তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২২ থেকে বেড়ে ৩৯

এই দ্বিগুণ সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বীরভূম জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৮:১৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরুষ ও মহিলাদের বাইরে রূপান্তরকামী, কিন্নর গোষ্ঠীর মানুষদের ‘অন্যান্য’ থেকে ‘তৃতীয় লিঙ্গের’ স্বীকৃতি দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ‘ঐতিহাসিক’ রায়ের পরেও আগের লোকসভা নির্বাচন তো বটেই, গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভোটার তালিকায় তার প্রতিফলন হয়নি। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার বেড়েছিল মাত্র দু’জন। মোট তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ছিল ২২ জন। এ বার ছবি অনেকটা আলাদা। মাত্র দু’বছরের মধ্যে ভোটার তালিকায় সংযোজিত হয়েছেন আরও ১৭ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। এই দ্বিগুণ সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বীরভূম জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

Advertisement

জেলা নির্বাচনী দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমে মোট ভোটার ছিলেন ২৫ লক্ষ ২৮ হাজার ১০ জন। মহিলা ভোটার ১২ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৬৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন ২২ জন। এ বার জেলায় মোট ভোটার ২৬ লক্ষ ৭০ হাজার ৪২৬ জন। মহিলা ভোটার ১৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৬৬। তৃতীয় লিঙ্গের ৩৯ জন।

গত লোকসভা নির্বাচনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ঐতিহাসিক রায়ে রূপান্তরকামী, কিন্নর গোষ্ঠীর মানুষদের পুরুষ ও মহিলার বাইরে ভোটার তালিকায় শুধু তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। দেশের কেন্দ্র ও সব রাজ্য সরকারকেও নির্দেশ দিয়েছিল এই তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের সরকারি চাকরিতে বিশেষ সুবিধা কিংবা ভোটার কার্ড, পাসপোর্টেরও ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু, ২০১৪ সালে গত লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত কেন নামমাত্র সংখ্যাবৃদ্ধি হল, কেন রূপান্তরকামী বা হিজরাদের সঠিক প্রতিফলন ভোটার তালিকায় নেই, জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সামনে প্রশ্নটা তুলেছিলেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা। তার যথাযথ উত্তর অবশ্য জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে ছিল না।

Advertisement

‘‘সে দিক থেকে থেকে দেখলে এটা ইতিবাচক দিক তো বটেই’’, বলছেন জেল প্রশাসনের এক কর্তা। তাঁর মতে, ‘‘সচেতনতা বেড়েছে বলেই মানুষ নিজের প্রকৃত পরিচয়ে সামনে আসছেন।’’ যদিও রাজ্যের রূপান্তরকামী ও হিজরাদের নিয়ে কাজ করা এক সংগঠনের তরফে দাবি, ‘‘বীরভূমে সামান্য সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, এটা প্রকৃত চিত্র মোটেই নয়।’’ একই মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানাচ্ছেন,

ক্রোমোজোম বা হরমোনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারও লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজরা হিসেবে। এ ছাড়া অনেক সময় ‘শারীরিক ত্রুটি`র বাইরে জেন্ডার-সংশয় থেকে কিংবা নানা সামাজিক চাপ থেকে অনেকে রূপান্তরকামী হয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের সংখ্যাটা হাতে গোনা।

রূপান্তরকামী ও হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা এক সংগঠনের দাবি, প্রকৃত তথ্য উঠে না আসার পিছনের অন্যতম কারণ, এত দিন পর্যন্ত যে ভাবে জনগণনা করা হয়েছে তাতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ঠিক সংখ্যা তুলে আনার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এমনকি রেশন কার্ড বা আধার কার্ডেও এমন ‘অপশন’ নেই। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়েও। সেটা হলেও তৃতীয় লিঙ্গের দাবি ও অধিকার আদায়ে অনেক সুবিধা হত। তাই শুধু ভোটার তালিকার নিজের ‘প্রকৃত পরিচয়’ সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন অনেকেই।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, তৃতীয় লিঙ্গের সঠিক সংখ্যা ভোটার তালিকায় তুলে আনার ক্ষেত্রে খুব একটা করার কিছু নেই। কেননা যিনি ভোটার তালিকায় নাম তোলাতে চান, নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণের মাধ্যমে সেটা তিনি করেন। তিনি ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, রেশন কার্ড আছে কি না এমন নানা বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি নিজে কি পরিচয় দিচ্ছেন, পুরুষ-মহিলা না কি তৃতীয় লিঙ্গের সেটার উপরেই নির্ভর করে লিঙ্গ পরিচয়।

তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত হতে হলে প্রথমে চিকিৎসক এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সার্টিফিকেট নিয়ে নাম পরিবর্তন করতে হবে কোনও হিজড়ে, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতকে। তার পরেই মিলবে ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি, যা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। এত কাণ্ড করার চেয়ে ভোটার কার্ডে নিজেকেৈ নারী বা পুরুষ হিসেবে দেখানো সহজ বলেই মনে করেন অনেকে। এত কিছুর পরও বীরভূমে এক ধাক্কায় তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হওয়াটা বেশ আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন