মুলার-ক্লোজে তো আছেনই। দলে ক্রুজ, শুরলে সোয়াইনস্টাইগার, ওজিলের মতো গোলের ‘আউটলেট’ থাকলেও, জার্মানির নতুন প্রজন্ম আর বিশ্বকাপ খেতাবের মধ্যে দাঁড়িয়ে আর্জেন্তিনা ডিফেন্স। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে আর্জেন্তিনার বিশ্বমানের আক্রমণের জয়গান গাওয়া হয়েছিল। টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে খেলে যাচ্ছে কিন্তু তাদের ডিফেন্সই। নক আউট পর্বে এখনও কোনও দল ভাঙতে পারেনি যে প্রাচীর।
মারাকানা মহাযুদ্ধের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার-ও মনে করছেন, আর্জেন্তিনাকে হারাতে হলে তাদের আঁটোসাটো রক্ষণ ভাঙার নীল-নক্সা বানাতে হবে জোয়াকিম লো-কে। “সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের দম বন্ধ করে দিয়েছিল আর্জেন্তিনার রক্ষণ। ওটা খুব ভয়ঙ্কর। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে রবেন, ফান পার্সিরা গোলের পর গোল করেছে। অথচ আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারল না ওরা।” মার্কোস রোখো, জাবালেতাদের মাত করাটাই জার্মানির এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সেটাই মানছেন অধিনায়ক এবং কোচ দুই ভুমিকাতেই বিশ্বকাপজয়ী জার্মান কিংবদন্তি। বলেছেন, “ফাইনালে বিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙাটাই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা জার্মানির। এটা কেউ বাজি লাগিয়ে বলতে পারবে না যে, সেমিফাইনালের খেলাটাই আবার খেলবে জার্মান দল। কিন্তু ব্রাজিলের মতো দলকে ৭-১ হারানোয় অবশ্যই দলের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।”
বিপক্ষ দলে মেসি নামক একজনের উপস্থিতি থাকলেও, জার্মানি কোনও ব্যক্তিগত প্রতিভার উপরে নির্ভর করছে না, সেই কথাই মানছেন ‘দার কাইজার’। বলেছেন, “জার্মানির কোনও মেসি বা নেইমার নেই। কিন্তু জোয়াকিম লো-র দলে সবাই এককাট্টা হয়ে খেলতে পারে। এই দলে বায়ার্ন মিউনিখের ছ’-সাত জন ফুটবলার আছে। এ ছাড়াও একজন ভাল গোলকিপার আছে। তবে জার্মান রক্ষণকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মেসি কিছু না-করতে পারে। ও একটা শটেই ম্যাচের ছবি পাল্টাতে পারে।”
বর্তমান জার্মানি দলের সঙ্গে ১৯৯০ বিশ্বকাপ দলের মিল খুঁজে পাচ্ছেন বেকেনবাউয়ার। “আমি যে দলের কোচ ছিলাম ১৯৯০-এ, তাদের সঙ্গে পার্থক্য নেই লো-র দলে। ইতালি বিশ্বকাপে যখন দল জিতত তখন আমার রিজার্ভ ফুটবলাররাও ছুটে আসত মাঠে। এতটাই টিম স্পিরিট ছিল দলের মধ্যে। এই মুহূর্তেও দেখতে পাচ্ছি মার্টেস্যাকার, যাকে শুরুর দিকে প্রথম দলে রাখা হলেও হঠাৎ করে রিজার্ভে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবু ও কোনও ঝামেলা করেনি।” মারাকানায় ব্রাজিল না থাকলেও, ঘরের সমর্থকরা সবাই জার্মানির জন্যই চিৎকার করবে সেই আশা করছেন বেকেনবাউয়ার। বলেছেন, “আমার মনে হয় না যারা ব্রাজিলিয়ান তারা আর্জেন্তিনাকে সাপোর্ট করবে। তাই মারাকানায় জামার্নির বেশি সমর্থক থাকবে।”
বেকেনবাউয়ার যখন চিন্তিত তাঁর দেশ কী করে ভাঙবে আর্জেন্তিনার প্রাচীর, ‘লা অ্যালবিসেলেস্ত’-এর’ এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সের্জিও আগেরো মনে করছেন জার্মানিই ফেভারিট বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে। “ব্রাজিলের মতোই টুর্নামেন্টের শুরুর থেকেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার ছিল জার্মানিও। তবে আন্ডারডগ হিসাবে ফাইনালে খেলাটা এক প্রকারের সুবিধাও। কারণ আমরা চাপ ছাড়াই খেলতে পারব। অনেক বছর ধরেই জার্মান দলে সবাই একে অপরের সঙ্গে খেলছে। যে কারণে দলগত খেলায় ওদের ধারেকাছে কোনও দল আসে না। ওদের বিরুদ্ধে বল দখলে রাখতে হবে। এক ইঞ্চি জায়গা দিলে বিপজ্জনক হবে।” আগেরোর সঙ্গে একমত ম্যাক্সি রদ্রিগেজও। “জার্মানি খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কিন্তু ভাল খেললে ফুটবলে যে কোনও দলকেই হারানো সম্ভব। চ্যাম্পিয়ন হয়েই ব্রাজিল ছাড়তে চাই।”