‘সচিনের সঙ্গে দু’শো ম্যাচ খেলেছি, এ বার না হয় ওর বিরুদ্ধে খেলব’

হাবাসের দাদাগিরিতেই মুম্বই চলল কলকাতা

স্বেচ্ছায় কেউ বিষপান কখন করে! আর করলে যে কী পরিণতি হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন জিকো। হাসতে হাসতে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু নেমেছিলেন যে আত্মতুষ্টি নামক বিষপান করে, তার মারণ জ্বালাতে আইএসএল থেকেই ছিটকে গেল তাঁর এফসি গোয়া। আন্তোনিও হাবাস এখন হাসছেন। ম্যাচ শেষে মাঠে উত্‌সবে মেতে উঠলেন তাঁর ফুটবলারদের নিয়ে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গোয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি হতে হল তাঁকে।

Advertisement

প্রীতম সাহা মারগাও

মারগাও শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

বোরহার এই পেনাল্টি শটেই ফাইনালের টিকিট

আটলেটিকো দে কলকাতা- ০ (৪)

Advertisement

এফসি গোয়া- ০ (২)

স্বেচ্ছায় কেউ বিষপান কখন করে! আর করলে যে কী পরিণতি হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন জিকো। হাসতে হাসতে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু নেমেছিলেন যে আত্মতুষ্টি নামক বিষপান করে, তার মারণ জ্বালাতে আইএসএল থেকেই ছিটকে গেল তাঁর এফসি গোয়া।

Advertisement

আন্তোনিও হাবাস এখন হাসছেন। ম্যাচ শেষে মাঠে উত্‌সবে মেতে উঠলেন তাঁর ফুটবলারদের নিয়ে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গোয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি হতে হল তাঁকে। আসলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই শরীর খারাপ লাগছিল কলকাতা কোচের। সেমিফাইনালের অফুরান চাপটা নিতে না পেরেই কি আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? রাতে জানা গিয়েছে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ম্যাচে একটা সময় দেখা যায় রিজার্ভ বেঞ্চে তাঁর চোখমুখে ঠান্ডা জল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশেষ কিছু লাভ না হওয়ায়, তড়িঘড়ি ডাকা হয় ডাক্তারকে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় দেখেই মাঠ ছাড়েন তিনি।

শেষের দিকের কিছু সময় শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি চেয়ারে বসে থাকলেও, এটা বুঝিয়ে দিলেন আটলেটিকো টিমের আসল ‘বস’ তিনিই। অন্তত শনিবার আইএসএল ফাইনাল শুরুর বাঁশি বাজা পর্যন্ত তো বটেই। নইলে যে ফুটবলারকে আজ খেলানোর জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের শীর্ষকর্তারা মঙ্গলবার দুপুর থেকে এককাট্টা হয়ে নেমে পড়েছিলেন, সেই ফিকরুকে কিনা গ্যালারিতে বসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অ্যান্ড ফ্যামিলি-র পাশে বসে ম্যাচ দেখতে হল! আটলেটিকোর প্রধান স্ট্রাইকার খেলার মতো অবস্থায় থাকলেও যিনি শুধুমাত্র মনোমালিন্যের জেরে তাঁকে টিম হোটেলে পর্যন্ত ঢুকতে দিলেন না, সেই হাবাসকে মনে হয় না দলকে ফাইনালে তোলার পরে আর কোনও জবাবদিহি করতে হবে কর্তাদের কাছে।

এ দিন হাবাস আরও একটা বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন সঞ্জু প্রধানকে নামিয়ে। কিন্তু সেই ছেলেও গার্সিয়া-রফির জন্য যেমন থ্রু বাড়ালেন, তেমনই ঠিকানা মাপা পাস দিলেন। পোড়খাওয়া আটলেটিকো কোচ ম্যাচ শুরুর কুড়ি মিনিটের মধ্যে বুঝে গিয়েছিলেন, মাঝমাঠে সান্তোস-বিক্রমজিতের যুগলবন্দি ভাঙতে হবে। রফি যখন একবারের বেশি গোলের মুখ খুলতে পারেননি, তখন সঞ্জুকেই ব্যবহার করতে হবে। তবু দু’লেগ মিলিয়ে ২১০ মিনিট গোলশূন্য ম্যাচ শেষমেশ টাইব্রেকারে ৪-২ জিতে আটলেটিকো দে কলকাতা ফাইনালে ওঠার পরেও মনে হচ্ছে, কিংশুককে তুলে বলজিত্‌কে রাইট ব্যাক করে যদি কেভিন লোবোকে স্ট্রাইকারে নিয়ে যাওয়া হত, তা হলে বোধহয় প্রচণ্ড টেনশনাক্রান্ত টাইব্রেকারের দরকার পড়ত না। ফতোরদার এই মাঠেই কিন্তু আইএসএলের ম্যাচে জোড়া গোল ছিল লোবোর।

