞ্জয় পটেলদের। কমিটি গঠনের সময় দেখা গিয়েছিল যে, সেখানে পটেল-শিবিরের লোক মোটে সাত। বিরোধীদের সতেরো! কিন্তু কয়েক মাস পরেই গণ্ডগোল বাঁধে। সংস্থার কেউ কেউ নাকি বলতে থাকেন যে, বরোদার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কোনও পদাধিকারীকে কোনও কমিটিতে তিন বছর থাকতে হয়। সেটা পটেল কোথায় ছিলেন? তার পরেও ম্যানেজিং কমিটি থেকে সরানো যাচ্ছিল না কারণ প্রেসিডেন্ট সমরজিৎ সিংহ গায়কোয়াড়ের সমর্থন। শেষ পর্যন্ত আইনজীবীদের সমর্থন পাওয়ার পরই গত রবিবার ঠিক হয়ে যায় যে, পটেল সহ চার-কে ‘বেআইনি অন্তর্ভুক্তি’-র কারণে সরানো হবে। শোনা যাচ্ছে, পটেলের বরোদা ক্রিকেট সংস্থার যুগ্ম-সচিব পদও যেতে চলেছে।

“মঙ্গলবার সবাই নোটিশ পেয়ে যাবেন। আমরা চেয়েছিলাম বরোদা প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন করতে। তাই এই সিদ্ধান্ত,” সোমবার সন্ধেয় ফোনে বলছিলেন বরোদা ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন সচিব স্নেহেল পারিখ। বস্তুত, তাঁকে হঠিয়েই সচিব পদে আবির্ভাব ঘটে সঞ্জয় পটেলের। পারিখ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, চাইলে বোর্ড সচিব আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু আদালতে গেলে পটেলকে তখন নিজের ভাবমূর্তি সম্পর্কে ভাবতে হবে। কারণ, তিনি তখন নিজের রাজ্য সংস্থার বিরুদ্ধে লড়বেন। রাতের খবর, সঞ্জয় পটেল আদালতে গিয়েছেন। “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে। লোয়ার কোর্টে গিয়ে আমি স্থগিতাদেশ চেয়েছি,” সোমবার রাতে সংবাদসংস্থাকে বলে দিয়েছেন বোর্ড সচিব।

বিহার সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা আবার আজ সুপ্রিম কোর্টে আবির্ভূত হচ্ছেন ভিন্ন অভিপ্রায়ে। শ্রীনকে তিন অস্ত্রে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য নিয়ে। হরিশ সালভে, নলিনী চিদম্বরম সহ সাত আইনজীবী সমেত।

তিনটে দাবি নাকি রাখা হবে। সুপ্রিম কোর্টে বন্ধ খামে যাদের নাম জমা করেছে মুদগল কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরু হোক। দ্বিতীয়ত আইপিএল অপারেশনাল রুল উপস্থিত করে বলা হবে, নিয়ম মেনে চেন্নাই সুপার কিং এবং রাজস্থান রয়্যালসকে বহিষ্কার করা হোক। তৃতীয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইসিসি গঠনতন্ত্র দেখিয়ে নাকি বলা হবে যে, নিয়ম অনুযায়ী আইসিসি-তে প্রতিনিধিত্ব সে-ই করতে পারে যে কিনা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। শ্রীনি তা হলে কী ভাবে যেতে পারেন? সুপ্রিম কোর্টই তো তাঁকে বোর্ডে ঢুকতে বারণ করে দিয়েছে। নয়াদিল্লিতে বসে ফোনে আদিত্য আসন্ন যুদ্ধের উত্তেজনার আঁচও দিয়ে রাখলেন। বলে দিলেন, “ওদের আইনজীবীরা কী বলবে, জানি। বলবে, আইসিসিতে ভারতের এত ভাল ভাবে জায়গা করার এমন সুযোগ আর আসবে না। আমরাও বলব, আপত্তি নেই। যে কাউকে পাঠাও। শুধু শ্রীনিকে নয়। পারলে আইসিসি কন্সটিটিউশনটা একবার দেখে নিও!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন