Anuttama Banerjee

‘মিশতে পারি না বলে লোকে অহংকারী ভাবে, মনের কথা কী করে বলব?’ আলোচনায় মনোবিদ

‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘মিশতে পারি না’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ২০:২৮
Share:

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। ছবি: সংগৃহীত।

এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা আর পাঁচজনের সঙ্গে মিশতে পারে না। স্কুলেও তাদের খুব বেশি বন্ধু হয় না, নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা যেন তাদের কাছে আতঙ্ক। এই অভ্যাস কিন্তু বড় হলেও পিছু ছাড়ে না। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যেতে হলেও নানা চিন্তা ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে, এত লোকের মাঝে কী কথা বলব, কী করব? মাঝে মধ্যে অন্য লোকেদের গ্রুপ ছবি দেখলে মনে হয় যদি আমারও একটা গ্রুপ থাকত,...! তবে ওইটুকুই। এর বেশি আর ভাবনা আসে না। অন্তর্মুখিনতা নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘মিশতে পারি না’।

Advertisement

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। আনন্দিতা লিখেছেন, ‘‘আমি স্বভাবে অন্তর্মুখী, এই নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার এই অন্তর্মুখিনতার কারণে সহকর্মীদের অনেক প্রশ্ন আমি আর সামলে উঠতে পারছি না। ধরুন, যখন ছেলেমেয়েদের কার কেমন রেজাল্ট হল, কে প্রমোশন পেল সেই সব নিয়ে আলোচনা হয়, তখন আমি খুব বেশি আগ্রহ দেখাই না। আমি যদি ওদের আলোচনায় যোগ না দিই তখন তারা আমায় অহংকারী মনে করে।’’

একই হাল দেবশ্রীরও। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার মাও অনেক সময় আমায় বলেন, এত অহংকারী, এত আত্মকেন্দ্রিক হলে কী করে চলবে? আচ্ছা, অন্তর্মুখিনতা মানেই কি আত্মকেন্দ্রিকতা? আত্মকেন্দ্রিক হওয়া কি খারাপ?’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমে বিজ্ঞান গবেষণায় প্রায় এক দশক কাটিয়ে বর্তমানে গ্রামে এক সাধারণ চাকরি নিয়ে গ্রামীণ জীবন স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি। ছন্দপতন কোথাও একটা ঘটেছ‌ে, টের পাই। গ্রামের পুরোনো বন্ধু ও পরিচিতদের সঙ্গে দূরত্বের প্রাচীর গড়ে উঠেছে। মিশতে চেষ্টা করেও দেখেছি, এই দূরত্ব অলঙ্ঘনীয়। স্ত্রী আমায় জিজ্ঞেস করে, 'বন্ধু নেই তোমার?' আমার কাছে কোনও সদুত্তর থাকে না। ভাবি কলকাতায় চলে যাব, তবে ছিন্নমূল হতে মন চায় না। মাঝে মাঝে সবার মাঝে থেকে নিজেকে দলছুট মনে হয়।’’

Advertisement

এমন অনেক মানুষই রয়েছেন, যাঁরা অন্তর্মুখিনতার সমস্যার সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করে চলছেন। অনুত্তমা বললেন, ‘‘অন্তর্মুখিনতা কোনও মানসিক বা ব্যবহারিক অস্বাভাবিকতা নয়। অন্তর্মুখিনতা এক প্রকার ব্যক্তিত্বের ধরণ। অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু এক্কেবারে ছোটবেলা থেকেই এই প্রবণতার কিছু বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। শিক্ষকরা দলে প্রশ্ন করলে নিজে থেকে এগিয়ে এসে উত্তর দিতে চায় না অনেকে, তাদেরই আবার একা প্রশ্ন করলে সঠিক জবাব দেয়। এটাই কিন্তু কোথাও না কোথাও অন্তর্মুখিনতার পরিচয়। সমস্যা হল, আমরা সকলকে এক খাতে ফেলতে চাই। যাঁরা নিজেদের ভিড় থেকে একটু সরিয়ে রাখতে ভালবাসেন, তাঁদের গায়ে অহংকারীর তকমা সেঁটে দিই। সমাজ প্রতিনিয়ত তাঁদের নামের সঙ্গে অহংকারী, আনস্মার্ট, মুখচোরা ইত্যাদি তকমা জুরে যাওয়ায় ওই মানুষগুলির মনে বিষাদের চোরাস্রোত তৈরি হয়। অন্তর্মুখিনতার ফলে আমরা যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাই, তার দরুণ খারাপ লাগা তৈরি হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে এর ফলে অবসাদও গ্রাস করে। সেই মানুষগুলো নিজেকে আরও গুটিয়ে ফেলেন। আত্মকেন্দ্রিকতার মধ্যে কিন্তু সমস্যা নেই। আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা— এই দুই শব্দকে আমরা বড্ড গুলিয়ে ফেলি। এই দুই শব্দ কিন্তু মোটেই এক নয়। স্বার্থপর মানুষ শুধু মাত্র নিজের স্বার্থসিদ্ধিকেই গুরুত্ব দেন। অন্য দিকে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ কিন্তু নিজের পরিসরের মধ্যেই সময় কাটাতে ভালবাসেন, তাঁদের মনে কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজ তাঁরা করেন না। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অন্তর্মুখী কোনও মানুষের কাছে যদি আমরা নিজে থেকে কোনও সমস্যা নিয়ে যাই, তাঁরা কিন্তু অন্য মানুষদের থেকে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে আমাদের সমস্যার কথা শোনেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement