প্রথম গেম সমান-সমান। সোচিতে। ছবি: এপি
গোড়াতেই চমক।
নিজের শহর চেন্নাইয়ে খেলার চাপ নেই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তাজ ধরে রাখার টেনশন নেই। তার উপর গত কয়েকদিন ধরে ফুরফুরে মেজাজে থাকার ইঙ্গিত তো ছিলই। তাই বিশ্বদাবার খেতাবি লড়াইয়ের শুরুতেই যে বিশ্বনাথন আনন্দ চমকে দেওয়ার চেষ্টা করবে সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম। সেটাই হল। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে তুমুল লড়াইয়ের আবহটা আরও জমিয়ে দিয়ে আক্রমণাত্মক ভাবেই ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে শুরু করেছিল ভিশি। সাদা ঘুঁটিতে খেলার সুবিধেটা তোলার জন্যই হয়তো। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ড্র-তেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।
তবে, বিশ্বের এক নম্বর আর রেটিংয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে আনন্দের শুরুতেই চাপে রাখার স্ট্র্যাটেজিতে একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাগনাস হয়তো কিছুটা চিন্তিত। আনন্দের থেকে চাল দিতে গেমের গোড়ার দিকে অনেক বেশি সময় নিচ্ছিল নরওয়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। অবশ্য কেন ম্যাগনাসকে এ বারও ফেভারিট ধরা হচ্ছে সেটা ও বুঝিয়ে দিল মিডলগেমেই। পাঁচ-ছ’টা চালেই শুরুর নড়বড়ে পজিশনটা সামলে উল্টে চাপ দিতে শুরু করল আনন্দকে। নিজের চেনা ছকে আনন্দকে পেঁচিয়ে ধরার সেটাই শুরু। চেনা ছক মানে লম্বা গেমে বিপক্ষকে ক্লান্ত করে এন্ডগেমে শেষ করে দাও। আনন্দকেও যেন একটু ক্লান্ত লাগছিল এই সময়। দীর্ঘ টুর্নামেন্টের প্রথম দিকেই বেশ বিপজ্জনক ইঙ্গিত। তার সুবিধে তুলেই হয়তো দীর্ঘক্ষণ প্রথম গেম টেনে নিয়ে যাওয়ার স্ট্র্যাটেজি কাজে লাগাতে সফল ম্যাগনাস।
তবে এই ভিশি কিন্তু গতবারের ভিশি নয়। দুই শিবিরে মহাযুদ্ধের আগে থেকেই বিপক্ষকে মানসিক চাপে রাখার চেষ্টা কম হয়নি। তার মধ্যেও সোচিতে আনন্দকে দেখে কিন্তু গত বারের থেকে আলাদা করা যাচ্ছিল সহজেই। বিশ্বখেতাবের যুদ্ধের আগে সেকেন্ডসরা ছাড়া যাঁর নাগাল পাওয়া দুর্লভ তাকেই কি না টুইটের পর টুইট করতে দেখা গিয়েছে। কতটা খোলামেলা মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটাও জানিয়েছে। মেজাজের মতোই লম্বা গেমে টেনে নিয়ে যাওয়ার ম্যাগনাসের পরিচিত স্ট্র্যাটেজির জবাবটাও ভিশি সমানতালে দিয়েছে।
তাই ৪৮ চালের পর ড্র আনন্দের পক্ষে স্বস্তির। তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গেমের পর ওর সাংবাদিক বৈঠকে খোশমেজাজেই। তবে সাদা ঘঁুটিতে শুরু করেও ড্রটা ভিশির জন্য কিন্তু ভাল ফল নয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার লড়াইয়ের পর আনন্দের পক্ষে মন্দের ভাল ফল হলেও কাঁটাটা তাই থেকেই যাচ্ছে।