Travel news

পাহাড়-ঝর্না-হ্রদে ঘেরা মুগ্ধতার রঙে আঁকা কপিলাস

ঘুরে আসুন ওড়িশার কৈলাসে। হাতছানি দিচ্ছে অরণ্যে ঘেরা উপত্যকা।ঘুরে আসুন ওড়িশার কৈলাসে। হাতছানি দিচ্ছে অরণ্যে ঘেরা উপত্যকা।

Advertisement

অরুণাভ দাস

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:৫৮
Share:

পাহাড়ের বাঁক ঘেঁষে চলেছে গাড়ি।

শীতের এক সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম লং ড্রাইভে, কলকাতা থেকে কপিলাস, ওড়িশার কৈলাস পাহাড়ে। কৈলাস বা ওড়িয়া অপভ্রংশে কপিলাস হল মহাদেবের আবাস। আসল কৈলাস কোনটি, তা বিতর্কিত। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, তিব্বতে মানস সরোবরের অদূরে কৈলাস পর্বত। কিন্তু হিমাচল প্রদেশের মানুষ দু’টি বিকল্প কৈলাসের কথা বলেন— একটি মণিমহেশ কৈলাস ও অন্যটি কিন্নর কৈলাস। ওড়িশাবাসীর কাছে আবার প্রায় ৭০০ মিটার বা ২১০০ ফুট উঁচু কপিলাস হল আসল কৈলাস। সেই পাহাড়ের চূড়া থেকে প্রায় ৩০০ ফুট নীচে চন্দ্রশেখর শিবের প্রাচীন মন্দির। পাহাড়তলির ছায়াপথে খান দশেক দোকান। পাহাড়ের নীচে চিড়িয়াখানা ও চিলড্রেন্স পার্ক।

Advertisement

চিড়িয়াখানা থেকে ৫ কিমি গাড়িতে মন্দিরের সামনে। পাহাড়ি রাস্তায় একের পর এক হেয়ারপিন বেন্ড। দূরে অরণ্য অধ্যুষিত উপত্যকা। মন্দিরে ঢোকার মুখে পুজোর উপাচার ও স্মারক কেনাকাটার কয়েকটি দোকান। দোকানিরদের হাতে বড় লাঠি, হনুমানদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখার জন্য। কারণ, এখানে তারা সংখ্যায় অগণিত এবং সকলেই মহা বিচ্ছু। মন্দির থেকে হাঁটা পথ গিয়েছে সরকারি পরিদর্শন বাংলোর পাশ দিয়ে পাহাড়ের মাথায়। সেখান থেকে পাখির চোখে চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা নজরে পড়ে।

Advertisement

চন্দ্রশেখর শিবের মন্দির দেখে নামার সময় এক বাঁকের মুখে গাড়ি থামাতেই হল। উপত্যকার বুকে অসাধারণ সূর্যাস্ত হচ্ছে। খাদের ধারে অরণ্যের সিল্যুট যেন পটে আঁকা ছবি। এখান থেকেই পাহাড় কাটা সিঁড়িপথ নেমেছে নীচে। দু’পায়ের ওপরে ভরসা থাকলে এটাই শর্টকাট। দেড় কিমি মাত্র, পাহাড়তলির চিড়িয়াখানা থেকে। সারা পথে সঙ্গ দেয় একটি বারোমেসে ঝর্নার কলতান।

উপত্যকার বুকে অসাধারণ সূর্যাস্ত।

আরও পড়ুন: ধনুষকোডির রোমাঞ্চ-সফর

একদিন ঢেনকানল শহরে গেলাম। জেলা সদর। রাস্তা চমৎকার। পাহাড়ের নীচে মাঠে হৈমন্তিক ধান বোনা চলছে। পাহাড়ের ছায়া পড়েছে জমিতে জমা জলে। অপূর্ব দৃশ্য। পিছনে ফেলে আসা জোরান্ডা গ্রামের রাস্তা। সেখানে মহিমা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মন্দির ও আখড়ায় কৌপিনধারী যোগী ও সন্ন্যাসীদের বিরল জীবনচর্যা দেখে আসা যেতে পারে। মঠে ঢোকার গেট নানা রঙে রাঙানো বিচিত্র শিল্পকর্মের আধার।

