ইংল্যান্ডে চলতি টেস্ট সিরিজে ভারত যতই ১-২ পিছিয়ে থাক, উদ্বোধনী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আঠাশ বছর পর ওয়ান ডে বিশ্বকাপ, সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা ছাড়াও আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ভারতকে একটা সময় শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিয়ে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আজ সত্যিসত্যিই ভারতমাতার অন্যতম প্রিয় সন্তান! সেই ধোনির ভারত আজ ৬৭তম স্বাধীনতা দিবসেই ওভালে শেষ টেস্টে নামছে সিরিজ অন্তত ড্র রাখার যুদ্ধে। তার আগের দিন ধোনি বিশেষ করে তাঁর কাছে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য কী, তা নিয়ে একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটে যা-যা বললেন:
ইংল্যান্ডে বসে ১৫ অগস্টের অনুভূতি—
ছোটবেলা থেকে ভারতবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে গোটা বছরের দু’টো বিশেষ দিনের তাৎপর্য বোঝানো হয়। ১৫ অগস্ট আর ২৬ জানুয়ারি। প্রথমটা আমাদের দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন। পরেরটা আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীর সাংবিধানিক অধিকার পাওয়ার দিন। তবে ব্রিটিশদের দেশেই এ বার ১৫ অগস্ট কাটাব বলে যে বাড়তি কোনও অনুভূতি হবে, তা কিন্তু প্লিজ কেউ ভাববেন না। আমরা টিম ইন্ডিয়া আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। কারও সঙ্গে কোনও তিক্ততা চাই না। স্বাধীনতা আন্দোলনে কত অসংখ্য মানুষ নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছেন আমাদের বারবার স্মরণ করা উচিত। কিন্তু অনেক সময়ই অনেকে সেটা স্মরণ করতে ভুলে যায়!
স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে শোনা অসংখ্য কাহিনির মধ্যে প্রিয়তম—
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ আমার প্রিয় স্বাধীনতার কাহিনি। যত বার শুনি, শরীরের ভেতর একটা স্পার্ক হয়! যদিও গোটা দেশ সেই আন্দোলনের অংশীদার হতে পারেনি। আমার মতে দেড়শো বছরেরও বেশি আগে সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার তীব্র অভাবই যার কারণ।
প্রিয় দেশাত্মবোধক গান—
আমি মনে করি আমরাই একমাত্র দেশ যাদের এত অসংখ্য দেশাত্মবোধক গান রয়েছে। যার প্রতিটাই হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় এবং দারুণ অর্থপূর্ণ। এ রকম বিশেষ একটা গান বাছা খুব কঠিন। তবে তার মধ্যেই ‘বন্দেমাতরম’ আমার মতে একটু অন্য রকম। আমি ভীষণ ভালবাসি শুনতে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা—
জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা। একটা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জমায়েতের উপর চরম অন্যায় ভাবে শাসক ব্রিটিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দেড় হাজারের বেশি অসহায় মানুষকে হত্যা করেছিল।
আপনার মতে গোটা দেশকে যে আন্দোলন একসূত্রে বেঁধেছিল—
ডান্ডি যাত্রা বা সত্যাগ্রহ আন্দোলন। প্রায় চারশো কিলোমিটার পথ মহাত্মা গাঁধীজি দেশ জুড়ে অতিক্রম করেছিলেন। সবরমতী থেকে গাঁধীজি যখন যাত্রা শুরু করেছিলেন, সঙ্গে মাত্র পাঁচ জন লোক ছিলেন। যখন শেষ করেন, গোটা দেশ তাঁর পিছনে। বিশাল পথে প্রচুর ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছিল। অসংখ্য মানুষ সেই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন।
আপনার কাছে ভারতের বৈশিষ্ট্য—
আমার মতে তো সব কিছুই। তার মধ্যে অবশ্যই অনেক কিছু আছে যা আমরা সবাই চাই যে, আমাদের দেশে যেন না থাকে, যেন না ঘটে! তবু সে সব অনভিপ্রেতকে নিয়েই আমাদের দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম বৈশিষ্ট্য-- বৈচিত্রের মধ্যে একতা। এত রকমের জাতি, এত বিভিন্ন ভাষা, নানান সংস্কৃতি, তবু ভারতবাসী হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই সমান গর্বিত।
ভারতীয় ক্রিকেট দলও কি বৈচিত্রের মধ্যে একতার উদাহরণ—
নিশ্চয়ই। একশো বার। ভারতীয় ক্রিকেট দল ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতোই সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ।
জাতীয় পতাকার দিকে তাকিয়ে অনুভূতি—
যত বার তাকাই একটাই অনুভূতি হয়। গর্বের অনুভূতি— ভারতের মতো এক মহান দেশে আমি জন্মাতে পেরেছি!
সিয়াচেন যাওয়ার স্মৃতি—
ঠিক সিয়াচেন নয়। জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে গিয়েছিলাম, আমাদের সেনাবাহিনীর জওয়ানভাইদের সঙ্গে। মারাত্মক কঠিন কন্ডিশন ওখানে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে ভয়ঙ্কর ঠান্ডায় জীবনযাত্রাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবু সেখানেও আমাদের জওয়ানরা আনন্দের সঙ্গে, হাসিমুখে তাঁদের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। আমাদের সবার মতোই তাঁদেরও পরিবার-পরিজন আছে। কিন্তু সে সব ছেড়ে দেশের কাজ করে চলেছেন ওঁরা। সারা বছর রাত জেগে ওঁরা সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন বলেই আমরা গোটা দেশের মানুষ শান্তিতে ঘুমোতে পারি!