সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামও হতে পারে ভ্রমণের ঠিকানা। ছবি: শাটারস্টক।
সুন্দরবন বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলুদ-কালো ডোরাকাটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। যাকে দেখার আগ্রহ যেমন আছে, তেমন আছে ভয়ও। ম্যানগ্রোভে ঘেরা বনভূমি নিয়ে প্রবাদ আছে, ‘জলে কুমীরের ভয়, ডাঙায় বাঘ’। সুন্দরবন মানেই প্রতি পদে পদে রোমাঞ্চ।
ভারতের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পরিচয় কি এটুকুই? শুধুমাত্র প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণের অনুসন্ধান! পাখি দেখিয়ে, পরিবেশ প্রেমীদের কাছে এই অঞ্চলের আলাদা মাহাত্ম্য আছে সবসময়েই। তবে গত কয়েক বছরে ভ্রমণের সংজ্ঞা বদলেছে। বর্ষা এলেই সুন্দরবনে যাওয়ার হিড়িক হয়েছে ইলিশ উৎসব উদ্যাপনে। নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে ভাত, ইলিশ মাছ খাওয়া, ম্যানগ্রোভের অরণ্যের জনপ্রিয় স্পট ঘোরা এ ভাবেই ইদানীং বিখ্যাত ব-দ্বীপ অঞ্চলকে চিনছেন লোকে।
কিন্তু চেনা ছকের বাইরে নিখাদ গ্রাম জীবন উপভোগের বাসনা থাকলে ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন সুন্দরবন। গোসাবা ব্লকে চার দিকে নদী ঘেরা ছোট্ট গ্রাম কুমিরমারী। ইদানীং কিছু কিছু উৎসাহী পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় এই স্থান জায়গা করে নিচ্ছে।
নদী বেষ্টিত দ্বীপ এই গ্রাম। আর পাঁচটি গ্রামের চেয়ে কুমিরমারীকে আলাদা করেছে প্রকৃতি। এখানে আসতে হলে জলপথই ভরসা। রায়মঙ্গল, কুরানখালি, পুইজালি এবং সারসা নদী বেড় দিয়ে রেখেছে দ্বীপটিকে। এখান নিবিড় ভাবে উপভোগ করা যায় প্রকৃতি। দেখা যায় ম্যানগ্রোভ।
গ্রামের মানুষের জীবীকা চাষবাস। কেউ কেউ মাছ ধরেও দিন গুজরান করেন। বিকল্প জীবীকার সন্ধানেই ইদানীং মৌমাছি পালনও শুরু করেছেন এক, দু’জন। সব মিলিয়ে বড্ড সরল এখানকার জীবনযাত্রা। দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি, জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে দু’টি দিন এমন গ্রামে কাটানো যেতেই পারে।
পর্যটনের প্রসারে ইকো রিসর্ট তৈরি হয়েছে। রয়েছে টুকিটাকি কয়েকটি থাকার জায়গা। কুমিরমারীতে ঘোরার জন্য বিশেষ কোনও ‘স্পট’ নেই। তবে, গ্রামের খেত-খামার, নদী, পথ, খালবিল দেখে দিব্যি সময় কাটানো যায়। গাছে ফলে থাকা সব্জি, ফল— এখন আর দেখার সুযোগ কোথায় হয়? বাড়ির ছোট্ট সদস্যকে যদি গ্রাম বাংলা চেনাতে চান, দেখাতে চান ম্যানগ্রোভ, বইয়ে পড়া ব-দ্বীপ অঞ্চল তা হলে এ ভাবেও ঘোরার পরিকল্পনা করতে পারেন।
প্রশ্ন আসতেই পারে, গ্রাম কি অন্য কোথাও দেখা যায় না? সে ক্ষেত্রে সুদূর সুন্দরবন যাওয়ার কী দরকার? তা ছাড়া, বাঘ-কুমীরের ভয় যেখানে আছে।কিন্তু ভয়ের মধ্যেও তো রোমাঞ্চ আছে? দিগন্ত বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ, জঙ্গলের ভিতরে নজরমিনার, নদীর বুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভেসে চলা— সে অভিজ্ঞতা তো যে কোনও জায়গায় মিলবে না।
বরং নিষ্কলুস প্রকৃতি, উপকূলের পাখি, গ্রামবাসীদের রান্না করা ঘরোয়া কিন্তু টাটকা সব্জি, মাছ খাওয়া অভিজ্ঞতা এখানে বেড়ানোর প্রাপ্তি হতে পারে। বইয়ে পড়া নদীর কথা, শ্বাসমূল, ঠেসমূল, গরান, গেঁওয়ার মতো গাছ চাক্ষুষ করা যায় এখানে এসে। বিশেষত ছোটদের জন্য যা কিন্তু বিশেষ প্রাপ্তি হতে পারে।
একটি দিন গ্রাম ঘুরে, মাছ ধরা, মৌমাছি প্রতিপালন দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। বসতে পারেন নদীর ধারে। আর একটি দিন নৌকা ভাড়া করে ভেসে পড়তে পারেন রায়মঙ্গলের বুকে। পৌঁছে যেতে পারেন ঝিঙেখালি বিটে। সজনেখালি, সুধন্যখালি সুন্দরবনের পরিচিত জায়গা। তবে ঝিঙেখালিও কম সুন্দর নয়। রায়মঙ্গল নদী সংযোগকারী খাঁড়ির এক দিকে ঝিঙেখালি। বসিরহাট রেঞ্জের মধ্যে পড়ে ঝিঙেখালি। জায়গাটি সুন্দর করে সাজানো। ভিতরে রয়েছে নজরমিনার। সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য দারুণ দেখায়। এখান থেকে বুড়িরডাবরি এবং হরিখালিও ঘুরে নেওয়া যায়। সেখানও রয়েছে নজরমিনার। বরাত ভাল থাকলে, শ্যেণ দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষার ধৈর্য থাকলে এখান থেকেই সাক্ষাৎ হতে পারে দক্ষিণরায়ের।
কুমিরমারী থেকে সামশেরনগর বিশেষ দূর নয়। নৌকো করে সর্দার পাড়া এসে টোটোয় সেখানে যাওয়া যায়। এই স্থানটিও ঘোরার জন্য বেশ ভাল।
কোথায় থাকবেন?
কুমিরমারীতে একটি ইকো রিসর্ট রয়েছে। রয়েছে আরও এক-দু’টি থাকার জায়গা।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে গাড়িতে সরাসরি ধামাখালি পৌঁছে, সেখান থেকে নৌকায় কুমিরমারী পৌঁছতে পারেন। রায়মঙ্গলের বুকে ভাসতে ভাসতে ম্যানগ্রোভ দেখার আনন্দ যাত্রাপথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। ট্রেনে গেলে, শিয়ালদহ থেকে ক্যানিং পৌঁছে অটো বা বাস ধরে যেতে হবে ধামাখালি। সেখান থেকে কুমিরমারী। দিন দুই ঘোরার জন্য, গ্রাম পরিবেশ উপভোগ করার জন্য এই স্থান বেশ ভাল।