চন্দ্রশেখর শিবের মন্দির।

ঢেনকানল শহরে বিড়িবড়া ও ছানাপোড়ার স্বাদ নিয়ে মাত্র আধ ঘণ্টা গেলে সপ্তশয্যা। পাহাড়ের কোলে বনের গভীরে রাম-সীতার মন্দির৷ পথের ধারে ঝর্নার মিষ্টি মধুর গান। আকাশ ঢেকে দেওয়া শ্যামল অমল চরাচর অনেককাল পরে দেখলাম। ওড়িশার বন উন্নয়ন নিগম জনপদ থেকে দূরে নেচার রিসর্ট বানিয়েছে। একসময় নাকি সপ্তশয্যা মুনি-ঋষিদের তপস্যাস্থল ছিল। বনবাসকালে রাম-সীতাও এসেছিলেন বলে লোকবিশ্বাস প্রচলিত।

টিলার ওপরে রাম-সীতার মন্দিরের রাস্তা।

টিলার ওপরে রাম-সীতার মন্দির দেখে আবার গাড়িতে। আথাগড় হয়ে ভুবনেশ্বরের রাস্তায় আনসুপা লেক দেখতে যাওয়া হল। ওড়িশা তথা পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ আনসুপা সারান্ডা হিলের ছায়ায়। এ পাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আমবাগান। মহানদী এখান থেকে বেশি দূরে নয়। কিছু দিন হল ওড়িশা ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এই এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। লেকের বিপরীত দিকে অরণ্য অধ্যুষিত পাহাড়ের গায়ে নেচার রিসর্ট বানিয়েছে। লেকের পাড়ে বিরাট আমবাগান। গেটের গায়ে টিকিট কাউন্টার। জনপ্রতি ৩০ টাকার টিকিট। বিরাট মালভূমিতে ফুলের বাগান। সামনেই নীল আনসুপা লেক। এ পারে-ও পারে নাতিউচ্চ পাহাড়ের ছায়া কাঁপছে তিরতির করে। তার মধ্যেই নানা রঙের প্যাডেল বোটের মেলা বসেছে। শীতের দিনে অনেক লোক জমেছে ছবির মতো পরিবেশে।

বৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ আনসুপা।

পরদিন সকালে দেওগাঁ ঘুরে গাড়িতে কলকাতা ফেরা। কপিলাসের নিকটবর্তী গ্রাম দেওগাঁর প্রকৃতি মনোরম। গ্রাম ছাড়াতে কপিলাস সংরক্ষিত বনভূমি। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে নিশ্ছিদ্র সবুজের ঘেরাটোপ। লাল মাটির উথালপাথাল মাইলের পর মাইল জুড়ে। তার মধ্যে নাম না জানা নীল জলের এক লেক। ও পারে পাহাড়শ্রেণি। ভাল লাগার সংজ্ঞা যেন এ সফরে ফুরোবার নয়।

আরও পড়ুন: পাহাড়-জঙ্গলের বুকে হারিয়ে যাওয়ার অনুপম ঠিকানা কাফের

কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে গাড়িতে বালেশ্বর ও ভদ্রক হয়ে আমাদের কপিলাস যেতে ৭ ঘণ্টা লেগেছে। কলকাতা থেকে কপিলাস প্রায় ৪৮০ কিমি।

হাওড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথে পুরী, চেন্নাই বা হায়দরাবাদগামী ট্রেনে কটক। বাদামবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি আধ ঘণ্টায় ঢেনকানল যাওয়ার বাস আছে। কয়েকটা এক্সপ্রেস। দেড় ঘণ্টায় ঢেনকানল পৌঁছে আবার মিনিবাস বা গাড়ি ভাড়া করে ৪০ মিনিটে কপিলাস পাহাড়তলি। সকাল থেকে বিকেল পাহাড়তলি থেকে শেয়ারে জনপ্রতি ২৫ টাকায় শাটল গাড়ি যায় কপিলাস হিলটপে। আধবেলার প্রোগ্রামে গাড়িতে সপ্তশয্যা, জোরান্ডা ও আনসুপা লেক ঘুরে আসার গাড়িভাড়া ২০০০-২২০০ টাকা।

আরও পড়ুন: হিমাচলের ভিন্ন রূপ দেখতে চান? রইল কিছু হদিশ

কোথায় থাকবেন: কপিলাসে হোটেল নিরুপমা। নন এসি ঘরের ভাড়া ৯৯৯ টাকা ও এসি ডাবল বেডরুম ১২৯৯ টাকা। ভেজ ও নন ভেজ খাবার বেশ ভাল মানের। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগের ফোন: ৯৪৩৭৪৮৩৯১৭। তবে বুকিংয়ের সময় হোটেল ও গাড়ির সাম্প্রতিকতম ভাড়া জেনে নেবেন।

ছবি: লেখক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন