Explore Nature with Kids

পাখি-প্রজাপতি, অরণ্য, নদী খুদে চিনুক নিজে দেখে, শীতের ছুটিতে বঙ্গেই ঘুরুন অরণ্য

বইয়ের পড়া বিষয় চাক্ষুষ করুন সন্তান। নিজেই দেখুক অরণ্য-বন্যপ্রাণী। কাছে-দূরে বঙ্গের তিন ঠাকানা জেনে নিন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৭
Share:

অরণ্য, পাহাড়, পাখি, প্রজাপতি চেনাতে খুদেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে। ছবি: শাটারস্টক

হিল মানে পাহাড়। টুপুরকে শেখাচ্ছিলেন মা। ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়া টুপুরের প্রশ্ন, সত্যিকারের পাহাড় কেমন হয়। সমতলের শহরে বড় হওয়া টুপুর পাহাড় দেখেনি।

Advertisement

বইয়ের পড়া বিষয় তখনই অন্তরে স্থান পায়, যখন তা চাক্ষুষ করা যায়। গাছপালা, প্রজাপতি, পাখি— বছর ৪০-৫০ পিছিয়ে গেলেও যা ছিল জীবনের অঙ্গ, এখন তা একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। উধাও হয়েছে গাছ। পাখির দেখা কোথা থেকেই বা মিলবে! বড়জোর কাক, শালিক, চড়ুইটুকু চেনে এখনকার শিশুরা।

তবে খুদের জ্ঞানের ভান্ডার ভরিয়ে তুলতে এই শীতেই বেরিয়ে পড়ুন। বঙ্গেই আছে অরণ্য, পাহাড়, নদীর ঠিকানা। তা-ও হাতের কাছেই।

Advertisement

আরাবাড়ির জঙ্গল

আরাবাড়ির জঙ্গল দেখতে চলুন মেদিনীপুর। ছবি: সংগৃহীত।

পশ্চিম মেদিনীপুরের আড়াবাড়ির জঙ্গলের কথা কেউ কেউ জানলেও, অনেকেই হয়তো জানেন না। মেদিনীপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে, চওড়া সড়কের পাশেই আরাবাড়ির জঙ্গল। এক সময় ধ্বংস হতে বসা এই অরণ্য নতুন রূপ পেয়েছিল সত্তরের দশকে মেদিনীপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। গ্রামবাসীদের উপার্জনের ব্যবস্থা করে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে অরণ্য রক্ষা এবং তা প্রসারের উদ্যোগটি দেশ জুড়ে চর্চিত হয়েছিল।

আরাবাড়ি যাওয়া যায় ঝাড়গ্রাম হয়েও। অরণ্য বলতে মূলত শালের জঙ্গল। সার দিয়ে রয়েছে গাছ। তার মধ্যেই পায়ে চলা পথ। আরাবাড়ি এখন পর্যটন মানচিত্রেও জায়গা করে নিয়েছে। কোনও এক দিন সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন আরাবাড়ির উদ্দেশ্যে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৬৬ কিলোমিটার। যেতে মোটামুটি ঘণ্টা চার-সাড়ে চার সময় লগাবে। আরাবাড়ির অরণ্য ঘুরে চলে যেতে পারেন গনগনি। ছোটদের কাছে এই জায়গাও বেশ উপভোগ্য হবে।

শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত এই জায়গাটিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলা হয়। একাধিক বাংলা ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। গনগনির ভূমিরূপ তাকে আলাদ পরিচিতি দিয়েছে। এখানে মাটি কিছুটা লালচে। অদ্ভুত ভূমিরূপ। দেখলে মনে হবে বিশাল উইঢিবি। ছোট ছোট টিলাও রয়েছে। যার উপর অনায়াসেই ওঠা যায়। পড়ন্ত বিকালে গনগনির সৌন্দর্য দেখার মতো। গনগনিতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। থাকা যায় ঝাড়গ্রাম কিংবা মেদিনীপুর শহরেও। হোটেল, রিসর্ট আছে।

জয়ন্তী

বয়ে চলেছে জয়ন্তী নদী। — নিজস্ব চিত্র।

উপলরাশির উপর দিয়ে বয়ে চলেছে নদী, পাশেই পাহাড়। যত দূর চোখ যায়, অরণ্য। সুন্দরী জয়ন্তী নদীর নাম থেকেই ডুয়ার্সের এই জায়গার পরিচিতি। প্রজাপতি, পাখি, নদী, পাহাড়— সব সৌন্দর্য একসঙ্গে মেলে এখানে। হেঁটে যেমন বনপথ উপভোগ করা যায়, তেমনই জিপে ঘুরে নিতে পারেন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। এই শীতে স্কুলপড়ুয়া খুদেকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন এমন স্থানেই। শীতের জয়ন্তী বড় শান্ত। শীতল জলধারায় পা ডুবিয়ে দিব্যি নদী এ পার-ও পার করা যায়।

চাইলে ৩ কিলোমিটার হেঁটে যেতে পারেন পুকুরি। অসংখ্য মাগুর মাছ রয়েছে এখানে। ছোটদের পক্ষেও এ পথ হাঁটা খুব কঠিন হবে না। ট্রেকিং করা যায় বড় মহাকাল, ছোট মহাকাল মন্দিরে।

এখানে থাকার জন্য হোটেল, রিসর্ট পেয়ে যাবেন। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আলিপুরদুয়ার হয়ে যেতে পারেন। আলিপুরদুয়ার থেকে জয়ন্তীর দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। নিউ জলপাইগুড়ি বা বাগডোগরা থেকেও গাড়িতে এখানে আসা যায়।

গরুমারা জাতীয় উদ্যান

বাইসনের লড়াই। —নিজস্ব চিত্র।

হুডখোলা জিপে অরণ্য ঘোরার আনন্দ উপভোগে সফরসূচিতে জুড়তে পারেন গরুমারা জাতীয় উদ্যান। হাতি, গন্ডার, বাইসন, ময়ূর-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণের আবাসস্থল এই অরণ্য। জলপাইগুড়ির এই বনভূমিতে রয়েছে জিপ সাফারির ব্যবস্থা। লাটাগুড়ি থেকে জিপ নিয়ে অরণ্যের গভীরে প্রবেশ করা যায়। কপাল ভাল থাকলে দেখা মিলবে হাতির। মাঝেমধ্যে ময়ূরেরও দেখা মিলবে।

সকাল ছ’টা থেকে সাড়ে ৭টা, সাড়ে আটটা থেকে দশটা দু’টি সাফারি হয়। দুপুর দুটো থেকে সাডে় তিনটে এবং সাড়ে চারটে থেকে ৬টা, বিকেলেও রয়েছে দু’টি সাফারির ব্যবস্থা। লাটাগুড়ি এবং মূর্তি, দুই জায়গা থেকেই সাফারির ব্যবস্থা রয়েছে। সচিত্র পরিচয়পত্র দিয়ে সাফারি বুক করতে হয়। অনলাইনেও করা যায়।

গরুমারা ঘুরতে হলে মূর্তি বা লাটাগুড়ি, যে কোনও জায়গাতেই থাকতে পারেন। এখানে থাকার জন্য একাধিক হোটেল, রিসর্ট এবং হোম স্টে রয়েছে।

হাওড়া, শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে বাকি পথ যেতে পারেন। বিমানে এলে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর দিয়েও আসা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement