পুরীর গোল্ডেন বিচের মতোই আরও একটি নতুন সৈকত নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে। কোথায় রয়েছে সেটি? ছবি: সংগৃহীত।
জিজ্ঞাসা করলে হয়তো গুনে গুনে বলতে পারবেন না, কত বার ঘোরা হয়েছে, তবু কিছু মানুষের কাছে কখনও পুরনো হয় না পুরী। কেউ গিয়েছেন ১৫ বার, কেউ ২০ বার। তার পরেও থামতে নারাজ। তাই গরমের ছুটি হোক বা দোলের ছুটি, পুজোর ছুটির মরসুমে বোধ হয় সবচেয়ে আগে ফুরিয়ে যায় পুরী যাওয়ার ট্রেনের টিকিট।টিকিট নেই তো কী হয়েছে, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হবে। কলকাতা থেকে পুরী এমনকি দূর! ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথই উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে যদি হইহই করে যাওয়া যায়। ‘রোড ট্রিপ’ বা সড়কপথে যাওয়া মানে শুধু গন্তব্যে পৌঁছনো নয়, বরং এ এক অন্য রকম যাত্রার গল্প। সামনে শরতের আকাশ, পাশে কাশফুলের মাথা দোলানো, কখনও থেমে মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়া, স্থানীয় খাবারের স্বাদ চেনা, পড়ন্ত বিকেল দেখা।
যাত্রাপথে রাত্রিবাস
কলকাতা থেকে চারচাকায় যাত্রা শুরু করলে খড়্গপুর হয়েই রাস্তা এগোবে। ভোরে গাড়ি নিয়ে বেরোলে সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছনো যাবে পুরী। এই পথে বড় শহর বলতে বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক। তবে পুরীই যদি একমাত্র গন্তব্য না হয়ে থাকে, সেখানে যাওয়ার সময় এক রাত বালেশ্বরেও থেকে যেতে পারেন। ঘুরে নিতে পারেন পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। পাহাড়ের মাথায় শৈবতীর্থ পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঝর্না। তারই নীচে পাঁচটি লিঙ্গ। চোখে দেখা যায় না, হাত দিয়ে তা অনুভব করেন পর্যটকেরা। গাছগাছালি ভরা জায়গাটি বেশ সুন্দর। আশপাশে দেখে নেওয়া যায় খুমখুট জলাধার, বিশ্বেশ্বর মন্দির, কুলডিহা অরণ্য, নীলগিরি জগন্নাথ মন্দির-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা। কুলডিহা অরণ্য যেতে হলে অবশ্য বন দফতরের অনুমতি লাগে।
কটক হয়ে আসার সময় ঘুরে নিতে পারেন নেতাজির নামাঙ্কিত সংগ্রহশালা। ছবি:সংগৃহীত।
নেতাজির জন্মস্থান কটক শহরেও মিউজ়িয়াম, মন্দির-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে। চাইলে কটকে একটি রাত কাটিয়ে, সেখানে ঘুরে, পরের দিন ভোরেও পুরী পৌঁছতে পারেন। চারচাকায় যাওয়ার মজাটাই হল, ইচ্ছামতো কোথাও একটা থেকে যাওয়া যায়। ইচ্ছে হলে পরিকল্পনার বাইরেও অনেক কিছু ঘুরে নেওয়া যায়।
পুরীর নতুন সৈকত
নীলাদ্রি সমুদ্র সৈকত সেজে উঠছে। ছবি: সংগৃহীত।
কোনও কোনও মানুষের কাছে পুরী একঘেয়ে না হলেও, পর্যটনের প্রসারে নতুন নতুন জায়গা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে সেখানকার প্রশাসন। সে কারণেই প্রাপ্তি ‘গোল্ডেন বিচ’ বা ব্লু ফ্ল্যাগ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সৈকত। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশবান্ধব সৈকতটি শুধু ‘ব্লু ফ্ল্যাগ’-এর স্বীকৃতিই পায়নি, গত কয়েক বছরে পর্যটকদেরও মন জয় করে নিয়েছে।
