অভিষেকেই সফল। নতুন ক্লাবের জার্সিতে গুরপ্রীত।
ভাইচুং ভুটিয়া। পারেননি।
সুনীল ছেত্রী। পারেননি।
সুব্রত পাল। তিনিও পারেননি।
ভারতীয় ফুটবলের তাবড় তাবড় নামগুলো যা করে দেখাতে পারেনি, তা করে দেখালেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ছাত্র। নরওয়ের টিম স্টাবায়েকের প্রথম দলে খেলে ইতিহাস গড়লেন গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। ৭৯ বছর আগে সেল্টিকে খেলা মহম্মদ সেলিমের পরে।
গুরপ্রীতের দল রবিবার প্রথম ম্যাচেই ৪-১ জিতেছে। আর সেই জয়ে চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা শুধু উচ্ছ্বসিত-ই নন, আপ্লুত। সোমবার বিকেলে নরওয়ে থেকে ফোনে গুরপ্রীত আনন্দবাজারকে বললেন, “ম্যাচের পরে বব স্যার (স্টাবায়েকের চিফ কোচ) আমাকে জড়িয়ে ধরেন। উনি আমাকে বলেন, এটা তো সবে শুরু। আরও অনেক পথ চলতে হবে তোমাকে। যা শুনে আমার আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়।”
ফোনের ওপারে তখন থরথর করে কাঁপছেন গুরপ্রীত। প্রবল ঠান্ডায় গলাও ধরে গিয়েছে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের দিনে চুপ করে বসে থাকা যায় নাকি? তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, “ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম বরফের দেশে ফুটবল খেলব। হাতে গ্লাভস, গায়ে সোয়েটার থাকবে। কিন্তু এখানে এসে বুঝলাম, ঠান্ডায় ফুটবল খেলা কত কঠিন! যতক্ষণ প্র্যাকটিস করছি ঠিক আছে। এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই আইসক্রিমের মতো জমে যাচ্ছি।”
নতুন পরিবেশে অবশ্য নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছেন প্রাক্তন লাল-হলুদ গোলকিপার। প্র্যাকটিসে যাওয়ার আগে বলেন, “এখানে পেট এবং পিঠের পেশির শক্তি বাড়ানোর এক্সারসাইজে বেশি জোর দেওয়া হয়। তার সঙ্গে বডি ব্যালান্স। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এখানে গোলকিপারদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওদের জন্য আলাদা সময় থাকে। এমনকী কখনও কখনও পুরো সেশনই গোলকিপারদের প্র্যাকটিসের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।”
তবে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের ছেড়ে দূরে থাকায় টান পড়ছে পেটে। তাঁর কথায়, “ভারতের খাবারগুলো খুব মিস করছি। কিছু দিন আগে বাড়ি গিয়েছিলাম। ওখান থেকে চিকেন মশালা, ডাল, রুটি আর ভাত রান্না করা শিখে এসেছি। মা, বোন আর আমার হবু স্ত্রীর থেকে। এখানে তো আর রাঁধুনি রাখতে পারব না। তাই নিজেকেই রান্না করে খেতে হচ্ছে। কিন্তু ওই স্বাদ কী আর হয়!”
ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার পরেই বিদেশে খেলার পরিকল্পনা শুরু গুরপ্রীতের। ৬ মে নরওয়েতে পা রাখার পরে ২০ মে প্রথম প্র্যাকটিস শুরু স্টাবায়েকের দলে। তবে ইউরোপে দলবদলের উইন্ডো সেই সময় বন্ধ থাকায়, ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েও অগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। অবশেষে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে, ১৫ অগস্ট স্টাবায়েকের হয়ে চুক্তি সই করেন গুরপ্রীত। এবং দলের প্রথম ম্যাচেই ৪-১ জয়। কিন্তু কী ভাবে প্রথম দলে সুযোগ পেলেন? সুব্রত পালের ভক্ত বললেন, “দলের প্রথম গোলকিপার জাতীয় দলের হয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি সুযোগ পাই।” তবে এ সবের মাঝে যে কত ঝুঁকি নিতে হয়েছে তাঁকে, সেটাও বললেন, “আমার কাছে ইস্টবেঙ্গল ও আইএসএল খেলার প্রস্তাব ছিল। আমি নিইনি। ভেবেই নিয়েছিলাম, এ বার বিদেশে খেলবই। তার জন্য যদি এক বছর বসে থাকতে হয়, তাও চলবে।”
গুরপ্রীতের ঝুঁকি নেওয়াটা অবশ্য জলে গেল না। যদি কোনও বড় অঘটন না হয়, তা হলে শুক্রবার স্টাবায়েকের দ্বিতীয় ম্যাচেও গুরপ্রীতকে খেলতে দেখা যাবে!