এই ছবি কলকাতারই। গিয়েছেন কখনও? এক টুকরো জাপান দর্শন হতে পারে এমন স্থানে। ছবি: সংগৃহীত।
খোদ কলকাতার বুকে এক খণ্ড দক্ষিণ ভারত! আবার জাপানও! ভাবছেন বুঝি, দুর্গাপুজোর মণ্ডপের কথা হচ্ছে? মোটেই তা নয়। বরং কলকাতার বুকে এমন জায়গাও আছে যেখানে গেলে মনে হবে ভিন্ন কোনও রাজ্যে এসে পড়েছেন। এসে গিয়েছেন বুঝি বিদেশে। এই তিন জায়গা হল তিন মন্দির, যা ঠিক বাংলার প্রথাগত সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যায় না। বরং প্রতিটি স্থানেরই স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। কোনও এক ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়তে পারেন, এমন কোনও ঠিকানার উদ্দেশ্যে। ভিড়ে ঠাসা কলকাতার ব্যস্ত গলি, তস্য গলির মধ্যে এমন জায়গাও আছে, জানলে অবাক হবেন।
বৈকুণ্ঠ মন্দির
দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীতে নির্মিত এই মন্দির রয়েছে কলকাতায়। ছবি: সংগৃহীত।
রাস্তার নাম কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট। গণেশ টকিজ়ের কাছেই জায়গাটি। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলে, চোখে পড়বে উন্মুক্ত পাথরে বাঁধানো অঙ্গন। নিখুঁত শৈল্পিক দক্ষতায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য স্তম্ভযুক্ত নাটমণ্ডপ। তার পরেই মার্বেলের কারুকাজ খচিত মূল মন্দির। পরিচ্ছন্ন মন্দির চত্বর, খোলামেলা আঙিনা, ধূপধুনোর গন্ধ— এক মন ভাল করা আবেশ তৈরি করে।
মার্বেলের কারুকাজ করা গর্ভগৃহে অধিষ্ঠান বৈকুণ্ঠদেবের। তাঁর দুই পাশে অবস্থান করছেন শ্রীদেবী এবং ভূদেবী। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকেই পুজো শুরু হয়। খোলা থাকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত। আবার বিকেল ৪টে ১৫ থেকে সন্ধে সাড়ে আটটা পর্যন্ত এই মন্দিরে যাওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন?
গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটাপথ। জায়গাটি জোড়াসাঁকোর অদূরে।
জাপানিজ় টেম্পল
মন্দিরের স্থাপত্য এবং জাপানি ফরেস্টের সৌন্দর্য মন ভাল করে দেয় নিমেষেই। ছবি: সংগৃহীত।
জাপানিজ় টেম্পল: কলকাতার খুবই জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র ইকো পার্ক।সেখানেই রয়েছে জাপানিজ় গার্ডেন।যত্নে সাজানো সেই বাগিচার ভিতরেই রয়েছে জাপানি শৈলীতে নির্মিত মন্দির। প্যাগোডা বললেও ভুল হয় না। ভিতরে রয়েছে বুদ্ধমূর্তি। ইকো পার্কের এক নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করলে এটি কাছে হয়। সুবিশাল চত্বর জুড়ে বাগান তৈরি হয়েছে জাপানের দর্শনেই। প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিকতা এখানে মিলেমিশে গিয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারেই সামনেই প্রহরী হিসাবে রয়েছে লায়ন-ডগ। জাপানি পুরাণে উল্লেখ রয়েছে লায়ন ডগের।তার পরেই সাজানো বাগান। তবে এই বাগান ঠিক চেনা ছকে তৈরি নয়। জাপানের সুপ্রাচীন শিন্টো ধর্মের ভাবনা ও দর্শন মিশে রয়েছে এখানে। রয়েছে নানা রকম প্রতীকও। বাঁশবাগান থেকে রকমারি মূর্তি— সব কিছুরই নিজস্ব অর্থ এবং ব্যাখ্যা রয়েছে। ভিতরে জলাশয়ে অবিরাম পড়ে চলেছে জল। সেই শব্দ মনোজগতে প্রশান্তি আনে। প্যাগোডা স্টাইলে তৈরি হয়েছে রোয়ানজি মনাস্ট্রি। ভিতরে রয়েছে ধর্মচক্র। বাগান, আলোর সুপরিকল্পিত ব্যবহার এই স্থানকে একেবারেই পৃথক করে তুলেছে। জাপানি খাবারের স্বাদ পেতে চাইলে খেয়ে দেখতে পারেন এই চত্বরে তৈরি জাপানি রেস্তরাঁর খাবারও। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্থান। তবে মরসুম ভেদে সময়ে ঘণ্টাখানেক তফাত হয়।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে মেট্রো ধরে করুণাময়ী বা সেক্টর ফাইভ। সেখান থেকে অটো বা বাসে আসতে পারেন। বিধাননগর স্টেশনে নেমে সরাসরি অটো বুক করে ইকোপার্ক আসতে পারেন না হলে বাস পাবেন কলেজ মোড় থেকে। বালি হল্ট থেকেও ইকোপার্ক আসার বাস মিলবে।
জৈন মন্দির
কলকাতাতেই রয়েছে পার্শ্বনাথের মন্দির। অপূর্ব কারুকাজ বিস্ময় উদ্রেক করে। ছবি: সংগৃহীত।
মানিকতলা থেকে এগিয়ে গৌরীবাড়ির কাছে বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রিটে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন জৈন মন্দির। মূল মন্দিরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে গেলেই মিল পেতে পারেন রাজস্থানের শিল্পশৈলীর সঙ্গে। প্রধান মন্দির শীতলনাথজির। তারই ডান পাশে চন্দ্রপ্রভুজির মন্দির। আরও দুই মন্দির রয়েছে তার কাছেই, দাদাওয়াড়ি ও মহাবীর স্বামী মন্দির। মূল মন্দিরে প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক। ভিতরে ঢুকলেই সাজানো বাগান। চারপাশে মার্বেলের অপরূপ কারুকাজ, ফুলের বাহার, ফোয়ারা। স্বচ্ছ জলাশয়ে সাঁতরাচ্ছে মাছেরা। রঙিন পাথর ও আয়নাখচিত শীতলনাথজির মন্দির মনে করিয়ে দেবে রাজস্থানের কোনও দুর্গের শিশমহলের কথা। ১৮৬৭ সালে বদ্রিদাস বাহাদুর মুকিম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের স্মরণে। চন্দ্রপ্রভুজি মন্দিরও বেশ প্রাচীন। দাদাজি মন্দির পুরোটাই সাদা মার্বেলের। তারই পাশে মহাবীর স্বামী মন্দিরের স্থাপত্যও কম প্রশংসনীয় নয়। প্রতি দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা ও বিকেলে ৩টে থেকে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
শ্যামবাজার বা শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে নেমে অটোয় গৌরীবাড়ি। সেখান থেকে হাঁটাপথ। শিয়ালদহ থেকে বাসেও গৌরীবাড়ি আসতে পারেন।