তবে এ বার উৎসুক পর্যটেকরা যাচ্ছেন আর এক নির্জন সৈকতে। তার নাম নীলাদ্রি সি-বিচ। গোটা সৈকত ঘুরলেও প্লাস্টিকের টুকরো বা আবর্জনা মিলবে না। বরং সৈকত সংলগ্ন উদ্যান সেজেছে রকমারি ফুল, ঘাসের গালিচায়। দেওয়াল জুড়ে ওড়িশি স্থাপত্যের ম্যুরাল। পরিবেশের প্রতি সচেতনতার বার্তা দিতে রয়েছে নানা রকম প্রাণীর ইনস্টলেশন।
সৈকতের গায়েই অনেকটা চত্বর জুড়ে সেজে উঠেছে বাগান। ছবি: সংগৃহীত।
পুরীতে ওড়িশা পর্যটন দফতরের যে অতিথি নিবাস রয়েছে, সেই স্থানের অদূরেই সৈকতটি। পুরী বলেলই স্বর্গদ্বারের কথা মাথায় আসে। সেখানকার সৈকতেও উপচে পড়া ভিড় থাকে। তবে ভিড় এড়িয়ে একটু নিরালায় যেতে চাইলে যেতে পারেন নীলাদ্রি সৈকতে। গোল্ডেন বিচের মতো এখানে কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না। পুরীর যে কোনও স্থান থেকেই টোটা-অটোয় যাওয়া যায়।
‘ব্লু ফ্যাগ বিচ’-এর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত গোল্ডেন বিচের অদূরেই নীলাদ্রি সৈকতটির কথা সে ভাবে পর্যটকেরা জানতেন না দীর্ঘ দিন। তবে চেনা জায়গার অজানা স্থান নিয়ে উৎসাহ বাড়তেই সৈকতটির আত্মপ্রকাশ। সেটিকে ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। পুরীতে বেশির ভাগ পর্যটকই যান জগন্নাথ দর্শনে। আর আছে এখানে টাটকা মাছ, খাজা এবং নানা রকম মিষ্টি খাওয়ার আকর্ষণ। সেই সঙ্গে সমুদ্রস্নান করা বা সমুদ্রের পারে বসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়।
যাঁরা বার বার ওড়িশার এই সৈকত শহরে আসেন, তাঁরা আর চেনা পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ঢুঁ মারতে চান না। তবে, নতুন জায়গাটি তাঁরাও দেখে নিতে পারেন।
পুরীতে একাধিক মন্দির আছে। এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন লাইট হাউস, হাতের কাজের জন্য জনপ্রিয় রঘুরাজপুর গ্রাম। দেখে নিতে পারেন পিপলিও। এই গ্রামের অ্যাপ্লিকের কাজের দেশজোড়া খ্যাতি। পুরী থেকে কোণার্ক যেতে চন্দ্রভাগা সৈকত, রামচণ্ডীপুর সৈকতও পড়বে সেখানে। চন্দ্রভাগায় রয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসের সুযোগ।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে সড়কপথে পুরীর দূরত্ব ৪৯৬ কিলোমিটার। খড়্গপুর, বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক হয়ে জাতীয় সড়ক এগিয়েছে। যাওয়ার অথবা ফেরার সময় কটক কিংবা বালেশ্বর ঘোরার পরিকল্পনাও জুড়ে নিতে পারেন। পুরী থেকে ভুবনেশ্বর কাছেই। এই শহরে নন্দনকানন, লিঙ্গরাজ মন্দির, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি-সহ অনেক দ্রষ্টব্য রয়েছে। সে জায়গাগুলিতে সকলেই যান। তবে আগেই এগুলি ঘোরা হয়ে থাকলে তাপাং, চন্দ্রক-ডাম্পারা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির মতো কিছু অল্প চেনা জায়গা সফরের তালিকায় রাখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
অসংখ্য হোটেল, হলিডে হোম, কিছু আশ্রম আছে পুরীতে থাকার জন্য। এখন ফ্ল্যাটও ভাড়া পাওয়া যায়। অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং করতে হয় সেগুলি।