টিম সিএসকে-র সঙ্গে মইয়াপ্পন। ভাগ্যে এ বার কী আছে...
সুপ্রিম কোর্টে মুদগল কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে শুনানি শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে মহানাটকীয় পট পরিবর্তন ঘটে গেল আইপিএল স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে। এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে।
যেখানে পরিষ্কার বলে দেওয়া হল, পুলিশি জেরার সময় সিএসকে প্রধান গুরুনাথ মইয়াপ্পন নাকি স্বীকার করে নিয়েছেন যে তিনি বেটিং করতেন! তবে সেটা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ বেটিং’। এবং সেটা তিনি করতেন বিন্দু দারা সিংহ-র মাধ্যমে।
আজ, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে মুদগল কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে শুনানি শুরু হওয়ার কথা। যে রিপোর্টে পরিষ্কার বলা আছে, আইপিএল সিক্সে বেটিং ভাল ভাবেই করতেন গুরুনাথ। টিম সংক্রান্ত বহু তথ্য বাইরে প্রকাশ করে দিতেন। আর তিনি মোটেও শ্রীনিবাসন উদ্ধৃত ‘ক্রিকেট উৎসাহী’ নন। বরং চেন্নাই সুপার কিংসের অংশ। বোর্ডের একটা অংশ মনে করছে, শুনানি শুরুর ঠিক এক দিন আগে এ ভাবে বেটিং নিয়ে গুরুনাথের স্বীকারোক্তি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ব্যাপারটা আলাদা মাত্র পেয়ে গেল। কোর্টের শুনানিতেও যে ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে বলে বলাবলি চলছে।
এ দিন সকাল সকাল এক চ্যানেল দেখাতে থাকে যে, আইপিএল সিক্সে যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ বেটিং’ করতেন, সেটা পুলিশি জেরায় স্বীকার করে নিয়েছেন গুরুনাথ। বলা হয়, রিপোর্টেই নাকি সেটা বলা আছে। শোনা যাচ্ছে, পুরো ব্যাপারটা নাকি অনেক দিনই পুলিশের হাতে ছিল। সময় বুঝে বাজারে ছাড়া হয়েছে। ওই চ্যানেল আরও দেখাতে থাকে যে, চেন্নাই পুলিশ যে কোনও সময় আবার জেরা করতে পারে গুরুনাথকে। চ্যানেলের আরও দাবি, রিপোর্টে শ্রীনিবাসনের ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টের’ ব্যাপারেও বলা আছে।
শুধু তাই নয়। আইপিএল সেভেনে সিএসকে খেলতে পারবে কি না, তা নিয়েও কড়া প্রশ্ন উঠে পড়ে। বলা হতে থাকে, আইপিএল গঠনতন্ত্রেই বলা আছে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক যদি অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে সেই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বহিষ্কার করা হবে টুর্নামেন্ট থেকে। গুরুনাথ নিজে যে সিএসকে-র অংশীদার ছিলেন, কমিশনের রিপোর্টে স্পষ্ট। তিনি যে বেটিং করতেন সেটা কমিশনও বলেছে, এবং চ্যানেলের দাবি ধরলে তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। নিয়ম ধরলে তো চেন্নাইকে এ বার বহিষ্কার করা উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা করবেন কে?
এ দিনই শ্রীনিবাসনের বোর্ডের তরফে সুপ্রিম কোর্টে তড়িঘড়ি একটি হলফনামা পেশ করা হল। যে হলফনামায় সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছে, মুদগল কমিটির রিপোর্টের সঙ্গে মুখবন্ধ যে খাম আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে তার ভেতর যা আছে, তা এখনও সত্যি বলে প্রমাণ করা যায়নি। ফলে ওই মুখবন্ধ খামের বিষয়বস্তু যেন সর্বসমক্ষে প্রকাশ না-করা হয়। হলফনামায় বোর্ডের তরফে আরও বলা হয়েছে, রিপোর্টে মুকুল মুদগল এবং নীলয় দত্ত কয়েক জায়গায় পরস্পরবিরোধী সুপারিশ করেছেন। তবে মুদগল কমিটির সুপারিশগুলো মোটামুটি মেনে নিচ্ছে বোর্ড। যেমন, ম্যাচের পর পার্টি বন্ধ করা, ক্রিকেটারদের এজেন্টদের নাম নথিভুক্ত করা ইত্যাদি। গভীর রাতে একটি টিভি চ্যানেলের দাবি অনুযায়ী, দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কী হবে, তা নাকি আদালতকে ঠিক করার আবেদন জানাবে বোর্ড। ভারতীয় বোর্ডের তরফে এ নিয়ে সরকারি ভাবে এখনও কিছু বলা হয়নি।
গুরুনাথ-কাণ্ডে নাটকীয় মোড়ের কথা শুনে শ্রীনি-র স্বঘোষিত বিরোধী পঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট আইএস বিন্দ্রা ফোনে বলছিলেন, “চেন্নাই নিয়ে কী হবে না হবে, এ বার শ্রীনি ঠিক করুক। আমরা কী করব না করব, সেই প্রশ্ন না করে আপনাদের উচিত শ্রীনিকে জিজ্ঞেস করা যে ও কী করবে? তবে আমি এখনও বিস্তারিত ভাবে কিছু জানি না।”
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর বোর্ড প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলে দিয়েছেন, ব্যাপারটা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন, তাই কিছু বলবেন না। কিন্তু বোর্ডের এক্ষেত্রে যা যা করণীয়, সেটা নাকি বোর্ড করবে। কিন্তু কোনও কোনও বোর্ড কর্তার অভিমত হল, আপাতত কিছুই ঘটবে না। কারণ কেউ মুখ খুলতে গেলেই বলে দেওয়া হবে ব্যাপারটা তো বিচারাধীন, এখন কী ভাবে বোর্ড এটা নিয়ে কিছু করবে? সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া সন্ধেয় সিএবিতে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলেও কিছু বলতে চাইলেন না।
বরং কোনও কোনও মহল থেকে শোনা গেল, শুক্রবার থেকে যতটা সম্ভব চেষ্টা চলবে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার। যাতে আসন্ন আইপিএলের উপর প্রভাব না পড়ে। এ দিন গুরুনাথ-কাণ্ডের মাঝেই আইপিএলের সম্ভাব্য কেন্দ্র নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়ে গেল। শোনা গেল, আইপিএলের একটা অংশ চলে যেতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। আরও বলা হচ্ছে, দেশের সাধারণ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাকি কারও শ্রীনির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে নামার সম্ভাবনা কম। নির্বাচন মিটলে কোনও কোনও বড় মুখ ময়দানে নামতে পারে। যা দেখেশুনে বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তিতিবিরক্ত মেজাজে বলে দিলেন, “টাকা দিয়ে শ্রীনিবাসন সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছে। বোর্ড সদস্যদেরও তেমনই টাকার লোভে জিভ দিয়ে জল পড়ছে! আইপিএলের গঠনতন্ত্র মানলে তো সিএসকে-কে এখনই বহিষ্কার করা উচিত। আর শ্রীনিবাসনের যা অবস্থা দেখছি, ঘাড়ধাক্কা না দিলে ও যাবে না!” তবে রাতের দিকে এক বোর্ড কর্তা যা বললেন, সেটাই বোধহয় প্রাসঙ্গিক।
সিএসকে নিয়ে কিছু করতে হলে সুপ্রিম কোর্টকেই করতে হবে। বোর্ড করার ক্ষমতা রাখলেও কিছু করবে না।