কিন্তু সব জড়তা, অনিশ্চয়তা, কোচ-ফুটবলারে মতবিরোধ এবং অবশ্যই দুর্ভাগ্যকে মাণ্ডবীর জলে ভাসিয়ে ফাইনালে উঠে হাবাসের কলকাতা যেন বুঝিয়ে দিল, মুম্বইয়ের ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’ জিততেও তারা তৈরি। ফাইনালের আগে কলকাতার বড় প্রাপ্তি কী? অবশ্যই সঞ্জু প্রধান। একশো পাঁচ মিনিট মাঠে ছিলেন আজ। দেখিয়ে গেলেন ছয় গজের মধ্যে অসম্ভব মাথা ঠান্ডা, শরীরটাকে ব্যবহার করতে জানেন। এর সঙ্গে যদি ফাইনালে তিন কাঠির ঠিকানাটাও ভাল চিনতে পারেন তিনি!

আটলেটিকো যে এ বার দুর্দান্ত টিম করেছে তা কারও অজানা নয়। কিন্তু টিমটা কলকাতায় তেমন খেলতে পারেনি। যুবভারতীর কৃত্রিম টার্ফের ঠেলায় মাঝমাঠ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পদানি, বোরহা, গার্সিয়া— তিন জন একসঙ্গে ভাল খেললে কী হয় তা নেহরু স্টেডিয়ামের হাজার পঁচিশ দর্শক বুঝতে পারলেন। ভাল স্ট্রাইকারের অভাবে গোল হয়তো আসেনি কলকাতার। কিন্তু বিপক্ষও তো তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। যুবভারতীতে জিকোর টিম যে ফুটবল খেলেছিল, তার ছিটেফোঁটা ফতোরদায় তারা দেখাতে পারল না। ওই যা শুরুর সাত মিনিটে রোমিওর শট পোস্ট ঘেঁসে বেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু তাতে কোহলির টিমের মনোবলে সম্ভবত যে চিড় ধরেছিল, তার থেকে আর বেরোতে পারল না তারা। তবে এর জন্য আটলেটিকোর বঙ্গসন্তান স্টপার অর্ণব মণ্ডলের অবদানও মনে রাখার মতো। ফাইনালের রেজাল্ট যাই হোক না কেন, ধারাবাহিকতার জন্য টুর্নামেন্টের সেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কারটা বেহালার বাসিন্দার জন্য এখনই তুলে রাখা উচিত।

তবে বলজিত্‌কে বোধহয় কলকাতার নতুন রহিম নবি কিংবা হরমনজ্যোত্‌ সিংহ খাবরা বানানোর চেষ্টায় আছেন হাবাস। স্ট্রাইকার থেকে রাইট ব্যাক। এ বার ৩-৫-২ ছকে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারও খেলিয়ে ফেললেন। আটলেটিকো কোচের এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলজিতের ক্লাব ফুটবলে কতটা কাজে লাগবে জানা নেই। তবে বুধবারের ম্যাচে কাজে দিয়েছে। আসলে যে যাই বলে থাকুক, আটলেটিকো কোচ যে এক জন বড় স্ট্র্যাটেজিস্ট, বুধবার সেটা আবার প্রমাণ করে দিলেন তিনি। ফিকরুর অনুপস্থিতিতে ২০১০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্পেন-মডেল অবলম্বন করে। বিপক্ষের গতির পাল্টা খেলাটাকে স্লো করে দেওয়া। গোল না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা। মিল অনেক, শুধু মঞ্চ আলাদা।

এফসি গোয়ার সমর্থনে দর্শকদের চিল-চিত্‌কারে বুধবারের ম্যাচ শুরু থেকেই ছিল রঙিন। গ্যালারির হই-হুল্লোড় আর আতসবাজিতে ভরা। কিন্তু সেই উল্লাসকে চিরস্থায়ী হতে দিলেন না গার্সিয়ারা। ম্যাচের পরে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হল হোম টিমকে।

আর জিকো? ১৯৮৬ বিশ্বকাপে পেনাল্টি মিস করেছিলেন। এ বার তাঁর সামনেই আর এক ব্রাজিলিয়ান সান্তোসও টাইব্রেকারে গোল নষ্ট করলেন। টাইব্রেকারের ভাগ্যটা বোধহয় ফুটবলার জিকো আর কোচ জিকোর ‘চিরশত্রু’-ই হয়ে থেকে গেল!

আটলেটিকো দে কলকাতা: বেটে, হোসেমি, অর্ণব, নাতো, বোরহা, বলজিত্‌, সঞ্জু (লোবো), পদানি, লেস্টার (কিংশুক), রফি, গার্সিয়া (হোফ্রে)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন